"তুমি পুরাণকে বলো ইতিহাস, ইতিহাসকে বলো পুরানো… তোমার ভক্তিতে দাগ রক্তের তুমি কাউকেই ভালবাসো না… তুমি বেসাতি করতে এসেছ, দেশপ্রেমের কিছুই জানো না…" গানের প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা লাইনেই ইঙ্গিত, যে এই গানের নিশানা দিল্লির রাজপাটের দিকে। আরেকটু স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে মোদী-সরকারের বিরুদ্ধে। উত্তপ্ত ভোট-বাংলায় এ যেন একুশের গণসঙ্গীত। কখনও সুর মিলিয়েছেন ঋদ্ধি সেন (Riddhi Sen), সুরঙ্গনা, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো তরুণ তুর্কীরা আবার কখনও বা রূপঙ্কর বাগচী, অনুপম রায় (Anupam Roy), অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, রেশমি সেন, দেবলীনা, সব্যসাচী চক্রবর্তীরা (Sabyasachi Chakraborty)। স্বৈরাচারী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মেলালেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তও। নেপথ্যের রূপকার অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)। 'তাসের দেশ'-এর একরোখা নিয়মের বিরুদ্ধে এই গান তাঁরই লেখা। মসনদ দখলের লড়াইয়ে যখন অগ্নিগর্ভ বাংলার রণক্ষেত্র, তখন ভোটপুজো (West Bengal Assembly Election 2021) বোধনের দিন দুয়েক আগে হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়া আন্দোলিত হয়ে উঠল 'নিজেদের মতে নিজেদের গান' নিয়ে। ওঁরা 'একুশের আইন' বেঁধে আবারও মনে করিয়ে দিলেন, "শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনেশে!"
লক্ষ্য একটাই- বহুত্ববাদ রক্ষা। এই ভূ-ভারত বৈচিত্র ও ভালবাসার দেশ। সর্ব-ধর্ম সমন্বয়-ই যার নীতি। তবে মিথ্যাচার, ঘৃণার স্ফুলিঙ্গ যখন সেই বহুত্ববাদকে খর্ব করে দেশের জনমতের গলা টিপে শ্বাসরোধ করে, তখন সুস্থ শাসনতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদী কণ্ঠ তোলা নাগরিকদের কর্তব্যই বটে! আর এই গানের মধ্য দিয়েই সেটা বুঝিয়ে দিলেন বাংলার নবীন-প্রবীণ বুদ্ধিজীবীরা।
শুনুন-দেখুন সেই প্রতিবাদী গান-
বিগত কয়েক বছরে বাক স্বাধীনতা খর্ব করা, জোর করে নিজেদের মত চাপিয়ে দেওয়া, ধর্মীয় হানাহানি-রক্তারক্তি কিংবা প্রতিবেশী পাকিস্তান দিয়ে সব অঙ্ক গুণ করে গুলিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে দেশের রাজনীতিতে, তা সর্বতোভাবেই বহুত্ববাদকে গ্রাস করে। এই গানে তার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির' মন্ত্রেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাঁরা একযোগে গাইলেন- 'আমি এই দেশেতেই থাকব'। একে ঠিক ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের বিদ্রোহ ঘোষণার তকমা সাঁটা যায় না। বরং বলা ভাল, এঁরা দেশের মুক্ত চিন্তার পক্ষে সওয়াল করেছেন। প্রবীণদের সঙ্গে নবীন প্রজন্ম পথে নেমে দাবি করেছেন গর্বিত ভারতের বহুত্ববাদ নীতি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
গানের প্রতিটা শব্দ-লাইন তথা মিউজিক ভিডিওর ভিস্যুয়ালেই সুস্পষ্ট, যে এই প্রতিবাদ মোদী-তন্ত্রের বিরুদ্ধে। অনুপম রায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, উজান চট্টোপাধ্যায়, সুরঙ্গনা, পিয়া চক্রবর্তী, রেশমি সেন, দেবলীনা দত্ত মুখোপাধ্যায়, কে নেই এই ভিডিওয়। একঝাক জনপ্রিয় মুখ। মিউজিক ভিডিও পরিচালনায় ঋদ্ধি সেন ও ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়।