ছবি- অসুর
পরিচালনা- পাভেল
অভিনয়- জিৎ, নুসরত জাহান, আবির চট্টোপাধ্যায়,
রেটিং- ১.৫/৫
'অসুর'-এর সংজ্ঞা ওলোটপালোট করে দিয়ে ছকভাঙা পথে আরও একবার হাঁটতে চেয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু তা আর হল কই! অনেকগুলো সম্ভবনা দেখিয়েছিল পাভেলের এই ছবি। ঝাঁ চকচকে দক্ষিণী রিমেক কিংবা কেতাদুরস্ত ছবি থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে বাংলা ছবির বদলে যাওয়া পথে চলতে শুরু করলেন জিৎ। পর পর দুটো ছবিতে তাক লাগিয়ে দেওয়ার পর তিন নম্বরে বাহবা কুড়িয়ে নেওয়ার হ্যাট্রিকটার দিকেই এক পা রেখেছিলেন পাভেল। সরাসরি জিতের বিপরীতে অপেক্ষাকৃত নেতিবাচক চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন আবির। অন্যদিকে, অভিনেত্রী নুসরতের সাংসদ হওয়ার পর প্রথম ছবি। কিন্তু এই সমস্ত সম্ভবনা মুখ থুবড়ে পড়ল।
আরও পড়ুন, Sanjhbati movie review: অভিনয়ের নিরিখেই ছকভাঙা ‘সাঁঝবাতি’
খাপছাড়া চিত্রনাট্যর ভীত অবাস্তবতা। কোনও মেটাফরেই ঘটনাক্রমের ন্যায্য মূল্যায়ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিগান মান্ডি, বোধিসত্ত্ব ও অদিতি- তিন বন্ধুর সম্পর্কের চড়াই উতরাই এই ছবি। ১৫ বছর পরে কিগান আর্ট কলেজের প্রফেসর এবং বোধি বড় ব্যবসায়ী। অদিতি বোধির স্ত্রী এবং কিগানের বন্ধু, একমাত্র কাঁধ। আর এই কিগানের উদাসীন শিল্পীসত্ত্বা ও অদিতির প্রতি নির্ভরশীলতাই বোধির সঙ্গে অদিতির বৈবাহিক সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে। ঘটনা ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে বোঝা যায় অদিতি, কিগানকে ভালবাসে কিন্তু ভাস্কর্য একমাত্র যার ধ্যান-জ্ঞান সেই কিগান অদিতিকে শুধুমাত্র ভাল বন্ধু হিসাবেই দেখে। তবুও কিগানের সঙ্গে কোনও এক দুর্বল মূহুর্তে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর অদিতি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায়। সেই অবস্থায় বিয়ে করে বোধিকে। এদিকে বোধি সারাজীবন অদিতির কাছ থেকে ভালবাসা, প্রায়োরিটি পাওয়ার বাসনায় ১০ বছরের বিয়ে টেনে নিয়ে যায়। মানুষ করতে থাকে তাদের (অদিতি-কিগনের) সন্তান বাবুয়াকে।
আরও পড়ুন, প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো: চোখের সামনে সত্যি হল কাঙ্খিত কল্পদৃশ্য
অন্যদিকে, বিশ্বের সবথেকে বড় দুর্গা বানানোর চ্যালেঞ্জ নেয় কিগান, সাহায্য করে অদিতি। বাবার সঙ্গে কথা বলে, বোধির বিপরীতে দাঁড়িয়ে কিগানের পাশে মহীরুহ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়না। দেশপ্রিয় পার্কের ঘটনাকে আবেগের মায়াজালে বুনতে চেয়েছিলেন পরিচালক। তবে যুক্তিতে কম পড়ল। ভিড়, স্ট্যা্ম্পেড কিংবা কর্পোরেট- রাজনৈতিক যোগসাজস কোনটাই পরিষ্কার করে দর্শক মনে ছাপ ফেলতে পারল না।
প্রথমবার পুরোদস্তুর বানিজ্যিক ছবির মোড়কে আনকোড়া গল্প বলার চেষ্টা করলেন জিৎ, কিন্তু ফর্মুলা বদলালেন না। ছবির প্রতিটা ফ্রেমে সুপারস্টারের প্রবেশ। বড়চুল, ডি গ্ল্যাম লুক আর মাঝে মাঝে উচ্চারণ বদলে কিগনের চরিত্রে নিজেকে সাজাতে ব্যর্থ জিৎ। আবিরের বিপরীতে অভিনয়ে বড়ই বেমানান। তবে নুসরত সাবলীল। ছবির চরিত্রকে জাস্টিফায়েড করেছেন অভিনেতা। অনেকদিন পর বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে পর্দায় দেখে ভাল লাগল।
আরও পড়ুন, ”ছাত্রদের গুটি হিসাবে দেখা বন্ধ করুন”, জেএনইউ কাণ্ডে প্রতিবাদে সরব টলিউড
ছবির গান ভাল, মানানসই আবহও। অথচ ছবিটায় প্রতিটা রসদ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কাজে লাগল না। প্রাণহীন থেকে গেল। খুব কম দৃশ্যে হলেও গ্রাফিক্স খারাপ। হল থেকে বেরিয়ে মনে থেকে একটাই সংলাপ! 'অসুরের জাত, হ কে হ, ন কে ন'।