Arpita Chatterjee, Leela, Apu Trilogy: 'অপুর সংসার' ছবির কাস্টিংপর্বে 'লীলা'-কে ঠিকই খুঁজে পেয়েছিলেন সত্যজিৎ কিন্তু তাঁকে পর্দায় নিয়ে আসতে পারেননি। সত্যজিৎকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন সেই নারী, বিশেষ কিছু পারিবারিক কারণে। কিন্তু শুধু 'অপুর সংসার'-এ নয়, 'অপরাজিত' ছবিতেও লীলা অনুপস্থিত। অথচ 'অপরাজিত' উপন্য়াসের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে লীলা। তাকে বলা যায়, অপুর জীবনের প্রথম নারী। সেই সম্পর্ক কতকটা বন্ধুত্বের, কতকটা মুগ্ধতার আবার কতক প্রেমেরও বটে। লীলাকে অপু প্রথম দেখে কৈশোরে, বেনারসে। সখ্যতা বাড়ে এবং কলকাতায় আসার পরেও থেকে যায় সেই আলাপচারিতা। বিভূতিভূষণ অনুরাগীরা, যাঁরা সত্যজিতের অপু ট্রিলজিরও ভক্ত, তাঁদের কাছে বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে অধরা মাধুরী হয়েই রয়ে গিয়েছে এই অপূর্ব চরিত্রটি। সেই অধরাকেই ধরতে চাইছেন শুভ্রজিৎ মিত্র তাঁর 'অভিযাত্রিক' ছবিতে। আর সেই ছবিতে, পর্দায় লীলা হয়ে ফুটে উঠবেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
ছবির শ্যুটিং শুরু হবে জুলাইয়ের শেষ দিকে। গত মাসেই ছবির কলাকুশলীদের লুকটেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। দর্শকের সামনে এই প্রথম আসবে লীলা। তবে সেই লীলার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় নেই। লীলা এখানে মধ্যযৌবনা, অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এসে সে দাঁড়াবে দর্শক ও অপুর সামনে। উপন্যাসের বালিকা বা তরুণী নয়, মুগ্ধ পাঠকের কল্পনায়, টাইম লিপ ঘটে যাওয়া, অন্য় এক লীলা-কে তুলে ধরতে চান শুভ্রজিৎ।
আরও পড়ুন: তাঁর প্রতিদিনই ‘মাদার্স ডে’, রচনা জানালেন কেন ছবি করছেন না তিনি
ঠিক কীভাবে এই চরিত্রকে দেখছেন অর্পিতা?
''খুবই ইনটেন্স ক্য়ারেক্টার। যখন আমরা দেখছি লীলা-কে, যে পরিস্থিতিতে দেখছি, সে তখন তার জীবনের অনেকগুলো স্তর পেরিয়ে এসেছে। তাই চরিত্রের মধ্যে, ব্য়াক অফ দ্য মাইন্ড, সেই স্তরগুলো থাকবে'', বলে চলেন অর্পিতা, ''পর্দায় যখন দর্শক কোনও চরিত্রকে দেখছেন, তার ব্যাকস্টোরিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চরিত্রের মধ্যে যেন তার ফেলে আসা জীবনের ছাপটা থাকে। অভিনয়ের সময়ে আমি এই বিষয়টাতে খুবই জোর দিই। লীলা-র জীবনটা কিন্তু সহজ, হ্যাপি গো লাকি নয়। ওই সময়ে দাঁড়িয়ে লীলা কিন্তু খুবই আধুনিকমনস্ক ছিল। তার ভাবনাচিন্তা, যেভাবে সে তার ব্য়ক্তিগত জীবন, বিবাহিত জীবন কাটিয়েছে... ওটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি নিজেও খুবই মুক্ত মনের মানুষ। আমি বলব না আমার কোনও ইনহিবিশন নেই কিন্তু অনেক কম ইনহিবিশন। আমি খুবই স্বচ্ছ থাকতে পছন্দ করি, সবক্ষেত্রে। মানুষ কী বলবে, সমাজ কী বলবে, সেই নিয়ে আমি ভাবি না। এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে অনেক মেয়েই আমার মতো করে ভাবছে বা ভাবে কিন্তু সেই সময়ে দাঁড়িয়ে লীলার আধুনিকমনস্কতা আমাকে মুগ্ধ করে।''
এই মুগ্ধতা শুধুমাত্র অভিনেত্রীর নয়, সব পাঠকেরই। লীলা এমনই একটি চরিত্র যা তিরিশ-চল্লিশের দশকের আধুনিক বাঙালি নারীসত্তাকে তার শরীরে-মননে ধারণ করে রয়েছে। তার আভিজাত্যের ঘেরাটোপের মধ্য়ে সুপ্ত রয়ে যায় অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়তা। আবার অপুকে ভালবেসে ফেলেও সে কখনও তার চিরাচরিত সামাজিক সংস্কার থেকে বেরতে পারে না। সে যেন অনেকটা ডিকেন্সের 'এস্টেলা'। 'গ্রেট এক্সপেক্টেশনস' উপন্যাসে পিপ যেভাবে দেখে এস্টেলাকে, অপু যেন অনেকটা তেমন করেই দেখেছে লীলাকে। তবে এস্টেলা ও লীলার মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। তার মধ্যে এস্টেলার ঔদাসীন্য নেই, স্ববিরোধিতা নেই কিন্তু দ্বিধা আছে। লীলার সাজ, তার হাতের সরু সোনার প্লেন বালা, তরুণী লীলার পরিশীলন-- সবকিছুই যেন অন্য মাত্রার, যে মাত্রায় অপু কোনওদিন পৌঁছবে না। আবার উল্টোটাও সত্যি-- অপুর মাত্রাকে কোনওদিনই পুরোপুরি স্পর্শ করতে পারবে না লীলা।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে টেলিপর্দার পাঁচটি উল্লেখযোগ্য় কাজ
সাহিত্যের এই সূক্ষ্ম অনুভূতিপ্রবণতাকে চিত্রনাট্যে ধরে ফেলা যতটা কঠিন, ততটাই কঠিন অভিনেত্রীর পক্ষে সেই সূক্ষ্ম বিমূর্ততাকে দর্শকের কাছে মূর্ত করে তোলা। এই চরিত্রচিত্রণ খুব সহজ হবে না। ঠিক সেই কারণেই অর্পিতা চট্টোপাধ্য়ায়ের মতো দক্ষ অভিনেত্রীকে প্রয়োজন। এবছর বেশ কয়েকটি পর্যায়ে এই ছবির শ্য়ুটিং হবে। সম্ভবত আগামী বছরেই মুক্তি পাবে এই ছবি। ততদিন আরও গাঢ়, আরও তীব্র হতে থাকুক লীলা-র জন্য় দর্শকের অপেক্ষা।