খড়কুটো ধারাবাহিকের শুটিং কেমন চলছে?
সামাজিক দূরত্ব মেনে শুটিং করা যায় না। বিশেষ করে আমি এখন যে কাজটি করছি সেখানে আরও সম্ভব নয়। কারণ একান্নবর্তী পরিবার দেখানো হচ্ছে। কাজেই একদমই সম্ভব নয়। তবে এরমধ্যই চেষ্টা করা হচ্ছে যতটা সাবধনতা অবলম্বন করা যায়।
দেওরের চরিত্র মানেই অম্বরীশ ভট্টাচার্য, একঘেঁয়ে লাগে ?
না না এটা তো বয়সের জন্য হচ্ছে। আর দশ বছর পর আমাকে বাবা হিসেবে দেখানো হবে। তারও দশ বছর পর জ্যাঠার চরিত্রে রাখা হবে। তারও দশ বছর পর যদি বেঁচে থাকি তাহলে দাদু। এটাই তো নিয়ম। এতে হাঁপানোর কোনও কারণ নেই। আমি যে কাজ পাচ্ছি এটাই তো বড় কথা। তারপর আবার চয়েস! কত লোক কাজ পাচ্ছে না বাড়িতে বসে আছে দিনের পর দিন। সেই জায়গায় আমি যে নিয়মিত কাজটা করে যাচ্ছি এটাই বড় পাওয়া।
কোথাও মনে হয় চেহারা আপনার অভিনয় জগতকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে?
কাঞ্চন দারও ভারী চেহারা নয়, তাহলে? তাঁকেও কমেডি চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এতে কাস্টের জন্য বাছাই পর্বেও সুবিধা হয়। যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই একটা ক্যাটাগরিতে ফেলে দিলে সুবিধা হয়।
আপনি নিজেকে একটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতেই রাখতে ভালোবাসছেন?
ক্যাটাগোরাইজড তো থাকবেই। যেমন একটা নায়ক হতে গেলে বেশ কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট থাকে। তাকে মার্সেল ম্যান হতে হয়। সুন্দর দেখতে হতে হয়। গান গাইতে,নাচতে, মারামারি করতে, কলেজে ফাস্ট হতে লাগে। এগুলো একটা ফর্মুলা। সেরকম ঠিক একজন ভিলেনেরও ফর্মুলা থাকে। সেজন্য কাস্টিংয়ের সময় সুবিধা হয়। আমার যদি নির্দিষ্ট কোনও ক্যাটাগরি না থাকত, তাহলে কিন্তু আমি কাজও কম পেতাম। তাই কোনও একটা ক্যাটাগরির মধ্যে নিজেকে রাখতে পারাটা চ্যালেঞ্জ। আর কমেডিতে অভিনয় দেখানোর সুযোগ থাকে, যদি স্ক্রিপট, গল্প আর পরিচালনা ঠিকঠাক থাকে তাহলে অভিনয়ের দক্ষতা দেখানো সম্ভব কমেডি চরিত্রেই বলে আমি মনে করি। এটা শক্ত কাজ। আর এই শক্ত কজের জন্য যে দর্শক ও ইন্ডাস্ট্রি আমায় বেছে নিয়েছে তাতে আমি খুব গর্বিত বোধ করি।
কীভাবে অভিনয় জগতে প্রবেশ করলেন?
অভিনয় করার ইচ্ছা শুরু থেকেই ছিল। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমি থিয়েটার করতাম। সংস্কৃতি নাট্যদলে। ইন্দ্রনীল সেন সংস্কৃতি নাট্যদলের একটি নাটক দেখতে আসেন একদিন। সেখানে একটি নগণ্য চরিত্রে আমি অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু, ইন্দ্রনীল সেনের আমাকে মনে ধরে। তিনি তখন পরিচালক দেবেশদা কে বলেন ওই ছেলেটিকে পাঠাও, আমার মোটাসোটা একটা ছেলে লাগবে। একটা নতুন কাজের কথা ভাবছি। তখন দেবেশদা আমায় পাঠায়। আমি যাই এবং তারপর তিন চারটে অডিশনের পর আমি সিলেক্ট হয়ে যাই। খুব সহজেই হয়েছে বিষয়টা। আমায় যে খুব খাঁটতে হয়েছে, দরজা দরজায় ছবি দিয়ে ঘুরতে হয়েছে এমনটা নয়। স্টুডিওতে প্রথম আমি অডিশন দিতেই পা রাখি। কারণ আমার মনে হত আগে থিয়েটার করে অভিনয়টা শেখা দরকার।
স্বপ্নের চরিত্র কোনটি, যেখনে আপনি অভিনয় করতে চান?
স্বপ্নের চরিত্র ছিল তরুণ কুমার। ভাগ্য সাথ দিয়েছে। পূরণও হয়ে গিয়েছে মহানায়কে। আর সেভাবে কোনও চরিত্র নেই।
ইন্ডাস্ট্রিতে প্রিয় বন্ধু কে?
ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কোনও বন্ধু নেই। আমার যা বন্ধু বান্ধব সব ওই ছোট বেলার। আমি খুব একল সেরে। একা থাকতেই ভালোবাসি। তাই ওই বন্ধু আমার হয় না। পার্টি করছি বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছি এই টাইপের নই আমি। তাই তেরো চৌদ্দ বছরে আমার সেভাবে কোনও বন্ধু নেই। কিন্তু সকলের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক। তবে ওই শুটিংয়ের সময়টুকু। তার বাইরে আর কিছু নেই।
একা একা কীভাবে দিন কাটান?
