আজ রিলিজ করেছে 'এটা আমাদের গল্প', সেই ছবিতে এই প্রথম জুটি বেঁধে কাজ করছেন অপরাজিতা এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। একদম ভিন্ন চরিত্র। বয়সের এক বিস্তর ফারাক দেখানো হয়েছে। তাঁর সঙ্গে রয়েছে নানা অজানা সব তথ্য! সেই গল্পের ঝুলিই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে উজাড় করলেন অপরাজিতা...
অপু অপা জুটির কেমিস্ট্রি কাজ করবে বলে মনে হয়?
অপুর সঙ্গে তো আমি অনেক কাজ করেছি। এতবছর এক আকাশ করেছি, গয়না বাক্স করেছি। অনেক কাজ করেছি। কিন্তু জুটি হিসেবে এই প্রথম। ওর সঙ্গে আমার একটাই বিষয় কম্ফার্টেবল ফিল করি। কিছু অভিনেতা আছে যাদের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভাল লাগে তাঁর মধ্যে শাশ্বত একজন।
দেবদূতদার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করছ?
হ্যাঁ! আর বলো না...আমি আসলে এই চরিত্রটা করতেই চাই নি তো। সত্যিই বলছি। এই যে ভূমিকায় আমি অভিনয় করেছি, আজ থেকে ১৫-২০ বছর পরেও পারতাম না অভিনয় করতে। কিন্তু মানসী তো নাছোড়বান্দা। তোকে করতেই হবে। আমি যেহেতু শুনলাম যে অপু করছে তাই রাজি হলাম। এবার বিষয়টা হচ্ছে...এই যে চরিত্রটা, এখানে দেখা যাচ্ছে যে অনেক ছোটবেলায় তাঁর বিয়ে হয়েছে। তাঁর সব স্বপ্ন, দায়িত্ব সবকিছুই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে, বাসনা গুলোর সব মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। দুজনের বয়সের তুলনায় খুব ম্যাচিওর চরিত্র।
দেবদূতদা তো সমবয়সী, তাঁর মায়ের চরিত্র... হাসি পায় নি?
ভীষণ হেসেছি, ভীষণ। প্রচুর মজা করেছি এই নিয়ে। দেবদূত আমার থেকে বয়সে বড়! ভাবা যায়? আমি আর দেবদূত তো হিরো হিরোইন অভিনয় করেছি। আমার যে কী অবস্থা হত, বলে বোঝাতে পারব না।
এই যে বয়স্ক মানুষের লুক সেট হত, তখন থেকেই কি মানসিক প্রস্তুতি নিতে?
কী জানো তো? এই মেকআপ আমার নিজের করা। কেউ বিশ্বাস করবে না। কেউ হাত দেয় নি। আমি সবসময় মেকআপ নিজে করি। শুধু চুলটা একজন হেয়ার ড্রেসার বেঁধে দিয়েছিল এটুকুই। ব্যাস! হ্যাঁ, তবে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে যদি সোমনাথ কুন্ডু থাকে তাহলে কিন্তু আমি হাত দিই না, বা পারদর্শিতা দেখাই না। বাকি সব নিজে করি। আর একারণেই আমি চরিত্রে সহজে ঢুকতে পারি। আমার মুখটা বোঝা খুব ডিফিকাল্ট।
প্রেমে পড়ার বয়স হয়? অপরাজিতার কী মনে হয়?
একদম হয় না। প্রেমে পড়ার কোনও বয়স নেই। কিন্তু যেটা হয়, একটা মানুষের যত বয়স হয় তত তাঁর অপশন কমে যেতে থাকে। একটা ২০ বছরের মেয়েকে যেভাবে ছেলেরা পছন্দ করতে পারে, একজন ৫০ বছরের ছেলেকে সবাই পছন্দ করে না। এটা সমাজের বাস্তব। সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বেড়ে যায়। আমি যদি, এখন একটা ৫০ বছর ছেলের প্রেমে পড়তে চাই ধর, তাহলে সে তো সিঙ্গেল থাকবে না!
সমাজ কী বলবে? এটা নিয়ে ভাবার সময় আছে...?
দেখো, আমরা তো সমাজ বদ্ধ জীব। আমায় তাঁদের নিয়ে ভাবতে হয়। পরবর্তী জেনারেশন নিয়ে ভাবতে হয়। আমার যেহেতু একটা বৃহত্তর পরিবার আছে, সবসময় মাথায় রাখতে হয় যে উত্তরসূরি যেন আমার ভাল দিন, ভাল গুনটা জানে। আমার জন্য যেন তাঁর মাথা হেঁট না হয়। বাহ্যিক নিয়ে ভাবি না। এমন ঘটনা ঘটাতে চাই না, যাতে পরিবারের মত নিচু না হয়।
পরিবারের মানুষকে তাহলে কিভাবে সামলাও?
