Advertisment

রাজনীতিতে ভূতের উপস্থিতি: ভূতের ভবিষ্যত, ভবিষ্যতের ভূত এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অনীক দত্ত

আপাতত তাঁর ছবি ভবিষ্যতের ভূতের হলে ফেরার অপেক্ষা করছেন অনীক দত্ত, এমন সময়েই তিনি কথা বললেন এখন পর্যন্ত তাঁর সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক কাজটি নিয়ে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
aneek dutta

সিনেম্যাটিক স্বাধীনতা : অনীক দত্ত

১৬ ফেব্রুয়ারি, ছবিটা মুক্তির একদিন পরে কোনও ঘোষণা ছাড়াই কলকাতার সিনেমা হল থেকে তুলে নেওয়া হয় অনীক দত্তর কমেডি ছবি 'ভবিষ্যতের ভূত'। ছবিটার সঙ্গে রাজ্যের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজ্যের অবস্থা, গো-রাজনীতি এবং ডানপন্থী মতাদর্শ জড়িয়ে রয়েছে। এমনকী বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও খোঁচা দিতে পিছপা হয়নি। ১৫ মার্চ প্রযোজকরা আবেদন করেন, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সিনেমাটির উপর "অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা" জারি করেছে, যার জেরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, ''কোনও বাধা ছাড়াই'' ছবিটিকে হলে ফেরৎ আনতে হবে।

Advertisment

রায়ের পর ছবিটি ছোট শহরগুলিতে ফিরে আসে ঠিকই, কিন্তু শহর কলকাতায় ব্রাত্যই থাকে। এমতাবস্থায় শীর্ষ আদালতের পরের রায় আসে ২৫ মার্চ। রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়, যেহেতু সিবিএফসি ছবিটিকে ছাড়পত্র দিয়েছে, কোনোরকম বাধা ছাড়াই যাতে সিনেমা হলে ছবিটা দেখানো হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকেই।

এক সাক্ষাৎকারে ৫৮ বছরের পরিচালক-লেখক ছবি বানানোর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা বললেন। জানালেন, একটা ছবির প্রদর্শনী নিয়ে কলকাতায় তাঁর লড়াইয়ের কাহিনী।

কলকাতায় ছবির শো বাতিল হলো, আপনাকে কোনও সরকারি ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নি?

কোনও কারণ ছাড়াই প্রদর্শকরা (এক্সিবিটর) শোটা বাতিল করে দেন। এমনকী হাউসফুল শোয়ের টিকিটের মূল্যও ফেরৎ দিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং, এটা যে তাঁদের জন্যও ক্ষতির তা তো বোঝাই যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই প্রাথমিকভাবে জানতে পারি শো বাতিলের ঘটনা। দর্শক ও এক্সিবিটরদের মধ্যে ছোটঘোট গোলযোগের খবরও এসেছিল। একটা সময়ের পর টেকনিক্যাল কারণটাও সামনে আসে। যখন আমি সাউথ সিটি আইনক্সে যাই অভিনেতা কৌশিক সেনের সঙ্গে, আসল কারণটা জানতে, তখন জানা যায় 'উপরমহল' থেকে বলা হয়েছে। যদিও কোন নির্দিষ্ট নাম দেওয়া হয়নি, বারবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও। ৫ মার্চ, নয়ডার প্রযোজক কল্যাণময় চট্টোপাধ্যায় ও ইন্দিরা উন্নিয়র একটি পিটিশন ফাইল করেন সুপ্রিম কোর্টে।

কেন এই ছবিটা তৈরি করেছিলেন?

