টেলিপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অলিভিয়া সরকার এই প্রথম কাজ করলেন ওয়েবসিরিজে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে হইচই-তে স্ট্রিমিং শুরু হবে ওয়েবসিরিজ 'মন্টু পাইলট'-এর। ওই সিরিজে এক যৌনকর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অলিভিয়া। কতটা কঠিন ছিল অভিনেত্রী হিসেবে তার প্রস্তুতি সেই কথা জানালেন অলিভিয়া, পাশাপাশি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জানালেন যৌনপল্লি সম্পর্কে তাঁর কিছু ব্যক্তিগত অনুভবের কথা।
যৌনপল্লির মেয়েদের সম্পর্কে তোমার ব্যক্তিগত ভাবনা ঠিক কী এই সিরিজে কাজ করে কি সেই ভাবনার কোনও পরিবর্তন হল?
কোনওদিনও কোনও মানুষকে নীচু চোখে দেখিনি আর সেটা আমি পছন্দ করি না। প্রত্যেকটা মানুষের মন আছে, সম্মান আছে আর সবাই কোথাও না কোথাও বাধ্য। আমি ওঁদের হিস্ট্রি জানতাম না অতটা ডিটেলে। 'মন্টু পাইলট' করতে গিয়ে প্রচুর গল্প শুনেছি সবার কাছে আর প্রচুর কেঁদেছি... প্যাক আপ-এর পর রোজ কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতাম। খুব সম্মান করি আমি ওঁদের। ওই মনের জোর... কতজনের জীবনে কত যে ঝড় বয়ে গিয়েছে, কতজনের বাবা-কাকারা মেলা ঘোরানোর নাম করে ছোট ছোট ১২-১৩ বছরের বাচ্চাদের বিক্রি করে দিয়েছে। আমাদের শুনেই চোখে জল আসে আর যারা ভুগেছে তাদের নীচু চোখে দেখলে পাপ হবে।
এতদিনে কি মনের মতো চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্র পেলে?
যত চরিত্র করেছি এতদিন আমার কেরিয়ারে, সবকটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। কিন্তু 'মন্টু পাইলট'-এর সরমা আমার কাছে সব সময় স্পেশাল থাকবে। এতদিন আমি এইটা শুনে এসেছি আমি খুব আরবান, ক্লাসি, বড়লোকের মেয়ের একটা ছাপ আছে। প্রথমদিন যখন কথা বলতে গিয়েছিলাম প্রজেক্টটা নিয়ে, পুরো গল্পটা শোনার পরে আমার মাথায় কোনও সেকেন্ড থট আসেনি। দেবালয়দা বলেছিল, ''অলিভিয়া তুই খুব মিষ্টি আর সফিস্টিকেটেড একটা মেয়ে, অনেক ভাঙতে হবে তোকে নিজেকে।'' আমি বলেছিলাম, ''আমি পারব।'' আর সিরিয়াসলি আজকে দেবালয়দা কনফিডেন্সটা দিয়েছিল বলেই নিজের ওপর এত বড় একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে পেরেছি। খুব নার্ভাস আর টেনসড ছিলাম প্রথম দিন থেকে, আজও আছি। মায়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, ''আমাকে খারাপ ভাববে না তো।'' মা বলেছিল, ''অনেক বড় বড় অভিনেত্রী তো করেছে, এরম চরিত্রে অভিনয় করা সবচেয়ে কঠিন। প্র্যাকটিস কর, হোমওয়ার্ক কর ভাল করে।'' এত সাপোর্ট থাকলে চ্যালেঞ্জ নিতে মজাই লাগে।
কীভাবে প্রস্তুতি নিলে একটু বলো।
আমার প্রস্তুতিটা খুব কঠিন ছিল। এটা আমার প্রথম ওয়েব, অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে আমাকে আর লুকসেট থেকেই একটা অন্য রকম বিহেভ করা শুরু করে দিয়েছিলাম। প্রচুর ডিপ্রেসিং গান শুনতাম। গান আমাকে অভিনয় করতে খুব হেল্প করে। স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে চক-আউট করতাম। খুব বেশি মজা করা বা হাসাহাসি করা ছেড়ে দিয়েছিলাম। চরিত্রের বাইরে অন্য কোনও কথা বলিনি ওই কদিন আমি। কারও ফোন রিসিভ করতাম না... এঁদের মধ্যে একটা ঘৃণা থাকে সমাজের প্রতি। আর থাকবে না-ই বা কেন। সমাজ নিজেই সৃষ্টি করে সবকিছু আবার নিজেই ছি ছি করে। আর বাকি আমার কপাল সত্যি খুব ভাল যে একটা ভাল টিম পেয়েছি ওয়েবে আমার প্রথম কাজে। এত নার্ভাস থাকা সত্ত্বেও সবাই খুব কঠিন সিনকেও খুব সহজ করে দিয়েছিল। আমি নিজেকে খুব ব্লেসড মনে করছি।
আরও পড়ুন: অ্যাসিড আক্রমণ, ক্ষতবিক্ষত লক্ষ্মী আগরওয়ালের ঘটনা প্রকাশ্যে
আগামী দুবছর মানে ২০২০-২১-এ অলিভিয়া সরকার কি একটু আলাদা হবে? হলে, কতটা আলাদা হবে, পর্দায় ও পর্দার বাইরে সবটা মিলিয়েই?
২০১৯ আমাকে অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। আমি এখন কাজ নিয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস ও ডেডিকেটেড। বাকি ভবিষ্যতে কী হবে বলতে পারব না তবে এইটা বলতে পারি আমি নিজেকে নিয়ে এখন বেশ কনফিডেন্ট আর প্রচুর চ্যালেঞ্জিং চরিত্র করতে চাই। একটু বিশ্বাস রাখো আমার ওপর। এইটা বলতে পারি আমি প্রচুর হার্ডওয়ার্ক করব একটা চরিত্রকে যতটা সম্ভব জাস্টিফায়েড করানোর জন্য। তার জন্য যদি আমাকে আর কয়েকটা প্রজেক্টে, প্যাক আপের পর কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ঢুকতে হয়, আমি রাজি।