বাঙালি এবং আড্ডা- শব্দ দুটো একে অপরকে ছাড়া পরিপূর্ণ হয় বলে তো মনে হয়না। চায়ের কাপে, পাড়ার রকে, শীতের বিকেলে বাঙালি সুযোগ খোঁজে আড্ডার। কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে এই আড্ডা কি হারিয়ে যাচ্ছে, টুকরো স্মৃতি কি কলকাতা ছাড়ছে কাজের সন্ধানে। এ সবকিছুই এবার সেলুলয়েডে নিয়ে আসছেন পরিচালক দেবায়ুশ চৌধুরী। তাঁর ছবি নিয়েই আড্ডা জমল সিনেমার মুখ্য অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর সঙ্গে।
এখনও আড্ডা দেন...
আমি সবরকম আড্ডা দিই। ছোটবেলা থেকে বড়ই হয়েছি আড্ডার মধ্যে। বাবা ভীষণ আড্ডা প্রিয় থিলেন, বাড়িতে সর্বক্ষণ নাটকের লোক আসছে। থিয়েটার মানেই তো আড্ডা। মহড়ায কিছু মানুষের দেখা হয়, আলোচনা হয়। এখন সেইগুলো আর নেই, আ্ড্ডা হয়না আর।
মানুষের কাছে সময় নেই...
সময় কম তো বটেই, রক ওয়ালা বাড়ি আর নেই। উত্তর কলকাতায় কিছু আছে সেখানে বোধহয় এখনও আড্ডা ডমে, দক্ষিণ কলকাতায় তুলনায় কম। ভবানীপুর, ঢাকুরিয়ায় অনেক বয়স্ক লোকেরা চেয়ার নিয়ে গোল করে বসে। সুন্দর লাগে আমার। পাড়ার সবকিছু তাদের নখদর্পনে। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে এটা জানার জায়গা। আগে চায়ের দোকানে আড্ডা হত, এখন সিসিডিতে হয়।
'আড্ডা' ছবির দৃশ্যে কলাকুশলীরা।
আরও পড়ুন, ছিছোরে রিভিউ: নস্ট্যালজিয়া ব্যতীত আর কোন প্রাপ্তি নেই
ছবিতে আপনার একটা সংলাপ আছে, কলকাতা নতুন-পুরনোর মিশেল। আপনি শহরটাকে কতটা বদলাতে দেখলেন?
অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আগের কলকাতার সঙ্গে কোনও মিলই নেই। আগেকারদিনে প্রতিদিন রাস্তা ধোয়া হত কর্পোরেশন থেকে, এখন তো সেসব বন্ধ। রাস্তায় জল জমলে সেই জল দিয়ে হেঁটে বাড়িতে ফিরে স্নান করতে হয়, এতটাই নোংরা। আগে রাস্তায় জল জমলে সাঁতার কাটতাম। নস্ট্যালজিয়ায় ভাসলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী।
বলুন...
আমাদের বাড়ি ছিল পণ্ডিতিয়া রোড, মহানির্বাণ রোডের ক্রসিংয়ে। সেখানে রাস্তায় প্রায় তিনফুট জল জমেছে। আর তার তলা দিয়ে রাস্তা দেখা যাচ্ছে। এতটাই পরিস্কার জল ছিল। এখন তো আমরা চেষ্টা করি নোংরা করতে।
ছবির দৃশ্যে সব্যসাচী চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন, ‘ঠোঙা বিক্রি করেও মাথা উঁচু করে বাঁচা যায়’
ছবির কথায় আপনিও কি বিশ্বাস করেন, যে এই প্রজন্ম বিপ্লব করতে ভুলে গিয়েছে?
বিপ্লব মানেই ট্রাম-বাস পোড়ানো নয়। পরিবর্তন এখনও হচ্ছে কিন্তু বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছেনা।যেমন আমাদের দেশ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ লিখছে না। কারণ লিখলে সংবাদপত্রকে নিষিদ্ধ করবে কিংবা বিজ্ঞাপন দেবেনা। মিডিয়া চুপ আর সাধারণ মানুষের কিছু করার থাকছেনা। কাশ্মীর ইস্যু তৈরি করে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়াটাই লক্ষ্য ছিল।