Bala Movie Cast: আয়ুষ্মান খুরানা, ভূমি পেডনেকর, ইয়ামি গৌতম, ধীরেন্দ্র কুমার, সৌরভ শুক্লা, জাভেদ জাফরি, সীমা পাওয়া, দীপিকা চিখলিয়া, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
Bala Movie Director: অমর কৌশিক
Bala Movie Rating: ৩.৫/৫
এই ছবিতে পৌরুষ নিয়ে যেভাবে কৌতুক তৈরি হয়, তা অত্যন্ত উপাদেয়। বয়সের আগেই টাক পড়ে যাওয়া একজন মানুষ, যে তরুণ প্রজন্মের উপহাসের পাত্র হয়ে ওঠে, তার থেকেও খারাপ যাকে আপাতদৃষ্টিতে বিছানার সঙ্গী হিসেবে অনুপযুক্ত মনে করা হয়, তেমনই এক চরিত্রের গল্প। কখনও যার মাথায় ছিল ঢেউ-খেলানো শস্যখেত, অথচ এখন প্রায় ফাঁকা মাঠ-- সেই বালমুকুন্দ শুক্লর চরিত্রে আয়ুষ্মান খুরানা এত নিখুঁত যে অভিনেতার কখনও মাথাভর্তি চুল ছিল সেটাই ছবি দেখতে দেখতে দর্শক ভুলে যাবেন।
আরও পড়ুন: পাইরেসির খপ্পরে আয়ুষ্মানের ছবি ‘বালা’
তরুণী হৃদয়ে ঢেউ তোলা বয়ঃসন্ধি থেকে প্রধান চরিত্রের ভীরু প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায়-- 'বালা' ছবির এই যাত্রা একইসঙ্গে উচ্চকিত ও সূক্ষ্ম। আমাদের নায়ক হল সেই মানুষ যে বাথরুমের আয়নার উপরের অংশটি ঢেকে রাখে যাতে ক্রমশ পিছিয়ে এবং হারিয়ে যেতে থাকা হেয়ারলাইনটি তার চোখে না পড়ে। কাঁধ দুটো ইষৎ ঝুঁকে পড়া, অল্প উঁচু সামনের দাঁতের পাটি নিয়ে সে একটি খিটখিটে মারমুখী মানুষ যার প্রতি ভাগ্যদেবী মোটেই সহায় নন।
ছবির উচ্চকিত অংশগুলির কয়েকটি দেখতে দেখতে শরীর কিঞ্চিৎ আনচান করতে পারে। মাথায় চুল গজানোর জন্য ষাঁড়ের বীর্য মাখার কথা কি কেউ ভাবতে পারবেন? পারবেন না? যদি না পারেন তবে আপনার জানা নেই, মানুষ কতদূর যেতে পারে। যদিও সেটা দেখতে দেখতে পেট চেপে মাটিতে লুটিয়ে পড়া ছাড়া উপায় নেই।
কিন্তু এই সংবেদনশীল অংশগুলিকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন কৌশিক ও খুরানা। আর সেখানেই এই ছবি সফল। কানপুর-লখনউয়ের লোকেশনগুলিও বেশ নতুন, হিন্দি ছবিতে বহু-ব্যবহৃত নয়। তবে ওই অঞ্চলের উচ্চারণের টানটি সব সময় সব অভিনেতারা ঠিকঠাক আনতে পারেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম বালা-র ছোট ভাইয়ের চরিত্রের অভিনেতা ধীরেন্দ্র কুমার।
আরও পড়ুন: Buro Sadhu Review: গল্প যতটা ভালো, ছবির ভাষা ততটা পোক্ত নয়
এই সূত্র ধরেই চলে যাওয়া যাক ছবির দুই প্রধান মহিলা চরিত্রের দিকে। ভূমির চরিত্রের নাম লতিকা, একটু চাপা গায়ের রং, বালা-র ছোটবেলার বান্ধবী, যে বড় হয়ে উঠেছে তার গায়ের রং নিয়ে কথা শুনতে শুনতে। কিন্তু সে লোকের কথায় কান দেয় না, কষ্ট হলেও না। দম লাগা কে হাইসা-তে আগেই ভূমি ও আয়ুষ্মানের জুটিকে দেখা গিয়েছে। সেই পুরনো রসায়নের ঝলক বার বার এসেছে এই ছবিতে। কিন্তু টাক-বেঁটেখাটো চেহারার ক্রাইসিসের সঙ্গে চাপা রংয়ের ক্রাইসিসের মেলবন্ধন করে দেওয়াটা বড্ড চোখে লাগে। খুবই সুবিধাজনক ও বিস্বাদ সমীকরণ।
বরং সুন্দরী পরীকে (ইয়ামি গৌতম) ছবির গল্পে যতই অগভীর মনে হোক না কেন, চরিত্রটি অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য। ইয়ামিও আবার আয়ুষ্মানের পুরনো নায়িকা, তাই দুজনের রসায়নও জমেছে ভালো। সমসাময়িক সেলিব্রটিদের সেলফি ও টিকটকে আসক্তির বিষয়টি এসেছে বটে কিন্তু একটি মেয়ে যে কি না সব সময়েই তাকে কেমন দেখতে লাগছে, সেই নিয়ে মহাব্যস্ত, তেমন চরিত্রকে ছোট করা হয়নি। বরং উল্টোদিকের পুরুষটির মধ্যেও একই স্বভাব দেখা গিয়েছে।
তবে কিছু কিছু বিষয় উল্লেখ করতেই হবে। অকালে টাক পড়ে যাওয়া ছবির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিকই কিন্তু সেই নিয়ে অতিরিক্ত চর্চায় মাঝমধ্যে বেশ দমবন্ধ মনে হয়। আবার বলিউডের তারকাদের মিমিক্রি একটা সময় গিয়ে একঘেয়ে লাগে, পার্শ্বচরিত্রগুলিও খুবই নড়বড়ে। আর হ্যাঁ, ছবির শেষের দিকে নৈতিকতা, বাইরের সৌন্দর্য, অন্তরের সৌন্দর্য ইত্যাদি নিয়ে নায়কের লম্বাচওড়া ভাষণ বড়ই প্রচারমূলক।
আরও পড়ুন: হাউসফুল ৪: মস্তিষ্ক বলতে পারে, ”থামো। অনেক হয়েছে। পারছি না”
তবুও, আয়ুষ্মান খুরানা-র বালা একটা অর্জন। খুব পছন্দসই হবে না, এমন চরিত্রে অভিনয়কে আয়ুষ্মান নিঁখুত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। চরিত্রের মোচড়গুলি যেমন বার করে নিয়ে আসেন তেমনই তার প্রতি সহানভূতিও তৈরি করেন। একদম নিখাদ, ফিল্টারহীন একটা পারফরম্যান্স যা উৎকট হয়ে উঠতে সঙ্কোচ বোধ করে না। তারকাসুলভ গর্ব এবং ইমেজকে সম্পূর্ণ সরিয়ে রাখার এই নিদর্শন কিন্তু বলিউড অভিনেতাদের মধ্যে বিরল।
বালা অতিমানব নয়, তাই তার মধ্যে অসংখ্য খুঁত রয়েছে। সে আমাদেরই মতো কেউ একজন, যে দর্শকের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম। ঠিক তেমনই তার সংলাপ, যার মধ্যে কৌশিক অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সঙ্গে রাজনীতিকে এনেছেন-- 'পুরা উত্তরপ্রদেশ চল রহা হ্যায় ভগওয়ান ভরোসে, অউর ভি চল যায়েগা!'
মজা আ গয়া গুরু!