কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায় তো এর আগেও অনেক ছবি করেছেন। ওঁর ছবিতে প্রথম সংগীত পরিচালনার জন্য দৃষ্টিকোণকে বেছে নেওয়ার কি কোনও নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে?
অনুপম - এর আগে কৌশিকদার ছবির একটা-দুটো গানে সংগীত পরিচালনার কাজ করলেও, সম্পূর্ণ ছবিতে সংগীত পরিচালনা আগে কখনও করিনি। ল্যাপটপ, রংমিলান্তির মতো ছবির জন্য কিছু প্রোমোশনাল কাজ করেছিলাম। এখানে পরিচালক কৌশিকদা যেহেতু নিজেই প্রস্তাব দিলেন, তাই না বলার প্রশ্নই ছিল না।
এ ছবির লক্ষ্মীটি গানটি তো প্রথমে পরিচালক নাকচ করেছিলেন?
অনুপম - কৌশিকদা আমার কাছে দু-বার এসেছিলেন গানের শপিং করতে। প্রথমবারে আমার দুঃখগুলো কাছিমের মতো গানটি ওঁর পছন্দ হয়। আরও কিছু গান নিয়ে কথাবার্তাও হয়, তবে লক্ষ্মীটি প্রথমবার শোনার পর ওঁর মনে ধরেনি। তখন অবশ্য সবে চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছিল। শ্যুটিংয়ের পরে ছবির এমন অনেক জায়গা বেরিয়ে আসে যেখানে মিউজিক দরকার। আমি তখন রিস্ক নিয়ে আগের দিনের শোনানো কিছু গান ফের শোনাই। এবারে লক্ষ্মীটি গানটা কৌশিকদার ভালো লেগে যায়।
এই যে গানের শপিংয়ের কথা বললেন, আপনার গানের দোকানে মোট কত গান আছে?
অনুপম - অসংখ্য গান তো আছেই, আবার আরও অনেক গান তৈরিও হচ্ছে। চাইলে অন্য কেউও আমার কাছে গান শপিংয়ের জন্য আসতে পারেন।
আপনার আগে থেকে তৈরি করে রাখা গান কোনও না কোনও ফিল্মে ঠিক খাপ খেয়ে যায়, এটা কী করে সম্ভব হচ্ছে?
অনুপম - সেটা বলা মুশকিল! তবে আমি বেশি গান লিখি সম্পর্ক নিয়ে। আর সম্পর্কের গান তো সব ছবিতেই কাজে লাগে। গান লিখি নিজের কথা ভেবেই, তবে ছবিতে ব্যবহার করার পর সে গান ছবির অংশ হয়ে ওঠে। এমন অনেক গান আছে যেগুলো কোন সিনেমায় কাজে লাগানো যায় সেটা ভাবছি। আমার তো ইউএফও নিয়েও গান আছে। কিন্তু স্পেস নিয়ে কেউ আর ছবি বানাচ্ছে কই? বিজ্ঞান নিয়েও গান আছে, কিন্তু সে বিষয় নিয়েও কোনও ছবি তো আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি না।
আরও পড়ুন :‘আমি আসবো ফিরে’- অঞ্জন দত্তের ফিরে আসার গল্প
দৃষ্টিকোণ, কণ্ঠ, উমা এতগুলো ছবির আলাদা আলাদা গান একসঙ্গে তৈরি করেন কোন জাদুতে?
অনুপম - আসলে আমার মধ্যে সুইচ আছে। আমি সময়মতো সেগুলো অন-অফ করতে পারি। কখনও শিবু মোড বা কখনও সৃজিত মোড। আবার প্রয়োজনমতো কৌশিক মোডে ফিরে আসতে পারি। এগুলো সব আমার এই ইন্টারন্যাল সুইচ দিয়েই সামলাই।
সংগীত পরিচালনা তো করছেনই, ছবি পরিচালনায় আসছেন কবে?
অনুপম - ইচ্ছে আছে, তবে ঠিক কী বলতে চাই বুঝে উঠতে পারিনি। যেদিন মনে হবে আমার বক্তব্যটা যথেষ্ট জোরালো, সেদিন নিশ্চয়ই বানাবো। আপাতত হাতে সময় নেই।
মানে অনুপম রায় কি এখন ভীষণ ব্যস্ত?
অনুপম - তা একটু ব্যস্ততা আছে। বেশ কয়েকটি ছবি লাইন আপ করা আছে। আসলে গান বানানো আমার পেশা। আমি গান তৈরি করি মনের আনন্দে।
অক্টোবর ছবি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কীরকম?
অনুপম - অক্টোবরে যে কাজ করব তা ভাবতেই পারিনি। আমি জানতাম শান্তনুদা ছবিটাতে কাজ করছে। কিন্তু সুজিতদা আমায় এত ভালবাসে, যে আমায় বলে গান তৈরি করতে। তবে গানগুলো ছবিতে নেই। কিন্তু যে সুরটা তৈরি করেছিলাম তাতে রাহাত ফতে আলি খাঁ গাইলে ভালো লাগবে মনে হল। ভাবতেই পারিনি দক্ষিণ কলকাতায় বসে সুর বানাবো আর রাহাত ফতে আলি খাঁ গাইবেন। পুরোটাই আমার কাছে একটা অভিজ্ঞতা।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কীরকম?
অনুপম - কৌশিকদার সঙ্গে কাজ করে মজা আছে। কোন মূহুর্ত ডাল হতে দেয় না। আমরা আগেও একটা ছবি করেছি, ধূমকেতু। ছবিটা এখনো রিলিজ হয়নি। যখনই সেটার কথা আলোচনা হয়, জিজ্ঞাসা করি এই গানগুলোর কী হবে? অন্য কোথাও দিয়ে দিই। কৌশিকদা বলে আর কিছুদিন দেখ। আসলে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে গান থাকল কি না থাকল, তাতে কিছু এসে যায় না। তবে দৃষ্টিকোণ অনন্য।
পরিচালক ছবির সাউন্ড নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে, এ নিয়ে কাজের সময়ে কোনও অসুবিধে হয়নি?
অনুপম - না, তেমন কোনও অসুবিধে হয়নি।
সেরকম হল না কেন? আপনি নিজেই খুঁতখুঁতে বলে?
অনুপম - আরে না না! আসলে কৌশিকদা জানে আমি কী করতে পারি আর আমিও জানি কৌশিকদা কী চাইতে পারে। শুধু একটা গানের দৃশ্য ছিল, যেখানে বাঁশিওয়ালা বাঁশি বাজাচ্ছে। কিন্তু গানে ওই সময়টায় কোনও বাঁশি রেকর্ড করা ছিল না। কৌশিকদা বলার পরে ওই গানটায় বাঁশির আবহ জুড়েছিলাম।
সবশেষে, দৃষ্টিকোণ নিয়ে কী বলবেন?
অনুপম - দৃষ্টিকোণ আমার জীবনের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছবি। প্রাক্তন ছবিতে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার এত সফল একটা গানের পর আবার সেই জনপ্রিয় জুটিকে নিয়ে গান তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং তো ছিলই। আশা করব, শ্রোতারা নিরাশ হননি।