15th August special film screening: ১৫ অগাস্টকে নিছক ছুটির দিন বলে কাটিয়ে দিতে চাইবেন না যাঁরা, কিছুটা হলেও তাৎপর্যপূর্ণ করে রাখতে চাইবেন দিনটিকে, তেমন নাগরিকদের জন্য এই সুযোগ। ফ্লিপকার্ট কিংবা আমাজন সেল দিয়েই যখন অনেকটা নির্ধারিত হতে থাকছে স্বাধীনতা দিবসের প্রাপ্তিসমূহ, তখন এই উদ্যোগকে সমান্তরাল বলে চিহ্নিত করাই যায়।
সিনেমাগুলিও কিঞ্চিৎ সমান্তরাল বটে।
মুম্বইয়ের ম্যানহোলে মিলল মেথরের মৃতদেহ। এক বয়স্ক দলিত সমাজকর্মী তথা গণসঙ্গীত গায়ক এই মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত হলেন আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য। বলা হল, তাঁর গানের কথায় যে আগুনঝরা বক্তব্য, তা- নিশ্চিৎ আত্মহননের দিকে নিয়ে গেছে ওই মানুষটিকে। এরপর আদালত। যার কার্যবিধি কিঞ্চিৎ কাফকা মনে পড়াতে পারে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থার আঁধার তবু মানবিক দিক উঠে এসেছিল ‘কোর্ট’ ছবিতে। ২০১৪ সালের চৈতন্য তামহানে নির্মিত ছবিটি দিয়ে শুরু হবে স্বাধীনতা দিবসের সিনেমা।
বিক্রমজিৎ গুপ্ত পরিচালিত ‘অচল’ গ্লোবালাইজেশনের দুনিয়ায় উদ্বৃত্ত হয়ে পড়া মানুষদের সহমর্মী। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে যাঁরা খেলা দেখান বা হকাররা, যাঁরা বাজারের চাপে ক্রমাগত পিছু হঠতে হঠতে হারিয়ে যেতে বসেছেন, তাঁদের কথা উঠে এসেছে এ ছবিতে। অচল নির্মিত হয়েছিল ২০১৩ সালে।
এ ছাড়াও দেখানো হবে আমির বশিরের ২০১০ সালের ছবি হারুদ, ২০১৩ সালের নাগরাজ মঞ্জুলের ছবি ফান্ড্রি, গুরবিন্দর সিং পরিচালিত ২০১১ সালের ছবি আনহে ঘোড়ে দা দান।
এই অভিনব স্বাধীনতা দিবস পালন এবারই প্রথম নয়। পিপলস ফিল্ম কালেকটিভের এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেবছর জুলাই মাসে মারা গিয়েছিলেন আব্বাস কিয়েরোস্তামি। ১৫ অগাস্ট তাঁর ৬টি ছবি দেখানো হয়েছিল যোগেশ মাইমে। তারপর ২০১৭ সালের স্বাধীনতা দিবসের আগে সংগঠনের তরফ থেকে স্থির করা হয়, ১৫ অগাস্ট সিনেমা প্রদর্শন জারি থাকুক, তার একটা রূপরেখা দেওয়া হেক। সেই মোতাবেক ‘Frames of Freedom'- নাম দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের দিন দেশ বিদেশের বেশ কয়েকটি ছবি প্রদর্শিত হয় ওই প্রেক্ষাগৃহেই। এবারও জায়গা বদলায়নি। তবে এবার কোনও বিদেশি ছবি নয়, সব ছবিই দেশের। উদ্যোক্তাদের পক্ষে কস্তুরী বসু বললেন, ‘‘দেশটা এখন খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, একটু নিজেদের দিকে ফিরে তাকানো দরকার মনে হল আমাদের।’’
15th August film screening: গত বছর স্বাধীনতা দিবসে সারাদিনে ছবি দেখতে এসেছিলেন প্রায় ৭০০ দর্শক. (ফোটো সৌজন্য: পিপলস ফিল্ম কালেকটিভ)
স্বাধীনতা দিবসের দিনে সিরিয়াস সিনেমা দেখতে লোক আসেন? কারা আসেন? কস্তুরী জানালেন, ‘‘আমরা শুধু বছরে একবার সিনেমা দেখাই না। সারা বছর ধরেই বিভিন্ন সময়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য দুটো, ভালো ছবি দেখানো, এবং ভালো ছবির দর্শক তৈরি করা। ১৫ অগাস্টে আমরা কাহিনিচিত্র দেখাচ্ছি। গত বছর ১৫ অগাস্টে সারা দিনে প্রায় ৭০০ জন ছবি দেখেছেন। এঁদের মধ্যে ১৮ বছর থেকে শুরু করে মাঝ পঞ্চাশ কি তারও বেশি বয়সী মানুষরা রয়েছেন। তবে আগ্রহের পাল্লা অল্পবয়সীদের মধ্যেই ভারী।’’
15th August film screening: এই উদ্যোগে অল্পবয়সীরাই দলে ভারী, দাবি উদ্যোক্তাদের (ফোটো সৌজন্য: পিপলস ফিল্ম কালেকটিভ)
পিপলস ফিল্ম কালেকটিভের আরেকটি উদ্যোগের কথাও জানালেন কস্তুরী। সিনেমাকে, সিনেমার ভাবনাকে ছড়িয়ে দিতে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় পাড়ায় পাড়ায় ছবি প্রদর্শনের বন্দোবস্ত করে থাকে এই সংগঠন। তবে এসবই চলে পুরনো কায়দায়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাঁদা তুলে।
১৫ অগাস্টে যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে সিনেমা দেখানো শুরু হবে সকাল ১০টায়। চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। এবং উল্লেখযোগ্য, সারাদিনব্যাপী এই সিনেমা প্রদর্শনীতে কোনও টিকিটের বন্দোবস্ত নেই। প্রবেশ অবাধ।