scorecardresearch

‘সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে একটা শিশুর সারল্য ছিল’

এমন গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্ব যে লোকে সচরাচর সমীহ করে চলতেন। তবে ওঁকে চিনলে বোঝা যেত যে সমীহ করলেও ওঁর স্নেহময়, সরল দিকটা দেখা যায়।

satyajit ray 100 years
আগন্তুক (১৯৯১) ছবির একটি দৃশ্যে মমতা শঙ্কর এবং উৎপল দত্ত। ছবি: এক্সপ্রেস আর্কাইভ

আমার বাবা উদয়শঙ্কর এবং মাণিককাকু (সত্যজিৎ রায়কে এ নামেই ডাকতাম), একে অপরকে বহুবছর চিনতেন। সে সময়কার সব শিল্পীর মতোই আমিও চাইতাম সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয় করতে, ছোট রোলেই সই। কিন্তু কোনোদিনই মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করতে পারি নি। একদিন আমার স্বামী চন্দ্রোদয় ঘোষ কোথাও পড়লেন যে পাঁচ বছর পর নতুন ছবি করছেন সত্যজিৎ রায়। আমি কিছু বোঝার আগেই উনি সোজা মাণিককাকুকে ফোন করে ফেলেন।

মাণিককাকু নিজেই ফোন ধরতেন সবসময়। অতি পরিচিত কণ্ঠে “হ্যালো” শুনে আমার কোনও কথা ফুটছিল না। কোনোরকমে জিজ্ঞেস করলাম, ওঁর নতুন ছবিতে কাজ পেতে পারি কিনা। উত্তরে তিনি যখন বললেন যে আমার কথাই ভেবেছিলেন, আমার তো চোখকান খাড়া। বললেন, “কিছুদিন সময় দাও, আমি জানাব তোমায়।”

আরও পড়ুন: আমি বলেছিলাম, গুপী গাইনের চরিত্রে আমাকে নিন…’

উনি তখন দুটি ছবির কথা ভাবছেন, কোনটাতে আগে হাত দেবেন সে সম্পর্কে অনিশ্চিত। ভাগ্যক্রমে, দুটি ছবিতেই কাজ পাই আমি – গণশত্রু (১৯৯০) এবং শাখা-প্রশাখা (১৯৯০)। শাখা-প্রশাখার একটি দৃশ্যে ছিল, প্রতাপের ভূমিকায় রঞ্জিত মল্লিক আমাকে বলছেন যে তিনি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও আমরা বন্ধু হতেই পারি। উত্তরে আমি বলেছিলাম, “থ্রি ইজ আ ক্রাউড, প্রতাপ”। মাণিককাকু আমাকে বললেন, সাধারণ দর্শক নাও বুঝতে পারেন এই কথা ক’টার অর্থ, সুতরাং আমি যেন কোনও বিকল্প ভাবি। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা সবসময়ই ধরে নিতাম যে শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণীর দর্শকই সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখেন। অথচ উনি নিজে সর্বসাধারণের কথা ভাবছেন। জিজ্ঞেস করলাম, “তবে কি ‘ওসব কথা ছাড়ো, প্রতাপ’ বলব?” তাতে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন উনি।

satyajit ray 100 years
জীবনের শেষ পর্বে শুটিংয়ে ব্যস্ত সত্যজিৎ। ছবি: এক্সপ্রেস আর্কাইভ

তবে আরও অবাক হয়েছিলাম যখন আগন্তুক (১৯৯১) ছবিতে আমাকে নিলেন উনি। আমাকে বলেছিলেন যে অনিলার ভূমিকায় আমাকে ছাড়া নাকি কাউকে ভাবতেই পারেন নি। সেটা আমার কাছে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারের সমতুল্য। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছিলাম, ওঁর মধ্যে একটি শিশু লুকিয়ে রয়েছে। এমন গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্ব যে লোকে সচরাচর সমীহ করে চলতেন। তবে ওঁকে চিনলে বোঝা যেত যে সমীহ করলেও ওঁর স্নেহময়, সরল দিকটা দেখা যায়।

আমাকে যিনি প্রথম সিনেমার জগতে নিয়ে আসেন (মৃগয়া, ১৯৭৬), সেই মৃণাল সেনকে আগন্তুকের একটি প্রাইভেট স্ক্রিনিং-এর জন্য ডাকেন মাণিককাকু। আমার অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন মৃণালদা। আমি বলার চেষ্টা করি যে পুরোটাই মাণিককাকুর জন্য। কিন্তু মাণিককাকু কিছুতেই মানেন নি। পুরো কৃতিত্বটাই আমাকে দিয়েছিলেন। সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখকর স্মৃতির একটা।

অনুলিখন: অলকা সাহানি  

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Entertainment news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Actress mamata shankar remembers satyajit ray