আমি চেষ্টা করি, তারা যেন শিখতে পারে। কিছু জিনিষ শেখানোর চেষ্টা করি। ডিসিপ্লিন রাখতে হয় পরিবারে। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা খুব একটা অর্থ রাখে না। এবার দেখ, যেটা বিষয় সেটা হল.. রাতের খাবারটা আমরা একসঙ্গে খাই। চেষ্টা করি যেন আমার পরিবারের কোনও ছেলেমেয়ে রাত ১১টার পর বাইরে না থাকে। কাজ থাকে, তখন ১টা ২টো ঠিক আছে। কিন্তু, অযাচিত রাত করে বাইরে বেরোনো আমার একদম পছন্দ না। সেটা আমি নিজেও করি না। দরজায় আর তালা পরে গেলে কিন্তু মুশকিল। তারপর ধরো, নতুন বছর বা পুজোয় ট্র্যাডিশনাল পোশাক পরা, বড়দের প্রণাম করা...এগুলো একটু মেনে চলা ভাল।
ভাল থাকার সংজ্ঞা তোমার কাছে ঠিক কি?
ভাল থাকার জন্য একটা ভাল কপাল হওয়া উচিত। ভাল থাকতে সবাই চায়। একটা ভাল ছেলেকে বিয়ে করলাম তারপর দেখলাম সে একদম পচা, তাঁর মানে আমার কপাল খারাপ। তাই ভাল থাকার জন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি অনেকটাই কপাল দরকার।
এতবছর সংসার করলে, কাছের মানুষ দোষগুণ এগুলো হিসেবে করলে?
হ্যাঁ, প্রায় ২৮ বছর! দোষ নেই। কিন্তু খুব রিজিট। আমাদের প্রথম দিন থেকে খুব ভাল বন্ধুত্ব। সত্যি বলতে গেলে, কোনোদিন আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয় না। মান অভিমান হয়, অনেক মতানৈক্য হতে পারে কিন্তু, দুজন দুজনের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে নিই। আমি যেটা বলি, উনি খুব সহজে মেনে নেন। উল্টোটাও খুব একইরকম।
মানসী দি পরিচালক হিসেবে কেমন?
আমার এই শুটিংটা করতে গিয়ে মারামারি হাতাহাতি হয় আরকি। ও ভীষণ খুঁতখুঁতে। পরিচালক একভাবে দেখে, আর অভিনেতা আরেকভাবে। মানু দারুণ অভিনেত্রী। অপর্ণা সেনের ক্ষেত্রেও হত। কারণ, পরিচালক গল্প লিখেছেন, ভেবেছেন। মানসী একভাবে দেখেছে। ও সেটা আমার মধ্যে দেখতে চাইছে। এবার আমি সেটা করব না। আমি আমার মত করব। আমি ওকে সোজা বলেছি - আমি তোর থেকে অনেক ভাল অভিনেত্রী...( হাসি ) আর ও বলছে তুই যাই হোস না কেন? আমি তো পরিচালক। আমায় এসে এসে খালি বলছে, অপা! এটা হচ্ছে না জানিস তো.. আমি বলে দিয়েছি, মুখটা ঘষে দেব জানিস! বাড়ি চলে যাব।
পুরোনো মানুষগুলোর সঙ্গে যখন কাজ করো, অতীতের স্মৃতি গুলো খুঁজে পাও?
পুরোনো গল্প গুলোই ফিরে ফিরে আসে। এখন আর হয় না জানিস তো! একদম হয় না। কারণ, একটা কিছু বলতে যাব, সঙ্গে সঙ্গে বলছে শট রেডি। কাজের পরিবেশটা অন্য হয়ে গিয়েছে। আমরা প্রত্যেকে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আগে তো আউটডোর হত। এখন আর হয় না।
সম্পর্কের কোন ধাপে সেটা আমার থেকে আমাদের হয়?
সম্পর্কটা যদি কেউ দায়িত্ব হিসেবে নিতে পারে তাহলেই কিন্তু ভাল থাকা যায়। আর যদি কেউ মনে করে, এই সম্পর্কটা থেকে আমি অনেক কিছু শিখব, অনেককিছু পাব, সমৃদ্ধ হবে- তাহলে কিন্তু ভাল থাকা যায়।