বাংলা ছবি 'চৌরঙ্গী' (১৯৬৮) অবলম্বনে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরের ছবি 'শাহজাহান রিজেন্সি'। কাস্ট, গায়ক, সবকিছু নিয়ে প্রথম থেকেই চর্চায় এই ছবি। এবার মুক্তির আগে 'শাহজাহান রিজেন্সি' নিয়ে কথা বললেন ছবির অভিনেতা তথা নেপথ্য গায়ক অর্নিবাণ ভট্টাচার্য।
আপনার গাওয়া গানে তো নেটপাড়ায় ঝড় উঠেছে...
আমাকে মানুষজন জানিয়েছেন, বন্ধু-বান্ধবরা বলেছে। আমি অভিনয় করে কোনওদিন এত দ্রুত রিয়্যাকশন পাইনি। সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে এতদিনের কেরিয়ারে এই প্রথম এত মানুষ গান শুনেছেন।
তাহলে প্লেব্যাকে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছে।
না না! একেবারেই এমন কিছু ভাবি নি। গানের জন্য তো ট্রেনিং দরকার হয়। একটা গান হিট করল বলে ১৫ বছরের অভিনয়ের পাশে নতুন করে এসবের প্রশ্নই ওঠে না। আর গানের চর্চা ভয়ঙ্কর শক্ত চর্চা, এখন আর আলাদা করে হবে না।
রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
(সঙ্গীত পরিচালক) ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর বাড়ির স্টুডিয়োতেই গিয়েছিলাম। প্রথমেই তিনি বললেন, "তুই গা, আমি শুনছি।" শোনার পর বললেন, "গানের মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে শিখে গাওয়া মনে হচ্ছে, তুই অভিনেতা হিসাবে গানটা গেয়ে দেখ তো একবার।" শুটিং শুরুর আগেই গানটা রেকর্ড করেছি, কিন্তু আমি তখন যেহেতু চিত্রনাট্যটা পড়েছিলাম, নিজের চরিত্রটা জানতাম। সেই ধাঁচাটা মাথায় রেখে গাই। দ্বিতীয় টেকে ফাইনাল হয়েছিল।
'শাহজাহান রিজেন্সি' দর্শক কেন দেখবেন?
কারণ দর্শক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওপর ভরসা করে। ওর ছবির ব্যঞ্জনার সঙ্গে পরিচিত। ফলত আলাদা করে বলার কিছু নেই। আর অনেকদিন পরে আবির-পরমব্রত-স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় কাজ করছেন। এছাড়াও বাঙালির ছবিটা দেখার নেপথ্য কারণ হিসাবে অঞ্জন দত্ত, মমতাশঙ্কর, এই নামগুলোই যথেষ্ট।
এত চরিত্র করছেন, অথচ প্রত্যেকটা আলাদা। চরিত্র বাছাইয়ে কতটা রোমাঞ্চ রয়েছে?
প্রশ্নটা যে করা হল এটাই আমার কাছে বিশাল প্রাপ্তি। এই জন্যই তো আমার বিভিন্ন ধরনের চরিত্র নির্বাচন। এগুলোর মধ্যে অনেক চরিত্র আছে যেগুলো নিয়ে নেওয়া ঠিক হয়নি মনে হয়েছে। পুরোপুরি জাস্টিফাই করতে পারব না জেনেও নিয়ে নিই। কোনও দেখনদারি নয়, চেষ্টা করতে চাই।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগল?
খুবই ভাল অভিজ্ঞতা। আমি চেয়েছিলাম স্বস্তিকাদির সঙ্গে কাজ করতে। আসলে ভাল ভাল শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করলে নিজের কাজের মান বাড়ে। স্বস্তিকাদি থিয়েটার দেখতে এসেও বলত তোর সঙ্গে একটা কাজ কবে হবে? এখানে প্রেমিক-প্রেমিকার ভূমিকায় অভিনয় করলাম বটে, তবে অন্য কাজ করার ইচ্ছেটা থেকে গেল।
অর্নিবাণ সমালোচনা কতটা নিতে পারেন? কিংবা ভয় পান?
না, ভয় পাই না। মুশকিল হচ্ছে, ২০১৯ এ দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সবথেকে বড় সমালোচনার মাধ্যম তো সোশ্যাল মিডিয়া। আমার কাছেও টুকরো জিনিস ছিটকে আসে কখনও। যাঁদের সময়ে আমি জন্মাইনি, তাঁদের লেখা পড়ে জেনেছি সমালোচনার মান কাকে বলে। এখন সেটা ধ্বসে গেছে। কারণ সমালোচনা এখন প্রায় পার্ট টাইম চাকরির মতো।
আরও একটা কথা বলতে চাই, এই কয়েকদিনে আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি। যখন কোনও কিছু মানুষের ভাল লাগছে, সেটা জানানোর বিশেষণ কম তাঁর কাছে। খারাপ লাগলে সেখানে আক্রমনের ভাষার তীব্রতা ও জোগান বেশি। মানুষ কোনও কারণে বেজায় রেগে রয়েছেন।
আরও পড়ুন, আমার জন্যই সময় কম পড়ে: ঋতুপর্ণা
আপনার কাজের যেমন প্রশংসা হয় তেমন সমালোচনাও হচ্ছে। 'কিচ্ছু চাই নি আমি' নিয়ে মিম বেরিয়েছে, বিজ্ঞাপন নিয়ে তুলকালাম হয়েছে। রাগ হয় না?
প্রথমেই যেটা বলি, বিজ্ঞাপনের গান নিয়ে আক্রমনটা মিম ছিল না। আর মিম আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি। আমার মনে হয়, রুচীহীন হলেও মিম হলো নিঃশেষিত বাঙালির রসবোধের শেষ ধারক বাহক। নিম্নমানের হয় অনেক সময়, তবে সেটা রসিকতা। তাই মিমের বিরুদ্ধে আমি নই।
বিজ্ঞাপনের বিষয়টা হলো, বাঙালির ঐতিহ্যে ধাক্কা লেগেছে। তবে দর্শকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব এই কারণে যে ২০১৮ সালে আমি যা যা করেছি, তার মধ্যে সবথেকে বড় 'হিট' এই বিজ্ঞাপনটা।