সময় নাকি সবকিছুই সয়ে দেয়। কিন্তু বাবা মাকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা বোধহয় সেই সন্তান জানে, যে সেই সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। অভিনেত্রী সুদীপ্তা বন্দোপাধ্যায় ঠিক যেন তাই। গত বছর এদিনেই বাবাকে হারিয়েছিলেন। আর আজ তাঁকে নিয়েই কলম ধরলেন।
মাকে একাই সামলেছেন একটা বছর। জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে একদিনে। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই বাবার মৃত্যুর খবর শুনেছিলেন তিনি। কিন্তু, একটা বছরে অনেককিছু পাল্টে গিয়েছে। সুদীপ্তা বাবার সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করলেন। যেখানে তিনি নানা কিছু বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন। হাত কাঁপছে তাঁর। বাবা তাঁদের রেখে পুরোপুরি চোখে গিয়েছিলেন যে...
তিনি লিখছেন, "তোমাকে নিয়ে আজ আবার লিখতে বসেছি….তোমাকে নিয়ে কিছু বলতে বা লিখতে বসলে আামার হাত কাঁপে…বাবা…আজ ঠিক একটা বছর আগে এই দিনে তোমার চলে যাওয়া….পুরোপুরি ভাবে… আমাদের রেখে…বাবা…কেমন আছো তুমি…? যেখানে এখন থাকো জায়গাটা কেমন…ওখানে কি খুব ঠান্ডা পরে…বৃষ্টি পরে কি খুব…এক নাগারে অবিরাম …রোদ ওঠে..নাকি স্যাঁতসেঁতে…? ঝড় ওঠে ওদিকে..নাকি কেবল ঠান্ডা হাওয়া…কিভাবে কাটছে তোমার সময়গুলো…এখনতো তোমার কোনো তাড়া নেই॥ এই নাকি তোমার একা থাকতে ভালো লাগেনা..বেশতো আছো…কিন্তু মাযে ভালো নেই..তোমায় ছাড়া খেতে বসতে একা রোজ চোখের জল ফেলে..! তোমায় ছাড়া মা আজ বড্ড অসহায়..”
আর তাঁর মা? যার সঙ্গে দীর্ঘ ৪০ বছর কাটিয়েছিলেন অভিনেত্রীর বাবা। সেই মানুষটা এখন কেমন আছেন? এতবছর যার সঙ্গে পথ চলেছেন। তাঁর পুজো পার্বণ সবকিছুই এখন খুব বেরঙ্গিন। অভিনেত্রী আরও লিখলেন.. “দীর্ঘ চলিস বছরের একে অন্যর পাশে থাকার অলিখিত আশ্বাস …!এক নিমেষে সব থমকে দিয়েছে..তোমার চলে যাওয়ার দিনটা সেই শুক্রবার …তোমার আসার এবং যাওয়ার দিন… না..অনেক ভেবে দেখলাম…তোমার কথাই মিলে গেলো…তুমি চলে যাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারলাম….পৃথিবীর সবথেকে বড় সত্য, জন্ম এবং মৃত্যু …! বাবা…আমাদের ছেড়ে তুমি কেমন আছো…বলছিলাম এবারের পুজো তো চলে গেলো… তোমাকে ছাড়া …তুমিতো ঠাকুর দেখতে খুব ভালোবাসতে..আর অষ্টমীর অনজলী দিতে যেতে আমার সাথে ….! এবারে মা আর লাল পেরে শাড়ি টা পরেনি…সিঁথিতে সিঁদুর আর মায়ের পছন্দের লাল বড় টিপ..!! আমাদের মা বড্ড বেশিই সাধারন…বাহ্যিক কোনো জ্ঞানই তার নেই…শুধু সংসারটাই …ওটাই তার পৃথিবী…! কিন্তু এই পৃথিবীতে তোমার সময়টা ওইটুকুই…যদিও আমাদের সবার সময়টা নির্দিষ্ট !!”
আর নিজেরা? নিজেরা কেমন আছেন? তাঁর দাদা এবং তিনি ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়েছেন। পরিশ্রম এবং হাজারো অধ্যাবসায় তাঁদেরকে আজ পরিচিতি দিয়েছে। নিজেদের কাজ এবং সংসার নিয়ে অভিনেত্রী লিখছেন.. “এবার আসি আমাদের কথায়…। দাদার কাজকর্ম আর সংসার আমারও তাই…! চলছে…!! তোমার সঙ্গে তো দেখা হোক…অনেক কথা বাকি রয়ে গেছে..॥ আসলে তুমি ছিলে না…তুমি আছো মোর হদয় জুড়ে..ঠিক করেছি তোমার ব্যবহারের সবকিছু নতুন আলমারী টায় রাখবো..বাড়ি টার কাজ শুরু হবে…! ঠিক যেমনটা তুমি চেয়েছিলে…! মাকে আমরা তো আগলে রেখেছি কিন্তু তোমার মতন করে পারছিনা বোধয়…আমরা চেষ্টা করছি….মায়ের আবার একটা ছোট অপারেশান হলো…তুমি চিন্তা করোনা…আমরা সামলে নেবো…”
উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে স্মিতা বক্সির ছেলে সৌম্য বক্সির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এমনকি, সেই বিয়ে নিয়ে চর্চা ছিল সাংঘাতিক। তারপরই, নিজের বাবাকে হারান অভিনেত্রী।