আমার জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই অরাজনৈতিক ছিলাম। অনেক পরে অনুধাবন করেছি যে অরাজনৈতিক বলে কিছু হয় না। সেটাও একটা রাজনৈতিক অবস্থান। তারপরেই, আমি রাজনীতিক বিষয়ের সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা করতে থাকি এবং দেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন, এমনকী বিদেশের পরিস্থিতিও, আমার উপর প্রভাব ফেলতে থাকে।

আমার মনে হয়, চারপাশে যা ঘটছে সেটা ছবিতে দেখানো হয়। আগের ছবির লেয়ার ভিন্ন ছিল। সেখানে রাজনৈতিক বক্তব্য আপাতভাবে ছিল না। আমার প্রথম ছবি ('ভূতের ভবিষ্যত', ২০১২) স্যাটায়ার ছিল। দ্বিতীয় ছবি ('আশ্চর্য প্রদীপ', ২০১৩) ছিল ডার্ক কমেডি, যার কেন্দ্রে ছিল ভোগবাদ, আর তৃতীয় ('মেঘনাদবধ রহস্য', ২০১৭) ছিল থ্রিলার ধর্মী ছবি, তবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস নির্ভর। পরে মনে হয়েছে, আমার বিষয়গুলো আরও সোজাসুজি বলা প্রয়োজন।

শোনা যায়, আপনি গতবছর ছবিটা তৈরির সময় থেকেই ঝামেলা চলছে।

বারবার ঝামেলাটা এসেছে আর গিয়েছে। প্রথমে বাঁধা ছিল যে 'ভবিষ্যতের ভূত' নাকি 'ভূতের ভবিষ্যত'-এর সিক্যুয়েল, এবং আমার সিক্যুয়েল লেখার অধিকার রয়েছে কিনা। 'ভবিষ্যতের ভূত' যদিও সিক্যুয়েল নয়, এবং শুধুমাত্র ভূতেদের নিয়েই ছবিটা তৈরি।

যে হেনস্থা আমি সহ্য করছি, তার একটা সম্ভাব্য কারণ থেকে যায়। ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া 'ভূতের ভবিষ্যত' আসাধারণ সাফল্য পায়। তখন সদ্য ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছ থেকেও অঢেল প্রশংসা পাই। এখনকার ক্ষমতাধীন সরকার সাধারণত সঙ্গত বিষয়ে সহযোগিতাই করে। 'ভবিষ্যতের ভূত'-এর শুটিংয়ের সময়েও অনেক আইনি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ছবিটা 'ভূতের ভবিষ্যত'-এর সিক্যুয়েল হিসেবে দাবী করে ইনজাংশন জারি করে। পরে সেটা মিটে যায়। ফিল্ম ফেডারেশনের তরফেও কিছু সমস্যা ছিল, যা রুলিং পার্টি লোকজনের হাতেই রয়েছে। আর হুমকি পেতে হয়েইছে।

অনেকে আবার মনে করছেন আর্ন্তজাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আপনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া পোস্টার নিয়ে যে কথা বলেছেন, তাতেই সমস্যা বেড়েছে।

কিন্তু আমার সেই বিবৃতিটা নিরীহ ছিল - অথবা অতটা নিদোর্ষও ছিল না, কারণ ভিড়ের মধ্যে উত্তেজনাও ছিল।

সেন্সর বোর্ডে সার্টিফিকেশনে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি?

না, আমরা ইউএ সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম। সিবিএফসি বোর্ডের কলকাতা অফিসে ছবিটা জমা দিয়েছিলাম। যেহেতু প্রযোজকরা নয়ডার ছিলেন, সে কারণে দিল্লি অফিস থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে অনেক খানা-খন্দ রয়েছে। আমি সরকারের সমালোচনা করিনি কিন্তু তারা যেসবের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেগুলো নিয়ে কথা বলেছি। কোনও রাজনৈতিক দলের নামও করিনি, কিন্তু ওই রেফারেন্সের উল্লেখ করেছি।

কেন আপনি স্পষ্টত রাজনৈতিক ছবি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন?

আমার ভীষণ দমবন্ধ লাগছিল। এরমকই বেশকিছু ভাবনা ছিল, কিন্তু সেগুলো এখন তৈরি করা ভিত্তিহীন মনে হয়েছিল। এই ছবিটা আমি আর উৎসব মুখোপাধ্যায় একসঙ্গে লিখি ২০১৭-তে, এবং ২০১৮-র শুরুতে শুটিং আরম্ভ হয়। আমি মনে করি ছবিটা যদি স্পষ্টত রাজনৈতিক না তৈরি করে কিছু রেফারেন্স দিতাম, এত কিছু হত না।

Read the full interview English 

tollywood Mamata Banerjee
Advertisment