Aparajita Adhya on women empowerment: মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া যে কতটা জরুরি, সেটা বহুবার আলোচিত। আর একমাসের মধ্যেই শারদোৎসব। পপুলার কালচারে দেবী দুর্গা হলেন নারীশক্তি ও নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। কিন্তু ভারতীয় মেয়েরা তাঁদের নিজেদের স্বাবলম্বী করার বিষয়ে কতটা সচেতন? এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্যের একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বেশ কিছু অভিজ্ঞতার কথা, যা তাঁর কাছে অনুপ্রেরণা।
''আমার মা পলিটিকাল সায়েন্সে এমএ। ইউনিভার্সিটির শেষ দিনে প্রফেসর ক্লাসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কে কী হতে চাও। সবাই বলেছিলেন শিক্ষিকা হব, মা বলেছিলেন আমি সংসার করব। যদিও পরবর্তী ক্ষেত্রে তাঁকে শিক্ষকতা করতে হয় আমার বাবার পাশে দাঁড়াতে, কিন্তু আমার কথা হল, সংসার করেও আত্মপরিচয় তৈরি করা যায়, যদি ইচ্ছে থাকে'', বলেন অপরাজিতা।
আরও পড়ুন: পর্দার অভিনেত্রীর সঙ্গে বাস্তবের অপরাজিতার মিল ও অমিল কতটা, দেখুন ভিডিও
দুই শিক্ষিকার সান্নিধ্যে কেটেছে তাঁর ছোটবেলা। দিদিমা ছিলেন তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। ওই স্কুলেই পরবর্তী সময়ে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন তাঁর মা। অভিনেত্রী জানালেন, আড়াই বছর বয়সে যখন তিনি খুব একটা হাঁটতে শেখেননি, তখন অতটুকু মেয়েকে নিয়েই স্কুলে যেতে হতো তাঁর মা-কে। ''কখনও আমি বাহাদুরের কোলে কোলে ঘুরতাম, কখনও মা আমাকে হয়তো পাশের ফাঁকা ক্লাসরুমে বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে ক্লাস করত। আমি বসে বসে কাঁদতাম কিন্তু মায়ের কিছু করার ছিল না। একটা সুবিধে ছিল আমি দুরন্ত ছিলাম না। খুব শান্ত, এক জায়গায় বসে থাকতাম। সবাই বলত আমি স্কুলের শোভা... কিন্তু মায়ের পক্ষে খুবই কঠিন ছিল সংসার, সন্তান ও কাজ তিনটে বিষয় সামলানো। দিনের পর দিন মা সেটা করেছেন। আর এই অনুপ্রেরণা কিন্তু মা পেয়েছিলেন আমার দিদিমার থেকে। আমার দাদু যখন দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন, দিদিমা দুই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। শিক্ষকতা করে দুই মেয়েকেই এমএ পড়িয়ে তবেই বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই এই দুজন মানুষকে ছোটবেলা থেকে দেখে বুঝেছি, মেয়েদের অসাধ্য কিছু নেই'', বলেন অভিনেত্রী।
বিয়ের পরে সংসারে থেকেও আত্মপরিচয় তৈরি করা ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রসঙ্গ যদি ওঠে, তবে অভিনেত্রী নিজেও একজন বড় উদাহরণ। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। তখন টেলিভিশনে অভিনয় জীবন শুরু হয়েছে ঠিকই কিন্তু জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছনোর গোটা প্রক্রিয়াটি ঘটেছে বিয়ের পরে, তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। পাশাপাশি ওই পরিবারেরও অনেক সদস্যের জীবন তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছেন তাঁর শাশুড়ি-মা নিজে, পিসশাশুড়ির জীবনসংগ্রামও তিনি দেখেছেন। অভিনেত্রী জানালেন, তাঁর শাশুড়ি-মা সারা জীবন খুবই দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছেন, আবার সংসার সামলেছেন। তাঁর দিদিশাশুড়িও স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের পরে একা হাতেই মানুষ করেছেন মেয়েদের, তাঁদের উচ্চশিক্ষিত করে তুলেছেন। শুনে নিতে পারেন তাঁর শাশুড়ি, মা ও দিদিমার কথা নীচের ভিডিও লিঙ্কে ক্লিক করে--
''আমার পিসশাশুড়ি খুব অল্প বয়সে বিধবা হন। তিনি ঠোঙা বিক্রি করে, মুড়ি ভেজে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। তাঁর ছেলেদের এখন বিরাট ব্যবসা। আমার বাপের বাড়ির পাড়াতেও আর একজনকে দেখেছি ওইভাবেই ছেলেদের পড়িয়েছেন। দুই ছেলের একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও আর একজন খুবই বড় পোস্টের সরকারি কর্মচারী। তাই আমার মনে হয়, যদি ফোকাস ঠিক থাকে আর টেনাসিটি থাকে, তবে মেয়েরা ঠিক পারে। সবাইকে চাকরি করতেই হবে, এমন কোনও কথা নেই কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়াটা খুব জরুরি। কিছু না, সব মেয়েরাই প্রায় হাতের কাজ শেখে, সেগুলো দিয়েও কিছু করতে পারে। যদি কারও অর্থ উপার্জনের প্রয়োজন নাও থাকে, নিজের মন ভালো রাখার জন্যেও একটা হবি থাকা দরকার'', অভিনেত্রী বলেন, ''আমি তো পার্টি করি না, খুব একটা বেড়াতেও যেতে পারি না কাজের চাপে, আমার নিজের রিফ্রেশমেন্ট হল গয়না বানানো, একটু ড্রেস ডিজাইন করা। আর আমার নাচের স্কুল রয়েছে। এগুলোই আমার মনের খোরাক। আমার কয়েকজন বান্ধবীও নানা রকম জিনিস বানান। আমরা একসঙ্গে ছোটখাটো এগজিবিশন করা শুরু করেছি।''
অভিনেত্রী মনে করেন কিছু করার ইচ্ছাটাই আসল। তার সঙ্গে প্রয়োজন লেগে থাকার ক্ষমতা ও ধৈর্য। এই দুটি যদি থাকে, তবে স্বাবলম্বী হওয়া অসাধ্য নয় মেয়েদের কাছে। ''যাঁরা বলেন আমার কিছুই হবে না বা কিছুই পারলাম না, তাঁদের আসলে জীবনে ফোকাস ঠিক নেই'', বলেন অপরাজিতা।