বৃহস্পতিবার রাতেই তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ভবানীপুর (Bhawanipur) বিধানসভা কেন্দ্র। রাত পোহাতেই চাপা উত্তেজনার মাঝে এলাকা শান্ত করতে ময়দানে নামলেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। পাশেই সেনাপতি রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)। গতকাল রাতের ধুন্ধুমারে হাতে যাঁর প্লাস্টার লেগেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) খাসতালুক। উপরন্তু তৃণমূলের (TMC) অতিপরিচিত আদি শক্তিঘাঁটি। যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির তরফে পদ্ম ফোটানোর দায়িত্ব বর্তেছে রুদ্রনীল ঘোষের উপর। মমতা-পিচে লড়াই নেহাত সহজ নয়। তৃণমূল সুপ্রিমো এবার তাঁর নিজস্ব গড় থেকে না লড়লেও বিজেপির সম্মুখে চ্যালেঞ্জ কিছু কম নয়। কারণ, রুদ্রনীলের প্রতিপক্ষ তৃণমূলের অতি পুরনো মজবুত স্তম্ভ শোভনদেব চট্টোপাধ্য়য়। অতঃপর পদ্ম শিবিরের 'চাণক্য-নীতি' সমঝে দুয়ারে দুয়ারে লিফলেট বিলি হল শুক্রবার দুপুরে। অমিত শাহ খোদ ভবানীপুরে জনতার দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোটপ্রার্থনা করলেন বিজেপি (BJP) প্রার্থী রুদ্রনীলের জন্য।
ভবানীপুরের বদলে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) বিজেপিকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ জানিয়েই নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে রাজ্যের দ্বিতীয় দফায় ভোট সাঙ্গ হয়েছে। তবে ভবানীপুরে পঞ্চম দফায় নির্বাচন। মমতাহীন হলেও ভবানীপুর কেন্দ্রের গুরুত্ব যে একচুলও কমেনি, তা প্রমাণ করলেন গেরুয়া শিবিরের প্রিয় 'মোটাভাই'। সেই প্রেক্ষিতেই ভবানীপুরের ভিআইপি আসন দখল করতে মরিয়া বিজেপি। তাই বাংলার অন্যান্য প্রান্তে প্রচারযানে সওয়ারি হয়ে ভোটপ্রার্থনা করলেও মমতা-গড়ে একেবারে গণদেবতার দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছেন খোদ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উল্লেখ্য, কলকাতা শহরে এই প্রথম কোনও কেন্দ্রে হেঁটে প্রচারে গেলেন অমিত শাহ।
প্রসঙ্গত, টলিউড দখল করতে মরিয়া হলেও দক্ষিণ কলকাতার আরেক কেন্দ্র টালিগঞ্জ বিধানসভায় কিন্তু বাবুল সুপ্রিয়র হয়ে প্রচার করতে দেখা যায়নি অমিত শাহকে। যদিও বেহালার দুই তারকা প্রার্থী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও পায়েল সরকারের হয়ে প্রচারে গিয়েছিলেন। কিন্তু, টালিগঞ্জে প্রচার কর্মসূচী না রেখে, হঠাৎ ভবানীপুরের পিচে ব্যাটন ধরলেন কেন অমিত শাহ? গেরুয়া শিবিরের অন্দরমহলে কান পাতলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ভবানীপুর কেন্দ্রে নাকি পদ্ম ফুটছে-ই বলে ধারণা বিজেপির, তাই তৃণমূল সুপ্রিমো নিজের কেন্দ্র ছেড়ে প্রেস্টিজ লড়াই লড়তে গিয়েছেন নন্দীগ্রামে। যে বিষয়ে মোদী একাধিকবার মমতাকে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, "হার নিশ্চিত জেনেই ভবানীপুর থেকে স্কুটি ঘুরিয়ে নন্দীগ্রাম গিয়েছেন মমতা। পরে দেখেছেন, সেটা ভুলই হয়েছে।" তবে গত লোকসভা ভোটের ফল দেখলেই বোঝা যাবে যে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে যে বিজেপির পাল্লা এবার একটু ভারী-ই রয়েছে।
বাংলার মসনদ দখলের লড়াইয়ে একেবারে কোমর বেঁধে নেমেছে মোদীর মন্ত্রীসভা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ, মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিত্যদিনই বাংলার বিভিন্নপ্রান্তে ছুটছেন। এবার মমতা-গড় দখল করতে একেবারে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছলেন শাহ।