কৃষ্ণকুমার কুন্নাথের মৃত্যুর পর বাংলার অনুষ্ঠান উদ্যোক্তাদের গাফিলতি নিয়ে সরব নেটদুনিয়া। মুম্বইয়ের সঙ্গীতশিল্পীর আকস্মিক প্রয়াণের জন্য দোষ দেওয়া হচ্ছে আয়োজকদের বেপরোয়া আচরণকেই। তবে বিধি বিধান কে খণ্ডায়! নেটদুনিয়ার একাংশের মতে, এমন কাণ্ডের পর তো বাইরের খ্যাতনামা শিল্পীরা কলকাতাতে পা-ই রাখতে চাইবেন না। শো-ও করবেন না। শুধু তাই নয়, নেটদুনিয়ার দৌলতে এমন খবরও রটেছে যে, "কেকে-র মৃত্যুর পর মুম্বই নাকি মুখ ফেরাচ্ছে কলকাতা থেকে!" সত্যিই কি তাই? হাল-হকিকতের খোঁজ নিল 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'। আগামী জুলাইতে-ই কলকাতায় কনসার্ট করতে আসছেন সোনু নিগম।
হাসিমুখে কলকাতায় পারফর্ম করতে আসা শিল্পীকে কফিনবন্দি হয়ে ফিরতে হল মুম্বইয়ের বাড়িতে, একাংশের মতে 'এই লজ্জা বাংলার'। বাংলা বরাবরই সংস্কৃতিপ্রেমী। সেই সাত-আটের দশক থেকেই মহম্মদ রফি, কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, বাপ্পি লাহিড়ি, পরে অলকা-উদিত, সোনুর মতো বহু খ্যাতনামা শিল্পীরা পারফর্ম করতে আসেন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে। শ্রোতারাও ব্যাপক সাড়া দেন। কেকে-র মৃত্যুর পর কি সত্যিই বলিউড সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে বাংলার এই নিবিড় টানে ভাঁটা পড়ল? উত্তরটা খোদ সোনু নিগম। আগামী জুলাই মাসেই কলকাতায় কনসার্ট করতে আসছেন গায়ক।
এপ্রসঙ্গে খ্যাতনামা অনুষ্ঠান উদ্যোক্তা তোচন ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'। তিনি জানান, "কেকে-র এমন মৃত্যু সত্যিই বাংলার জন্য লজ্জার। তবে মুম্বইয়ের শিল্পীরা কিন্তু একবারও বলেননি যে, তাঁরা বাংলায় এরপর থেকে শো করতে আসবেন না। আমি আজ বম্বের কাউকে ডাকলে কালই চলে আসবেন। বাংলা তথা এই শহর জানে শিল্পীদের প্রকৃত শ্রদ্ধা-সম্মান দিতে। হেমন্ত-সন্ধ্যা-মান্নাদের শহর এটা। এখানকার দর্শকদের উত্তেজনাও উপভোগ করেন মুম্বইয়ের শিল্পীরা। একথা সর্বৈব মিথ্যা যে 'মুম্বই কলকাতা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে!' জুলাই মাসেই আরেক খ্যাতনামা শিল্পী আসছেন মুম্বইতে কনসার্ট করতে।" কে তিনি? প্রশ্ন করা হলে প্রথমটায় বলতে গররাজি হলেও পরে তিনি জানান, "সোনু নিগমের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে কথা হয়েছে। নীতিন মুকেশ ও কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গেও কথা হয়েছে।"
<আরও পড়ুন: ‘ভিড়ে চাপা পড়ে আমরাও মরতে চাই!’ বিস্ফোরক নচিকেতা>
মঙ্গলবার রাতে সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র (Singer KK Death) আকস্মিক প্রয়াণ অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেছে। বিশেষ করে, কাঠগড়ায় উঠেছে অনুষ্ঠান উদ্যোক্তাদের দায়বদ্ধতা। খ্যাতনামা শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের জন্য যথাযথ বন্দোবস্ত করার দায়িত্ব কি আয়োজকদের নয়? কিংবা শিল্পীদের কোনও অসুবিধে হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে তত্ত্বাবধান করার দায়িত্বটা-ই বা কার কাদের বর্তায়?অতঃপর বাংলার উদ্যোক্তাদের গায়ে যে কালি ছেটানো হয়েছে, সোনু নিগমের কলকাতা কনসার্টের পরে এমন বিভ্রান্তিকর ধারণা যে একেবারেই মুছে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। তোচন ঘোষ এও জানান যে, "কেকে-র সঙ্গে কলকাতায় আরও ২-১টা শো নিয়ে কথা চলছিল। এখন তাঁর জায়গায় অন্য শিল্পীকে আনতে হবে।"
জল্পনা আরও গাঢ় হয়েছে সুরেন্দ্রনাথ নাথ কলেজের অনুষ্ঠান বাতিল নিয়ে। কথা ছিল সুনীধি চৌহান ও জুবিন নটিয়াল আসবেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। কিন্তু সেই শো বাতিল হয়ে যাওয়ার পর নেটমাধ্যমে চাউর হয় যে, মুম্বইয়ের শিল্পীরা নাকি কেকে-র মৃত্যুর পর কলকাতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন! সেপ্রসঙ্গে তোচন ঘোষ এমন জল্পনা উড়িয়ে সাফ জানান যে, "৮ জুন অনুষ্ঠান ছিল। শিল্পীদের জন্য বাতিল হয়নি। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম যেহেতু সরকারের। তাই সরকারের তরফে একদিনের নোটিশে প্রোগ্রাম বাতিল করতে পারে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সরকারি কোনও অনুষ্ঠানের জন্যই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম পাওয়া যায়নি। তাই অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। বম্বের শিল্পীরা মোটেই মুখ ফেরাচ্ছেন না। তাঁরা উদগ্রীব বাংলায় শো করতে আসার জন্য।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন