সোমবার সন্ধেবেলা সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ বিজেপির এক তারকা সদস্য রূপা ভট্টাচার্য এবং সদ্য বিজেপি-ত্যাগী অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাদবপুরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। সোশাল মিডিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল হতেই পরোক্ষে আপত্তি জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেন অভিনেতা রাহুল। একইভাবে সোচ্চার হয়েছিলেন শ্রীলেখা মিত্র । একুশের বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই যে কোনও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে তিনি বেজায় সরব। বিরোধীপক্ষ সবুজ-গেরুয়া কোনও শিবিরকেই ছেড়ে কথা বলেন না অভিনেত্রী। আদ্যোপান্ত বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী সেই অভিনেত্রীই কিনা এবার সিপিএম ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিলেন। এবার সেই বিতর্কে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে মুখ খুললেন অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য। তিনি ঠিক যা বললেন:
‘বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হতে না পেরে অনেকে বসে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি টিকিটের জন্য রাজনীতি করতে যায়নি। তাই ভোটের সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্যানেলে বসে বিজেপির হয়েই প্রচার করেছি। তাদের অ্যাজেন্ডাকে প্রমোট করছি। এবং সেটা প্রকাশ্যেই। এর মধ্যে কোনও লুকোচুরি নেই।‘
রাহুলের সেই পোস্ট:
রূপা জানান, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সিবিআই এই রাজ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তৃণমূলের কয়েকজন নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে। যদিও সিবিআই এবং বিজেপি, দু’টি পৃথক প্রতিষ্ঠান। এমনটাই দলীয় তরফে মুখপাত্র শমীকবাবু জানিয়েছিলেন। আর সেই সময় করোনা মারাত্মক আকার নিয়েছিল। আমি নিজেও আতঙ্কিত ছিলাম। কারণ খুব কাছের দু’জনকে সেই সময় করোনায় হারাতে হয়েছিল। তাই এই আবহে সিবিআইয়ের তৎপরতা কতটা প্রাসঙ্গিক এই একটা প্রশ্ন আমি তুলেছিলাম। সেই সময় দলের এক সাধারণ সম্পাদক প্রথম শ্রেণির সংবাদ মাধ্যমে বসে বলেছিলেন, তিনি তারকাদের চেনেন না। দলে তাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। থাকল কি, না থাকল খুব একটা প্রভাব পড়ে না।
এই বক্তব্য শোনার পর আমার মনে হয়েছিল, একটা রেজিমেন্টেড পার্টির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক, এই মন্তব্য করছেন মানে এটা দলের গৃহীত সিদ্ধান্ত। তিনি মুখপাত্র হিসেবে একথা বলছেন। তারপরেও আমি অপেক্ষা করি। দলের কিছু নেতাকে জানাই। কিন্তু ৪ মাস পরেও কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। তাই ধরে নিলাম, দল এটা আমাদের সম্বন্ধে ভাবেন। তাহলে সে দল আমার দল, এই প্রচার করার কোনও জায়গা নেই।
শ্রীলেখার সেই পোস্ট:
একটা প্রসঙ্গ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে আমি ‘স্বঘোষিত’ সিপিএম কর্মী। এই বিষয়ে রূপা বলেন, ‘সেটা একেবারেই নয়। আমি স্বঘোষিত, অঘোষিত কিছুই নই। কিংবা একদিন ঘুম থেকে উঠে মনে করলাম আমি সিপিএম কর্মী। এটা হয় না। প্রত্যেক পার্টির কিছু প্রোটোকল আছে, সিপিএম-এর সেটা বেশি আছে। দুম করে ঘুম থেকে উঠে সিপিএম হওয়া যায় না বা সিপিএম কর্মী হওয়া যায় না।‘
তাঁর মন্তব্য, ‘যেহেতু আমি একজন অভিনেত্রী, আমার একটা ব্যক্তিসত্বা আছে। আমার কাজ অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করা। সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা, সেটা প্রাথমিক ভাবে আমার মানুষের প্রতি আছে। কাল আমি যে মঞ্চে গিয়েছিলাম, তাদের কাজ সামাজিক। একটা কম্যুইনিটি কিচেন ৫০০ দিন ধরে মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে। সেই কাজকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া যায়? শ্রমজীবী ক্যান্টিন যদি সিপিএম-এর হয়। তাহলে আমি তাকে স্যালুট করি। কারণ দলটা বিধানসভা ভোটে শূন্য হয়েও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সেই দলের সাহসকে আমি সব দলের ঊর্ধ্বে গিয়ে স্যালুট করি। সে যে রাজনৈতিক দল হোক, যদি এভাবে কাজ করে তাকেও কুর্নিশ করব।‘
আমি বিশ্বাস করি শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালানোর পদ্ধতিটা মানুষের জন্য কাজ করার পদ্ধতি। আমি এর সঙ্গে নিজেকে জুড়তে পারি। এমনকি, কোভিডের সময় আমার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে রেড ভলান্টিয়ার। তাঁরা বিচার করেনি আমি কোন দল থেকে আসছি, আমিও বিচার করিনি। এভাবেও বিতর্কে জল ঢালতে সরব হয়েছেন রূপা।
শতরূপের ফেসবুক পোস্টের পর যে দুই জন সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। সেই রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্রীলেখা মিত্র প্রসঙ্গে রূপার মন্তব্য, রাহুল এবং শ্রীলেখা দি অনেক বড় অভিনেতা-অভিনেত্রী। আমার সহকর্মী। এই দু’জনের প্রতি আমার খুব শ্রদ্ধা। তাছাড়া এরা অনেক দিন ধরেই বামপন্থীদের সঙ্গে কাজ করছেন, সেখানে তাঁদের সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক। তাঁরা সেই দলে থাকবেন কি না, রাগ, দুঃখ অভিমান, পুরোটাই ওদের ব্যাপার। এখানে আমি বহিরাগত। আমি রায় দিতে পারব না। এই গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের নিজের মতামত জানানোর ১০০% স্বাধীনতা আছে। সেটাকে আমি সম্মান করি। আমি আমার কোনও বক্তব্যে শ্রীলেখা দিকে অপমান করে কোনও কথা বলিনি। তাই বিজেপির অন্য কেউ কী বলেছে, তার কৈফিয়ত আমি দেব না। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিজেপির টিকিট না পেয়ে দলে দলে সিপিএম চলে গিয়েছি। এটা ঠিক নয়। আমাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। সসম্মানে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আমরা শ্রমজীবী ক্যান্টিনের অনুষ্ঠানের গিয়েছিলাম।‘
তাঁর পাল্টা যুক্তি, ‘যদি টিকিট না পেয়েই হয়, তাহলে ৭৭ বিধায়কসংখ্যা দল ছেড়ে ২১৩ আসনের দলে কেন গেলাম না। অঙ্ক করতে গেলে তো এই যুক্তি আসবে। কেন্দ্রে একটা দল, রাজ্যে একটা দল। তাঁদের আখের গোছানর সুবিধা বেশি, কিন্তু যারা অঙ্কের নিরিখে বিধানসভায় শূন্য, তাঁদের মধ্যে ধান্দাবাজি থাকে না। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আমি পার্টিটা সমর্থন করি। সেটা বলতে সাহস লাগে।‘
জানা গিয়েছে, রূপা-অনিন্দ্যের সঙ্গে শতরূপের উপস্থিতির উপলক্ষ্য ছিল যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনের ৫০০ দিন উপলক্ষে মিছিলে পা মেলান। সেই ছবিতে প্রযোজক রানা সরকার খানিক রসিকতা করেই প্রশ্নবাণ ছুঁড়েছেন, ‘এ কী রূপা ভট্টাচার্যও সিপিএম হয়ে গেল নাকি?’ তাতে শতরূপের সরস উত্তর, ‘হ্যাঁ। এবার তুমিও হয়ে যাও। তাতেই বেড়েছে আরও বিতর্ক।‘
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন