গত সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে অনীক দত্ত ‘অপরাজিত’ (Aparajito)। ১৯৫৫ সালে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘পথের পাঁচালি’ নামক যে ‘মাস্টারপিস’ তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়, তার নেপথ্যে কতটা স্ট্রাগল ছিল? সেই গল্পই ২০২২ সালে এসে পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক। প্রথমটায় বাংলা জুড়ে খুব বেশি প্রেক্ষাগৃহে জায়গা না পেলেও মাত্র ১ সপ্তাহেই রাজ্যের বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্স, সিনেমাহলগুলিতে জায়গা করে নিয়েছে এই ছবি। প্রশংসায় ভরিয়েছেন সিনেসমালোচকরা। রমরমিয়ে চলছে 'অপরাজিত'। বক্সঅফিসে লক্ষ্মীলাভ নিয়ে গোড়ার দিকে শঙ্কা থাকলেও গত এক সপ্তাহের মার্কশিট বলে দিচ্ছে, এই ছবি বিগ বাজেটের সিনেমাকেও রীতিমতো টেক্কা দিচ্ছে।
IMdb-তে রেটিং ৯.৬। যা কিনা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'অপরাজিত'র রেটিংকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। মাণিকবাবুর সিনেমার রেটিং IMdb-তে ৮.৬। তবে এই সিনেমা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে হইচই হলেও, এমনকী দর্শকরা হল থেকে বেরিয়ে এসে ইতিবাচক রিভিউ দিলেও অনীকের 'অপরাজিত'র ঠাঁই হয়নি নন্দনে। সরকারি প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমার স্লট না পাওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই বেজায় শোরগোল শুরু হয়েছিল। তবে আশা করা হয়েছিল, এক সপ্তাহে সিনেমার সাফল্য দেখে হয়তো নন্দন কর্তৃপক্ষ জিতু কামাল (Jeetu Kamal), অনীকের (Anik Dutta) এই সিনেমাকে জায়গা দেবেন। তবে দর্শকদের সেই প্রত্যাশা আপাতত বিশ বাঁও জলে! কারণ দ্বিতীয় সপ্তাহেও নন্দনে 'মিনি', 'কিশমিশ', 'রাবণ' এমনকী মুক্তির আগেই 'বেলাশুরু' স্লট পেলেও জায়গা পেল না 'অপরাজিত'। অতঃপর নন্দনে বসে সত্যজিৎ-নস্ট্যাজিয়ায় ভেসে দর্শকদের এই ছবি যে আর দেখা হল না, তা বলাই বাহুল্য।
যদিও বাণিজ্যিক যুক্তি দেখিয়ে নন্দন (Nandan) কর্তৃপক্ষ এর আগে জানিয়েছিলেন, যে সব বাংলা ছবি চলছে সেই সমস্ত ছবিগুলোকেই দেখানো হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য, অনীক দত্তর 'অপরাজিত'র পাশাপাশি ওই দিনে মুক্তিপ্রাপ্ত শিলাদিত্য মৌলিকের 'হৃৎপিণ্ড'ও নন্দনে স্লট পায়নি।
নন্দন, শহরের সিনেপ্রেমীদের মিলনপ্রাঙ্গণ যে প্রেক্ষাগৃহের লোগোর ডিজাইন করেছিলেন খোদ সত্যজিৎ রায়, এমনকী উদ্বোধনও করেছিলেন স্বয়ং তিনিই, সেই সিনেমাহলেই কিনা জায়গা পেল না মাণিকবাবুর ‘পথের পাঁচালি’ তৈরির নেপথ্যের স্ট্রাগনের গল্প! হতবাক অনেকেই। দর্শকদের একাংশ অবশ্য নন্দনে 'অপরাজিত'র ঠাঁই না পাওয়ার নেপথ্যএ রাজনৈতিক কারণ খুঁজেছেন। তাঁদের মতে, বামপন্থী মনোভাবাপন্ন পরিচালক অনীক দত্ত যেভাবে একাধিকবার মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন, সেই প্রেক্ষিতেই হয়তো এমন পরিণাম। যদিও তাতে 'অপরাজিত'র ব্যবসা আটকে থাকেনি। দর্শকরা এই ছবি দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। অনেকেরই আক্ষেপ, টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ দিনই প্রায় হাউজফুল শো। যার ফলস্বরূপ খাঁ খাঁ করছে নন্দন চত্বর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন