ভোটের আগে প্রতিনিয়তই রাজনীতির ময়দানে নাম লেখাচ্ছেন টলিউড ইন্ডাস্ট্রির তারকারা। নিত্যদিন কেউ শিবির বদলাচ্ছেন, ‘এ ফুল, ও ফুল’ করছেন, আবার কেউ বা রাজনীতির ময়দানে ‘শিক্ষানবীশ’ হিসেবে অভিষেক ঘটাচ্ছেন। নেটদুনিয়াতেও একে অপরকে খোঁচা দিতে পিছপা হচ্ছেন না। আর তার মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে বিদ্রুপ-ঠাট্টা শুরু হয়েছে তারকাদের নিয়ে। তবে ট্রোলিংয়ের মাত্রাটা অভিনেতাদের থেকে অভিনেত্রীদের নিয়েই বেশি। সক্রিয়ভাবে রাজনীতির ময়দানে পা রাখা সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh) থেকে শুরু করে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee), পায়েল সরকার (Paayel Sarkar), সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sayantika Banerjee) কেউ-ই বাদ যাচ্ছেন না! নেটিজেনদের একাংশের কথায়, রাজনীতির অ-আ-ক-খ না জেনেই তাঁরা নেমে পড়েছেন ময়দানে। কাজ পাচ্ছেনা না বলেই কি এমন পদক্ষেপ? এমন কটাক্ষও শুনতে হচ্ছে তাঁদের। ব্যক্তিগত জীবন, চরিত্রহনন, বডি শেমিং- কী চলছে না? নারী হয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পায়ের তলার মাটি শক্ত করার জন্যই কি প্রতিনিয়ত নায়িকাদের উদ্দেশে উড়ে আসছে এমন কদর্য আক্রমণ? প্রশ্ন তো উঠছেই।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানের রাজনীতিতে পা রাখা নিয়েও কম ট্রোল করা হয়নি। বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের ফিতে কাটা ছাড়া এদের দেখা পাওয়া যাবে না! তবে বিপুল ভোটে জিতে সাংসদ হয়ে সেসব জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন দুই সাংসদ নায়িকা। এবার বিধানসভা ভোটের আগে রাজনীতিতে নেমে সেই একইরকমভাবে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে পায়েল, শ্রাবন্তী, সায়নী, সায়ন্তিকাদের। ঠিক যেমন তৃণমূলের নুসরত জাহানের দাম্পত্য জীবন নিয়ে মশকরা করা হচ্ছে, বিজেপির শ্রাবন্তীর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না। রাজ তক্রবর্তীর তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে মিমিকে ঘিরে ট্রোলিংও হয়েছে। আবার বিজেপির সদস্য পার্ণো বিরোধীপক্ষের মিমির সঙ্গে গোয়া ঘুরতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া পরিচালক সুদেষ্ণা রায়ের (Sudeshna Roy) মতে, "নারীরাই বেশিরভাগ আক্রমণের নিশানা। নোংরা নোংরা কথা বলা হচ্ছে। এটা পুরো নারী জাতির অপমান। বহু পুরুষেরও ১০টা-৫টা বিয়ে থাকতে পারে, তখন তো এই প্রশ্ন ওঠে না। ব্যক্তিগত জীবনে কে কটা বিয়ে করলেন তা কখনই তাঁর কাজ বা প্রতিভার মাপকাঠি হতে পারে না। আগে মিমি, নুসরতকে ট্রোল করা হত। তাঁরা কাজ করে নিজেদের প্রমাণ করেছেন।"
অন্যদিকে সদ্য বিজেপিতে যোহ দেওয়া পায়েলের মতে, "তারকাদের নিয়ে সবসময়ই স্ক্রুটিনি চলতে থাকে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর তা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেছে। ট্রোলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কারও বডিশেমিং করা হচ্ছে, তো কখনও আবার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে চরিত্র নিয়ে। নেতিবাচক মন্তব্য বা ট্রোলিংকে সিরিয়াস নিয়ে লাভ নেই, আখেড়ে কাজেরই ক্ষতি।"
তবে কাদা ছোঁড়াছুড়ি যেমন চলছে, তেমন সৌহার্দ্যমূলক বার্তার উদাহরণও রয়েছে। শ্রাবন্তী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বিরোধীপক্ষের রাজ চক্রবর্তী তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আবার যশ দাশগুপ্ত-দেবের সৌজন্যমূলক বার্তা বিনিময়ও এক্ষেত্রে আরেকটা নয়া উদাহরণ প্রতিস্থাপন করেছে ইন্ডাস্ট্রির কাছে। রাজনীতিতে নাম লেখানো তারকাদের একাংশের কথায়, রাজনৈতিক রং যাই হোক না কেন, তাতে বন্ধুত্বে কোনও প্রভাব পড়বে না। একুশের ভোটযুদ্ধে
দুই শিবিরে যতই স্টার স্ট্র্যাটেজি থাক না কেন, আখেড়ে দিনের শেষে তাঁরা একে-অপরের বন্ধু, কেউই কারও শত্রু নন, সেকথা আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনেকে।