"সেল… সেল… তারকাদের বিক্রি আছে, কিন্তু শিল্পীদের নয়!", ফের বিস্ফোরক শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)। বরাবরই তিনি স্পষ্টবক্তা। সোজা কথা সোজাসুজি বলতেই ভালবাসেন। এবারও সেই পন্থা অবলম্বন করলেন। সম্প্রতি টলিউড ইন্ডাস্ট্রির তারকারা যেভাবে নিত্যদিন কেউ শিবির বদলাচ্ছেন, 'এ ফুল, ও ফুল' করছেন, আবার কেউ বা রাজনীতির ময়দানে 'শিক্ষানবীশ' হিসেবে অভিষেক ঘটাচ্ছেন, এবার সেই প্রেক্ষিতেই মুখ খুলেছেন টলিউড অভিনেত্রী। এভাবে 'মুড়ি-মুড়কি'র মতো তারকাদের রাজনীতির ময়দানে পদার্পণ করাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না তিনি। অতঃপর স্বভাবসিদ্ধগতভাবেই বিঁধলেন 'ওঁদের', যাঁরা কিনা গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির অংশ হয়েও রাজনীতির ময়দানে শিল্পীসত্ত্বা বিসর্জন দিয়ে একে-অপরের দিকে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে মত্ত হয়েছেন। যেখানে তাঁদের কাছে ব্যক্তিগত মানুষ, শিল্পীসত্ত্বার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক রং।
শ্রীলেখা মিত্র মনে-প্রাণে বামপন্থী। তা ঘাসফুল কিংবা পদ্ম শিবিরের 'তারকা-খচিত একুশের নির্বাচনী রণ-নীতির' মতো বাম শিবিরের প্রস্তাব নায়িকার কাছে এলে কি তিনি গ্রহণ করবেন? উত্তরে শ্রীলেখার সাফ কথা, "বাম শিবিরের (CPM) পক্ষ থেকে সেরকমভাবে কোনও প্রস্তাব এলে, আমি যদি 'কনভিনসড' হই, তাহলে ভেবে দেখব। কিন্তু আপাতত কোনও ইচ্ছে নেই। কারণ, আমি রাজনীতি করলেও নিজেকে পুরোটাই উজার করে দেব সেখানে। সেক্ষেত্রে আমার নতুন অধ্যায় (পরিচালনায়) ব্যঘাত ঘটতে পারে। সিনেমাটা আমি বুঝি, রাজনীতিটা আমি বুঝি না! রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় না থেকেও যেভাবে মানুষের পাশে থাকা যায়, আমি থাকি।"
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বাংলায় কি আবার বাম-আমল দরকার? "ভীষণভাবে দরকার। শিক্ষা-সংস্কৃতি, বুদ্ধি যে কোনও ময়দানেই বামপন্থী মনোভাবাপন্নরা এঁদের থেকে অনেক গুণ এগিয়ে। অনেক উদারনৈতিক। কারণ রাজনৈতিক মঞ্চে এখন যেসব গান-ভাষাপ্রয়োগ হয়, কিংবা যে শব্দ প্রয়োগে ঝগড়া হয়, আমার তো মনে পড়ে না বাম জমানায় এরকম কিছু হয়েছে বলে", মত শ্রীলেখার।
মঙ্গলবারই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prosenjit Chatterjee) বাড়িতে বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের আসা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন শ্রীলেখা। কোনওরকম রেয়াত না করে সেই ছবি শেয়ার করেই বলেছিলেন, "আমার নিন্দুকেরা যাঁরা আমাকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা আশা করি খানিকটা উত্তর পেলেন!" সেই সঙ্গে তিনি জুড়েছেন #সবইমায়া হ্যাশট্যাগ। কারও আর বুঝতে বাকি নেই যে, তিনি 'ইন্ডাস্ট্রির ফার্স্টম্যান' বুম্বাদাকে বিঁধেই একথা লিখেছেন। কারণ, প্রসেনজিতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতার বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ করাকালীনই। সেই প্রেক্ষিতেই নায়ককে উদ্দেশ্য করে শ্রীলেখার মন্তব্য, "এবার ধীরে ধীরে বাংলার মানুষদের কাছে সুপারস্টারদের আসল রূপটা বেরিয়ে আসবে।"
প্রসঙ্গত, অভিনেতারা এখন নেতাও বটে! রাজনীতি এবং গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রি এখন মিলেমিশে একাকার। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পদ্ম কিংবা ঘাসফুল শিবির, কেউই কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ! অতঃপর দুই দলের তরফেই নির্বাচনী প্রচারে 'স্টার-স্ট্র্যাটেজি' তুঙ্গে! তারকাদের দলবদল কিংবা রাজনীতিতে পদার্পণের খবরে এখন আর হতবাক হন না আম-আদমিরা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে বিনোদুনিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক ময়দানের এরকম একটা ‘মাখো-মাখো’ সমীকরণ হতে চলেছে, তা আগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের খাতিরে এখন ইন্ডাস্ট্রির অনেক বন্ধুত্বের সম্পর্কই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। একে-অপরের থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন তাঁরা। দোষারোপ। আর কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি সর্বত্র। আর বামপন্থী শ্রীলেখা সেসব 'দলবদলু' কিংবা তারকাদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার 'আদিখ্যেতা'কেই বিঁধেছেন তাঁর পোস্টে।