Bengali Television Industry Payment Issue: দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-র পাঁচটি ধারাবাহিকের ইউনিটের শিল্পী-কলাকুশলীদের যে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে, সেই টাকা উদ্ধারের জন্য় অত্যন্ত সচেষ্ট শিল্পীদের সংগঠন আর্টিস্টস ফোরাম। কিন্তু বার বার একটি জায়গায় এসে আটকে যাচ্ছে এই প্রক্রিয়া এবং তা হল নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা সংক্ষেপে এনওসি। আর্টিস্টস ফোরাম সূত্রের খবর, দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার পক্ষ থেকে এই এনওসি সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেলগুলিতে পাঠালেই সরাসরি শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের পেমেন্ট করে দেবে চ্য়ানেল, এমনটাই আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে।
কিন্তু দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-র পক্ষ থেকে কে এনওসি দেবেন, সেই নিয়ে ঘোর জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ফোরামের দাবি, করপোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-র সাইনিং অথরিটি তথা ডিরেক্টর অরিন্দম পাল ও অদিতি রায়। সেখানে রানা সরকারের কোনও নাম নেই। তাই এঁরা এনওসি দিয়ে দিলেই সব সমস্যা মিটে যায়।
আরও পড়ুন: Bengali Television Industry Payment Issues: মধ্যরাতেই প্রসেনজিৎকে চিঠি? সোশ্য়াল মিডিয়ায় ছড়াল রানা সরকারের ইমেল
গতকাল ২৬ মে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে দেওয়া একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে অদিতি রায় জানান যে তিনি মার্চ মাসের গোড়াতেই দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগের পরে তিনি ওই কোম্পানি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে যুক্ত থাকতে পারেন না। এই মর্মে ওই কোম্পানি থেকে সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেলগুলিতে ইতিমধ্য়েই আইনি মেল পাঠানো হয়েছে, এমনটাও জানান অদিতি। অরিন্দম পালও সেই কথাই জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে।
ইতিমধ্য়ে রানা সরকার আর্টিস্টস ফোরাম ও ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়কে মেল করে জানিয়েছেন যে যদি তাঁর পক্ষ থেকে এনওসি দিয়ে দিলেই সব সমস্য়া মিটে যায়, তবে তিনি দ্রুত তা পাঠিয়ে দেবেন সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেলগুলিকে। তার পরে শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের পেমেন্টের কোনও দায়ভার তাঁর থাকবে না। সেই দায় সরাসরি চলে যাবে চ্য়ানেলের কাছে কারণ তিনি নিজে ওই সব শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের প্রাপ্য পারিশ্রমিকের টাকা এখনও চ্য়ানেলের থেকে পাননি। তাই এনওসি দিয়ে দেওয়ার অর্থ চ্য়ানেল আর প্রযোজকের মাধ্যমে নয়, সরাসরিই পেমেন্ট করবে শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের।
আরও পড়ুন: Bengali Television Industry Payment Issues: ‘পদত্য়াগের পর আমি দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার কেউ নই’: অদিতি রায়
কিন্তু ফোরাম রানা সরকারের এই এনওসি মানতে নারাজ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ফোরামের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, পেমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ক সমস্যা সমাধানের জন্য যে কোর কমিটি গঠিত হয়েছে আর্টিস্টস ফোরামে এবং ফোরামের এগজিকিউটিভ বডির যে সদস্যরা রয়েছেন, তাঁরা এই মেলটিকে কোনও গুরুত্বই দিচ্ছেন না। কারণ তাঁদের বক্তব্য, করপোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির স্টেটাস এখনও অ্য়াক্টিভ এবং সেখানে অরিন্দম পাল ও অদিতি রায়ের নামই রয়েছে সাইনিং অথরিটি হিসেবে। রানা সরকার ওই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার কিন্তু সাইনিং অথরিটি নন। তাই রানা সরকার এনওসি দিলে তার ভিত্তিতে চ্য়ানেল পেমেন্ট দিতে হয়তো পারবে না, এমনটাই আশঙ্কা ফোরামের।
করপোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের ডেটাবেসে দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া কোম্পানির বর্তমান ডিরেক্টরদের নাম ও তথ্যাবলী। ছবি সৌজন্য: আর্টিস্টস ফোরামের বিশ্বস্ত সূত্র
অদিতি রায় এই বিষয়ে তাঁর সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে তিনি পদত্যাগ করার পরেও তাঁর নামটি রয়ে গিয়েছে অফিসিয়াল ডকুমেন্টস-এ। তাঁর নামটি মুছে দেওয়ার জন্য তিনি বার বার অনুরোধ করেছেন দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-কে কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। অন্যদিকে, ফোরামের বিশ্বস্ত সূত্রের বক্তব্য, অদিতি রায় ও অরিন্দম পাল মার্চ মাসে পদত্যাগ করেছেন কি না সেই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ ফোরামের কাছে যা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, সেই অনুযায়ী, গত এপ্রিলেও অদিতি রায় ও অরিন্দম পাল কোম্পানির কিছু অফিসিয়াল ডকুমেন্টে সই করেছেন।
কিন্তু মুশকিল হল দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া বলতে ঠিক কোন কোন ব্যক্তিকে বোঝায় এই মুহূর্তে সেই নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যতম শেয়ারহোল্ডার অবশ্য়ই রানা সরকার। কিন্তু ফোরামের বিশ্বস্ত সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়েছে যে কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরস বডি থেকে ২০১৬ সালেই সরে গিয়েছেন রানা সরকার।
আরও পড়ুন: Bengali Television Industry Payment Issues: টেলিজগতের আর্থিক দুর্নীতি! ট্যাক্স কারচুপির অভিযোগ
তার পরে যাঁরা বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এ ছিলেন তাঁদের মধ্য়ে তিনজন রানা সরকারের পরিবারের সদস্য-- তাঁর বাবা, দিদি এবং স্ত্রী। বিগত ছমাসের মধ্য়েই একটু একটু করে ওই তিনজনই ডিরেক্টরের পদ থেকে সরে গিয়েছেন বলে আর্টিস্টস ফোরাম সূত্রের খবর। এই মুহূর্তে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এ নাম রয়েছে অদিতি রায় ও অরিন্দম পালের। ফোরামের প্রশ্ন, কোনও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, যার স্টেটাস এখনও অ্যাক্টিভ বলেই জানাচ্ছে করপোরেট বিষয়ক মন্ত্রক, তার দুজন ডিরেক্টর একসঙ্গে কীভাবে পদত্য়াগ করতে পারেন?
ফোরামের এগজিকিউটিভ বডি ও পেমেন্ট ইস্যুতে গঠিত কোর কমিটির একাধিক সদস্যের অভিযোগ, এই জটিলতার মাস্টারমাইন্ড রানা সরকার। কিন্তু জটিলতার সূত্রপাত যেভাবেই হোক না কেন, মাসের পর মাস প্রায় ২০০ জন শিল্পী এবং তার চেয়েও বেশি সংখ্যক টেকনিসিয়ানরা তাঁদের ন্যায্য় পারিশ্রমিকের টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ফোরাম থেকে চ্য়ানেল, একের পর এক মিটিং হয়ে চলেছে বিগত মার্চ মাস থেকে কিন্তু কোনও সুরাহা হচ্ছে না। সত্য়িই বড় অভিনব সঙ্কটে এখন বাংলা টেলিজগত। যাতে এই ধরনের জটিলতা ভবিষ্য়তে আবারও না ঘটে, পেমেন্ট বকেয়া রাখার এই দুষ্টচক্র যাতে আর কখনওই অন্য় প্রযোজকদের কাছে উদাহরণস্বরূপ না হয়ে ওঠে, সেই জন্য়েই সচেষ্ট এখন আর্টিস্টস ফোরাম। গত ২৫ মে-এর সাংবাদিক বৈঠকে সেই কথাই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।