পড়ন্ত বিকেলের আলোয় কলকাতার এক অভিজাত ক্লাবে যেন তারকার হাট। বললে বাড়িয়ে বলা হবে না, দু'জনে যখন পাশাপাশি হেঁটে মঞ্চে এসে বসলেন, যেন একঝলকে পুরোনো স্মৃতি ফিরে এল দর্শকাসনে বসা বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকেরই। হওয়ার তো কথাই, কারণ এই দু'জনের নাম অপর্ণা সেন এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যাঁরা শেষবার একসঙ্গে কাজ করেছিলেন অপর্ণারই পরিচালনায় 'পারমিতার একদিন' ছবিতে। সেই ছবির ১৮ বছর পার হয়ে গিয়েছে শুনে কিঞ্চিৎ অবাকই হলেন অপর্ণা সেন।
একে অপরের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথায় অপর্ণা সেন বললেন, "ওঁর কথা বলব না নিজের কথা বলছি, ওঁর সঙ্গে কাজ করতে আমার সমসময়ই একটা বাড়তি আগ্রহ থাকে। ভাল একজন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার আলাদা আনন্দ রয়েছে। পথ চেয়ে থাকি কখন আবার কাজ করতে পারব।" তবে জুটি শব্দটায় আপত্তি রয়েছে অভিনেত্রী-পরিচালিকার। 'জুটি' কথাটার না এখন কোনও মানে হয় না, বললেন তিনি। "দু'জনেরই অনেকটা বয়স হয়ে গিয়েছে, প্রথমদিকে মনে হত এটা। ইদানীং গুণী অভিনেতার সঙ্গে কাজ করব, এটাই চাওয়ার থাকে," বললেন অপর্ণা।
আরও পড়ুন, একঝলকে অপর্ণা-সৌমিত্রর ‘বসু পরিবার’
অপর্ণার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি ভাললাগা থাকে সৌমিত্ররও। তিনি বললেন, "ওঁর মতো একজন সচেতন, সংবেদনশীল মানুষ অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে তাঁর ব্যক্তিত্বটাও প্রকাশ করেন, চরিত্রের সেই দিকটাও তো ফুটে ওঠে। এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, অনেকে সেটা পারে না। রীনার সঙ্গে কাজ করি বা কাজ দেখি, যেন একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়। রীনার প্রথম ছবিও তো আমারই সঙ্গে।"
পরিচালিকা ও অভিনেত্রী অপর্ণার কোন সত্ত্বাকে এগিয়ে রাখবেন? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বললেন, "উত্তর যদি আমার জানা থাকত আমি বলতাম! দুই হিসেবেই তাঁকে দেখতে চাই। তবে হ্যাঁ, একটি মানুষের গুণপনার তো একটা গমন থাকে, আর একটা সমুদ্রাভিমুখ থাকে, সেই রকমই পরিচালনাটা তো শুরু হয়েছিল অভিনয় দিয়ে। সেটাকে আমি কী করে ভুলে যাই?"
আরও পড়ুন, গল্প বলার চাহিদায় ঘরই যখন মঞ্চ
তবে নিজে কোনদিন পরিচালনাতে আসতে চাননা 'ফেলুদা'। অপর্ণা সেন তো বলেই বসলেন, "একথাটা আমি কবে থেকে বলছি। আমি জানি ওঁর সব ছবিতে অভিনয় করতে ভাল লাগে না। করতে হয়, কারণ এটাই পেশা। তার মধ্যে আনন্দ পাওয়ার ভাগটা তো সবসময় থাকে না। সেখানে মনে হয়, উনি নিজের লেখা গল্প দিয়ে ছবি তৈরি করলে সেটা পাওনা হত। উনি যে করেন নি তা নয়, আমি তো দেখেছি ওঁর 'স্ত্রীর পত্র'। প্রত্যেকবার যখন দেখা হয় একবার করে বলি। কিন্তু আমাকে পাত্তাই দেন না। একেবারে উড়িয়ে দেন। কী বলব বলো?"