রাজনীতির ময়দানে পা রাখার পর থেকেই সিনেমার বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেব বেজায় সচেতন হয়ে উঠেছেন। এমনকী, সিনেমার চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তারকা সাংসদ টলিপাড়ার অন্য নায়কদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন দর্শকদের বিচারে। কখনও তিক্ত সম্পর্কের 'টনিক' নিয়ে আবার কখনও বা সামাজিক বার্তাপ্রেরক গল্পে আবার কোনও সিনেমায় ঐতিহাসিক চরিত্রে দেশপ্রেমকে উসকে দিয়েছেন দেব। বারবার তার সিনেমায় ঘুরেফিরে দেশপ্রেমের গাঁথা। দেব (Dev) যেন ক্রমশই বাংলা সিনে-ইন্ডাস্ট্রির মনোজ কুমার হয়ে উঠছেন।
'গোলন্দাজ'-এ নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে দেবকে। যে বাঙালি ব্রিটিশদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ফুটবল পায়ে বাজিমাত করে দেশের মান বাঁচিয়েছিলেন। নগেন্দ্রপ্রসাদের ভূমিকায় দেবের অভিনয় নিঃসন্দেহে আমজনতার মধ্যেকার দেশপ্রেম উসকে দিয়েছে। ঠিক যেমনটা আমির খানের 'লগান' দেখার পর দর্শকদের উন্মাদনা প্রকাশ করেছিলেন।
'গোলন্দাজ' পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনাতেই এরপর আরেক ব্রিটিশ-বিরোধী আরেক বাঙালি কিংবদন্তীর ভূমিকায় নয়া সিনেমার ঘোষণা করেন দেব- 'রঘু ডাকাত'। যাঁর হুঙ্কারে বাংলার খড়্গহস্ত ডাকাত সম্প্রদায়ের সাহসিকতার সামনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ইংরেজদের বন্দুকের নল। এই ছবির মাধ্যমেই বাঙালির বুক চিতিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাহিনি আবারও বড়পর্দায় তুলে ধরবেন দেব। নীল বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বাংলার ডাকাত সম্প্রদায় যে অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছিলেন, কম্পন ধরিয়েছিলেন গোড়া সৈন্যদের বুকে, সেই অজানা কাহিনিই দেখা যাবে ‘রঘু ডাকাত’ ছবিতে।
এবার স্বাধীনতার পচাত্তর পেরনোর উদযাপনের দিন বাংলার আরেক 'হিরো' যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের দুঃসাহসিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে নতুন ছবির ঘোষণা করে ফেললেন দেব। নাম- 'বাঘাযতীন'। পরিচালনা করছেন অরুণ রায়। যিনি ইতিমধ্যেই 'হীরালাল', '৮/১২'-র মতো সিনেমা পরিচালনা করে ফেলেছেন। পাঠ্যবই, টেলিপর্দার পর এবার দেবের হাত ধরে বড়পর্দায় আসতে চলেছে বাংলার বীর সন্তান 'বাঘাযতীন'-এর গল্প। এই প্রজেক্ট যে দেবের ফিল্মি কেরিয়ারের অন্যতম মাইল ফলক হতে চলেছে, পয়লা ঝলকেই তা আন্দাজ করা গেল।
এবার প্রশ্ন, মনোজ কুমার কেন? বলিউডের একসময়কার হিট অভিনেতা, পরিচালক তথা প্রযোজক, যিনি কিনা একের পর এক ছবি উপহার দিয়ে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন আমজনতার মধ্যে। আর ঠিক সেই কারণেই অবিভক্ত ভারতের খাইবার পাখতুনখোয়ার (অধুনা পাকিস্তান) ভূমিপুত্র মনোজ কুমারকে 'ভারত কুমার' বলেও ডাকা হত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী 'শহীদ' দেখে তাঁকে অনুরোধ করেন 'জয় জওয়ান জয় কিশান' স্লোগানের প্রেক্ষাপটে ছবি তৈরি করার জন্য। ১৯৬৫ সালে তখন ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের আবহ। দেশে খাদ্যসঙ্কটও দেখা দিয়েছিল। জওয়ান ও কৃষকদের উৎসাহ জোগাতে শাস্ত্রীর অনুরোধে মনোজ কুমার বানিয়ে ফেললেন 'উপকার'। এখানেই অবশ্য শেষ নয় ভারত কুমারের 'কামাল'!
ইন্দিরা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় মনোজ কুমারের 'রোটি কাপড়া অউর মাকান'। এছাড়া 'ক্রান্তি', 'পূরব অউর পশ্চিম'-এর মতো মনোজ অভিনীত একাধিক সিনেমার গল্পেও দেশপ্রেমের বীজ বুনে দেওয়া হয়। শোনা যায়, বলিউডে আজও দেশাত্মবোধক সিনেমা তৈরি হলে, মনোজ কুমারের কয়েক দশক আগের সিনেমাগুলোই রেফারেন্স হিসেবে অভিনেতাদের অনুসরণ করার কড়া নির্দেশ যায় পরিচালক-প্রযোজকদের তরফে। প্রসঙ্গত, বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে দেব যেভাবে একের পর এক দেশাত্মবোধক সিনেমা করে চলেছেন, তাতে তিনিও যে মনোজ কুমারের পথ-অনুসরণ করে চলেছেন, তা বলাই বাহুল্য।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন