ছোটবেলা থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন এমন মানুষ কম নেই। তারকাদের মধ্যে যারা অনেক ছোট থেকেই টলিপাড়ার নানা চরিত্রে নিজেদের গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেই তালিকায় রয়েছেন অরিত্র দত্ত বণিক। তাঁর কথা মনে আসতেই চোখের সামনে ভেসে আসে রাজ চক্রবর্তীর চিরদিনই তুমি যে আমারের গ্যারেজের সেই ছোট ছেলেটা, কিংবা দেবের পরাণ যায় জ্বলিয়া রে ছবির 'ছোটে মিঞা'।
এতগুলো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়েছেন তিনি। চাইল্ড আর্টিস্ট হিসেবে শুরু করেছিলেন কাজ। আজ যখন এতবছরের যাত্রা ঘুরে দেখেন, তখন কী কী কথা মনে পড়ে তাঁর? কিভাবে নিজেকে শুটিং ফ্লোরে খুঁজে পেতেন তখন? কীভাবে তারকাদের সঙ্গে কাজ করতেন? অরিত্রর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
ছোটবেলায় শুটিং ফ্লোর...
আসলে, আমি অনেক ছোট থেকে নানা প্রোগ্রামে যেতাম আজকের দিনে। গ্রামে গঞ্জে অনেক শো হত, সেগুলোতে যেতাম। আর আমি এত ছোটবেলায় এসেছিলাম অভিনয় জগতে যে আলাদা করে সেটা যে আমার কাজের জায়গা আমি বুঝতাম না। আমি ভাবতাম ওটা একটা খেলার জায়গা। অভিনয়ের জন্য যে ওটা একটা আলাদা জায়গা, সেটা আমার ৪/৫ বছর বয়সে বোঝার কথা না। সব থেকে বড় কথা আমার চারপাশে যে কলাকুশলীরা থাকতেন, তারা কোনদিন আমাকে বয়সে ছোট বলে হেয় করেননি। আমার মনে আছে তখন একটি অ্যাওয়ার্ড হতো টেলি সম্মান বলে। সেখানে শিশু অভিনেতা বিভাগে অনেকেই মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু আমি সেবছর একটি নির্দিষ্ট সিরিয়ালের জন্য, বড়দের সেরা অভিনেতা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছিলাম। ইন্টারেস্টিং বিষয় এখানেই ছিল, যে শিশু অভিনেতা হিসেবে নয়, বরং বড়দের সঙ্গে একদম দলে লড়িয়ে, তারপর সেরা অভিনেতা পুরস্কারটা আমাকে দেওয়া হয়েছিল।
ড্যান্স বাংলা ড্যান্স এর ফ্লোরে মজা...
কিন্তু চিলড্রেন্স ডে উপলক্ষে, সব থেকে বেশি যে জায়গার কথা আমার মনে পড়ে সেটা হচ্ছে ডান্স বাংলা ডান্সের ফ্লোর। দীর্ঘ চার পাঁচ বছর আমি এই শো সঞ্চালনা করেছি। কিন্তু এর থেকে মজা আমি কোন শোয়ে পাইনি। কারণ তখন সেই ফ্লোরের সবাই আমার বয়সী, সবাই আমার মতই সাইজে ছোট। আমরা অদ্ভুত আনন্দ করতাম। আর বলতে নেই, মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী মহাশয়, উনি তখন আমাদের পুরো বন্ধু সম ছিলেন। এখন এসে বুঝতে পারি যে আমরা তখন মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ছিলাম। তখন ভাবতাম উনি শুধু আমাদের বন্ধু। উনি যেভাবে আমাদের বয়সে নেমে এসে মজা আনন্দ করতেন, সুপারস্টার মানুষকে ফিল করা আমাদের সাধ্য ছিল না। আমরা ভাবতাম, আমাদেরই বয়সী হবে, দেখতে একটু লম্বা এই আরকি। সারাদিন খেলাধুলা-হুলোর দৌরাত্ম, এসব লেগেই থাকত। আমি কিন্তু এখান থেকে ইন্ডাস্ট্রির বিবর্তনটা দেখেছিলাম। আমার প্রাপ্তি এটাই, যে আমায় ছোট বলে সরিয়ে রাখা হয়নি।
ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যাবর্তন...
