জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করার পাশাপাশি কি রিয়ালিটি শো হোস্ট করা খুব কষ্টের? নাকি সেই বিষয়ের প্রতি ভালবাসা থাকলেই রিয়ালিটি শো সঞ্চালনা করা যায়। টেলিভিশনের পর্দায় রান্নার শো বেশ জনপ্রিয়। এবং সেই শোয়ের সঞ্চালকরা দারুণ নাম করেছেন। তেমনই বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায় কিন্তু রাঁধুনী নামক শোটি বেশ দুর্দান্ত সঞ্চালনা করছেন।
একপাশে যখন কার কাছে কই মনের কথা ধারাবাহিকে বেশ গুরুত্বপূর্ন রোলে রয়েছেন তিনি। বহু ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। কিন্তু রান্নার প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মালো কেন?
রাঁধুনীর কি এমন তোমাকে আকর্ষণ করল যে না বলতে পারলে না?
প্রথমত, তো অন্য কোনও রান্নার শো থেকে আগে কেউ ডাকেনি ( হাসি )...আর রান্নার শো আগে কোনোদিন করিনি। আগে সঞ্চালনা করেছি, ১০-১১ বছর হয় নি করে ওঠা। কিন্তু, একটা বিষয় না বললেই না, সেটা হচ্ছে সিনেমা সিরিয়াল একসঙ্গে অভিনয় করা, প্রায় একই চরিত্র রোজ অভিনয় করা সেটা একসময় মোনোটনস হয়ে যেতে পারে। কিন্তু, এই যে রান্নার শো গুলি একদিকে যদি আমি ৬টা এপিসোড করি তারপরেও কিন্তু নতুন কিছু শিখছি। এটা আমার কাছে একটা ফ্রেশ এয়ারের মত। একইরকম কিছু না, বেশ অন্য ধরনের নানা কিছু।
বাড়িতে মায়েরা প্রতিদিন রান্না করেন, মনমত আমাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, তাও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাড়িতে রান্নাটা কোনও কাজ নয় অনেকের নজরে, কী বলবে?
আমরা জানো তো, যে যেই কাজ করি না কেন একটা ছুটি পাই। শনিবার বা রবিবার একটা ছুটি থাকে। আমরা বেড়াতে যাই। যারা রান্না করেন, সে আমাদের মা হোক বা যিনি রাঁধুনী - তাঁর কোনও ছুটি নেই কিন্তু। মায়ের কোনও ছুটি নেই। যারা হাউজ ওয়াইফ, তাদের কিন্তু আর কোনও জগৎ নেই। তাঁরা নিজেকে পুরোটাই সংসারে নিয়োজিত করেছেন। এই নিয়ে কী বলব? কিছুই বলার নেই।
নারী পুরুষের মধ্যে রান্নাঘরে ঢোকা বা প্রতিদিনের রান্না নিয়ে কোনও বিভেদ আছে কি আদৌ?
আমি মনে করি না যে মহিলা হলেই তাঁকে রান্না করতে হবে, আর পুরুষ মানেই তিনি রান্না করবেন না। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যেটা মহিলারা করেন সেটা পুরুষরা করেননা এটা ভুল কিন্তু। অনেক ছেলেরা কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকে। তাঁরা কিন্তু শিখে নেয়। তাই, সব পুরুষের একটু বোঝা উচিত। শুধু পুরুষরা বাজার করবে আর মহিলারা রান্না করবেন, এটা ভুল। তারপর, বাইরে থেকে কাজ করে এসে বাড়িতে ফোঁড়ন দেবেন এগুলো খুব খারাপ। এটা মাথায় রাখতে হয়, তারা অনেক কষ্ট করে রান্না করেন। এমনকি কেউ কেউ তো শুনেছি জল গড়িয়ে খান না। তাই যে মানুষটা জল গড়িয়ে দিচ্ছে, তাঁর প্রতি এবং তাঁর কাজের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত।
তোমার ছোটবেলার মায়ের হাতে কোনও পছন্দের খাবার?
বাড়ির খাবার আমার খুব ভাল লাগে। মা করেন সাদা সাদা ভাজা ভাজা আলু পোস্ত। আগে ঠাকুমা বানাতেন, এখন মা বানান। আমি পারি, কিন্তু ওই যে কিছু খাবার মা বানালেই ভাল হয়। চিকেন স্টু ভাল লাগে। আমার মেয়ের খুব পছন্দ ওটা। পৌষ পার্বণে বেশ কয়েকটা পিঠে আছে মা ভালবাসে। কালোজিরে সাদা আলুর চচ্চড়ি আমার খুব ভাল লাগে।
তোমার মেয়ের কী পছন্দ?
আমি রান্না করতে ভালবাসি। কিন্তু ও তো এখন দৌড়ায়, এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়। ওকে ধরে না রান্না করা খুব সমস্যা। কেউ যদি ওকে একটু দেখে তাহলে আমি পারি। চেষ্টা করি ওর যেটা ভাল লাগছে সেটা করতে। নাহলে, আমার মা আর একজন দিদি আছে সে করে দেয়। বায়না আছে ওর। তবে, এখন একটু মাছের ঝোল বা চিকেন স্টু খায়। একদম ঘরোয়া খাবার খায়। আমি শিখে রাখছি, কিন্তু জানি না... আর ভাল লাগলে ঘাড় নেড়ে ভাল ভাল বলে।
রান্না কি স্ট্রেস রিলিজ?
আমার মনে হয়, যারা রান্না করতে ভালবাসে তাঁদের জন্য অবশ্যই। সবাই তো ভালবাসে না। যখন আমার মেয়ে ভীষণ দুষ্টুমি করে, ওকে সামলানো যায় না। তখন আমার মনে হয়, বাচ্চা সামলানোর থেকে দশ পদ রান্না করা ভাল। যারা খাওয়াতে ভালবাসে, তাদের জন্য সত্যিই তাই। আর এই বিষয়টা একটা আর্ট। একেকটা রান্না অনেকে ভিন্নভাবে করে।
রান্নার সঙ্গে অভিনয়ের মিল আছে কোনও?
একটা জিনিষ না বললেই নয়। সেটা হল এই যে একই রান্না ভিন্ন ভাবে, এটা কিন্তু অভিনয়ের ক্ষেত্রে হয়। যেমন, একই চরিত্র একেকজন অভিনেতা ভিন্নভাবে প্রেজেন্ট করে। তারপর ধরো, একটা খাবার সেটাকে প্লেটিং একেকজন একেকরকম করে। সেটা অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তাই। আমার খুব ভাল লাগে সুন্দর প্লেট সাজিয়ে দেব। যাতে একটা সাধারণ খাবার অসাধারণ হয়ে যাবে।