একলা অনেক কাজ থাকে। বই পড়া, সিনেমা দেখা, থিয়েটার সম্পর্কে পড়া, আরও নিজের দক্ষতা বাড়নোর চেষ্টা, অথবা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে ভাবা। চিতপাত হয়ে খাটে শুয়ে থাকার মতো ভাল সময় আর হয় না। এই টাইমে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলি। এই কাজটা আমার জন্য খুবই উপকারি।
অভিনেতা অম্বরীশ কী সত্যি পেটুক?
না আমি পেটুক নয়। খেতে ভালোবাসি, কিন্তু অতটাও নয়। আপামর বাঙালি খেতে ভালোবাসে। আমি যে পরিমাণে খুব খেতে পারি এমনটাও নয়। কিন্তু প্রথম কাজ যেহুতু আমার ওইরকম ছিল তাই, একটা ইমেজ আমার তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ইমেজটা হওয়াতে একটা ভালো দিক হয়েছে, লোকজন আমাকে নেমন্তন্ন করে খাওয়ায়। তবে একটা বলতে পারি আমি সবরকম খাবারই খেতে ভালোবাসি।
প্রেম এসেছে জীবনে?
জীবনে প্রেম আসবে না হতে পারে। সেতো আসবেই। প্রেম এসেছিল, হয়েওছিল, কিন্তু টিকল না। তারপর চলে গেল সে।
কেন চলে গেল সে ?
আসলে আমি তো খুব স্বাধীনচেতা মানুষ। সেটাই মূল কারণ। আমি আপোস করতে পারি না। মানিয়ে গুছিয়ে চলা, সব সময় সবকিছু বলে করা এসব সঠিকভাবে করতে পারতাম না। প্রেমের ফেজটা যেমন থাকে, সবটা বলে করতে হয়। দিনে দশবার খবর নিতে হয়। খেয়েছ কিনা, ঘুমিয়য়েছ কিনা এই ধরনের প্রশ্ন করাটা ঠিক মনে থাকত না। পছন্দ করতাম না ঠিক তা নয়, আসল মনে থাকত না। হয়ত প্রেমিকা আমায় তিনটে ফোন করেছে। আমি মিসকল দেখেছি। শট দিয়ে এসে তাকে যে আমার ফোন করতে হবে সেটা ভুলেই গেলাম। তার মানে এটা নয় যে তাকে আমি ভালোবাসি না। আসলে প্রেম করার জন্য ওই নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট আমার মধ্যে নেই।
আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে প্রেমিকারা?
যে কটা প্রেম এসেছে তাঁর প্রত্যেকটাতেই আমিই কিছুদিন পর বুঝেছি যে হচ্ছে না ঠিক। সেক্ষেত্রে নিজেই তাঁকে বলেছি। আলোচনা করেছি। মারামারি পর্যায়ে যেতে দিতাম না। আমার যখন ঘুরতে ইচ্ছা করে আমি চলে যাই। আমি হয়ত তাকে জানালামও না। স্বাভবিকভাবেই তখন তাঁর খারাপ লাগে। কিন্তু আমি যদি এই গুলো বদলে ফেলি তাহলে আমি মানসিকভাবে ভালো থাকব না। সবার কাছে সর্বশেষ নিজের ভালো থাকাটাই গুরুত্ব পায়।
বিয়ে করবেন কবে?
বিয়ে করার ভাবনা চিন্তা এখনও অবধি নেই। কিন্তু হয়েও যেতে পারে। বিয়ে ব্যাপারটা আমার কাছে রহস্য হয়ে রয়েছে।
বাড়ির লোক বিয়ে করার জন্য জোর করছে না?
বাড়ির লোক জানে। আমি কী জিনিস তাই আমার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে। যা যা করতে ইচ্ছা করেছে আমি সবসময় তাই করেছি। অতএব আমাকে বলে কয়ে কিছু করানো যাবে না।
আপনার সম্পর্কে এমন গোপন কিছু বলুন, যা দর্শকরা জানেন না ?
আমার প্রথম প্রেম হয়েছিল আমার থেকে আট বছরের বড় যুবতীর সঙ্গে। তখন আমি ক্লাস সেভেন। সেটা সিরিয়াস প্রেম ছিল। ইয়ার্কি একদমই নয়। প্রথম প্রেম ছিল আমার। তাঁর সঙ্গে আমার অদ্ভুত ভাবেই পরিচয় হয়। প্রথমে দিদি বলেই চলছিল। কিন্তু তারপরে তারও আমার প্রতি একটা অন্যরকম অনুভূতি জন্মায়। একটা সুবিধা ছিল কেউ সন্দেহ করত না। ফলে একটা গভীর প্রেম তৈরি হয়। বেশ মজা পেয়েছিলাম গোটা ব্যাপারটায়। প্রেমিকা বড় হলে ব্যপারটা এমন হয়, প্রেমিকা কখনও মা বা কখনও গার্লফ্রেন্ড বা কখনও দিদি।
কিন্তু শেষে কী হল সেই সম্পর্কের?
স্বাভাবিক নিয়মেই টিকল না। বছর দুয়েক ছিল এই সম্পর্ক। তারপর সে তার পথে চলে যায়। আমি আমার মত করে বড় হয়ে যাই। তবে আজও সেই প্রেম আমার কাছে সুখস্মৃতি হয়েই রয়েছে।