যে সময়টা আমরা কাজ করেছিলাম, তখন আমরা এক ধরনের পরিচালক পেয়েছি। যারা আমার গুরু ছিলেন মানে যীশু দাশগুপ্ত, দেবাংশু সেনগুপ্ত, তাদের পরে রাজ চক্রবর্তী বা অভিমুন্যদাদের টিম। যেখানেই কোন গ্রুমিং সেশন হত, আমাকে নিজের মত থাকতে দেওয়া হত। এখন একটা জিনিস আমায় খুব ভাবায়। এখনকার দিনে অনেক বাচ্চাদের মধ্যে যারা অভিনয় করেন তাঁদের মধ্যে দেখেছি, আমাদের সময় কি হতো আমি হয়তো একটা বস্তির ছেলেএর পাঠ করছি, সেখানে আমি উল্টোদিকে মানুষটার সঙ্গে সম্পূর্ণ অভিনয় করছি। আমার কিন্তু অভিনয় শেষ হলে উল্টো দিকে মানুষের প্রতি রাগ খুব কিছুই থাকত না। এই বোঝানো হয়েছিল এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ওটা আমি শুধু পারফর্ম করছি। কিন্তু এখন সেই গল্প একদম পাল্টে গেছে। এটা বাচ্চাদের দোষ নয়। এখন অনেকে তো দেখা যায় দুটো বাচ্চা হয়ত অভিনয় করছে তাদের মধ্যে একটি এমন সিকোয়েন্স দেখানো হয়েছে, যেটি একটু অন্যরকম, সেক্ষেত্রে বাবামায়েরা কিন্তু অফ ক্যামেরাও সেই ধরনের সমস্যাকে কন্টিনিউ করেন। অনেক বাচ্চাদের মধ্যে ঢুকে যায়, যে হয়তো আমাদের বন্ধু নয়।
ছিল না কম্পিটিশন...
আমার একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল, যে আমার সময় সেরকম করে প্রতিযোগিতা ছিল না। সঙ্গে তাথৈ সঞ্চালনা করত ডান্স বাংলা ডান্স। আমার জীবনে এই ডিজিটাল মিডিয়া, এক বিরাট রাস্তা করে দিয়েছিল। আমার কম্পিটিশন ছিল না। আমি খুব সহজেই অনেক সুযোগ পেয়ে যেতাম। পরিবারের কেউ সিনেমার সঙ্গে জড়িত ছিল না। মনে আছে তখন কোন সিনেমা তৈরি হলে, একবার হলেও শিশুশিল্পী হিসেবে আমার কাছে ফোন আসতো, আমার কথা উঠত।
'বড়ে মিঞা' দেবের সঙ্গে আলাপচারিতায়...
পরান যায় জ্বলিয়ার এর সময়, যখন দেবদার সঙ্গে কাজ করছি, তখন আমি বেশিরভাগ সময় দেবদার ঘরেই থাকতাম। আর দেবদা ডাম্বেলের জায়গায় আমাকে তুলে নিয়ে বাইসেপ মারতো। আমি বুঝতেই পারিনি যে আমি সুপারস্টারের সাথে কাজ করছি। আমার কাছে দেব ছিল দাদার মত। সিনেমার শুটিং আমরা বুঝতেই পারতাম না কারণ তার আগে প্রচন্ড ওয়ার্কশপ হতো। যেটা এখন অনেকটাই মেকানিক্যাল হয়ে গেছে। দেবদার সঙ্গে আমার যা সম্পর্ক আমি খোলাখুলি বলতে পারি যে দেবদাকে আমি পলিটিশিয়ান হিসেবে দেখতে চাই না। আমার চূড়ান্ত আপত্তি আছে দেবকে রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে। আমার মাঝেমধ্যে যখন দেবদার সঙ্গে কথা হয় সেটা একদম, ব্যক্তিগত স্তরেই হয়। কিছুদিন আগেও মনে হাতে চোট পেয়েছিল তখন আমি দেবদা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে হাতে কী হয়েছে? দেবদার সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে কোনরকম আলোচনা আমার একদমই ভালো লাগেনা।