Dream Girl movie cast: আয়ুষ্মান খুরানা, অন্নু কাপুর, মনজ্যোত সিং, রাজেশ শর্মা, বিজয় রাজ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নুসরত ভারুচা, নিধি বিশত, রাজ ভনশালী।
Dream Girl movie director: রাজ শান্ডিল্য
Dream Girl movie rating: ২/৫
'ড্রিমগার্ল' ছবিতে বহু ভালো ভালো আইডিয়া ভেসে বেড়ায় কিন্তু আইডিয়াকে রূপায়িত করতে হয় এবং সেইদিক দিয়ে দেখতে গেলে এই ছবিটি গোটা ব্যাপারটা ঠিক সামলে উঠতে পারেনি। এত কম উইট আর এত দুর্বল কল্পনাশক্তি যে ওই সব ভালো ভালো আইডিয়াগুলোই শেষ পর্যন্ত সাদামাটা হয়ে যায় পর্দায়। আর সেটা খুবই দুঃখজনক কারণ এই ছবিতে রয়েছেন একজন অদ্বিতীয় অভিনেতা এবং তাও একটি অভূতপূর্ব চরিত্রে।
বেকার করম ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়ে একটা কল সেন্টারে যার মালিক একজন ধাপ্পাবাজ, লোক ঠকিয়ে টাকা রোজগার করা মানুষ, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজেশ শর্মা। ওই কল সেন্টারে রয়েছে একগুচ্ছ মহিলা যারা ফোনে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব করে। ওরকম একটা জায়গায় ঠিক কাজ জুটে যায় করমের কারণ ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে রয়েছে একটি ঈশ্বরদত্ত প্রতিভা-- মহিলাদের গলা অবিকল নকল করতে পারে সে। মাত্র একটা ফোন কলেই সমস্ত পুরুষের মনে ঝড় তোলে পূজা অর্থাৎ করমের অল্টারনেট ইদ। করমের জীবনে রোজগারও বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন: Saaho movie review: নামে অ্যাকশন থ্রিলার, কাজের বেলায় ভিজে ন্যাতা
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, খুব একটা ঝুঁকি (ফোন সেক্সে আর কত কী-ই বা বেশি হতে পারে) না নিয়ে, বেশি বাড়াবাড়ি না করে। কিন্তু ছবিটিকে পারিবারিক বানাতে গিয়েই সমস্যা হয়েছে। অপরিচ্ছন্নতা ও সেন্টিমেন্ট-- এই দুয়ের টানাপোড়েনে ঠিক যেন মাদারির দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছে 'ড্রিমগার্ল'। এই করতে করতে শেষ পর্যন্ত ছবিটি নিতান্তই বিস্বাদ হয়ে পড়ে। স্বাদহীনতার সহজ সমাধানেই আত্মসমপর্ণ করতে হয়।
বলিউডের আর একটা বড় সমস্যা হল সস্তা চমক দিয়ে ক্লিশে ঢাকার চেষ্টা। করমের আশপাশের চরিত্রগুলোকেই দেখুন-- হিরোর প্রাণের বন্ধু হল স্মাইলি দ্য সর্দার (মনজ্যোত সিং) যে সব সময় হিরোর জন্য একপায়ে খাড়া, হিরোর প্রেমিকা মাহি (নুসরত ভারুচা), রঙিন চরিত্রের মানুষ, হিরোর বাবা (অন্নু কাপুর), কথায় কথায় জঘন্য শায়েরি বলা রঙ্গিলা পুলিশ (বিজয় রাজ), সোনালি চুলের এক বামন, একটি উচ্চকিত স্বভাবের মেয়ে যে নাকি ছেলেদের দুচোক্ষে দেখতে পারে না কিন্তু মেয়েদের ভালোবাসে আর মদের নেশায় চুর এক ঠাকুমা, যে চরিত্রটি ভিকি ডোনর ছবির কথা মনে করাবেই, প্রায় একই রকম।
সত্যি বলতে কী, ভিকি ডোনর ছবিতে আয়ুষ্মান খুরানা ও অন্নু কাপুরের জুটি দারুণ ছিল। ওটাই ছিল আয়ুষ্মানের প্রথম ছবি। বিগত সাত বছরে খুরানা উচ্চমানের চরিত্রাভিনেতা হিসেবে আয়ুষ্মান নাম করেছেন। এখানে অন্নু কাপুর আয়ুষ্মানের বাবার চরিত্রে এবং বন্ধুর চরিত্রে মনজ্যোত সিং বেশ ভালো সাপোর্ট দিয়েছেন আয়ুষ্মানকে। উচ্ছ্বল নুসরত ভারুচা-সহ ছবির বাকিটা যেন একটা বকচ্ছপ, যেমন খুশি সাজো-র শোভাযাত্রার মতো, একটা অংশের সঙ্গে অন্য অংশের যোগসূত্র খুবই ক্ষীণ।
আরও পড়ুন: ছিছোরে রিভিউ: নস্ট্যালজিয়া ব্যতীত আর কোন প্রাপ্তি নেই
তবে প্রধান চরিত্রটিকে যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে অনেক মেরিট রয়েছে-- রাতের কল-সেন্টারে কর্মরত মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলে সেই চরিত্র। একাকীত্ব যে সব লিঙ্গের মানুষেরই একটি সমস্যা, সেটাও করমের সংলাপের মাধ্যমে বলা হয়েছে। একটু হালকা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টিও ছুঁয়ে গিয়েছে এই ছবি, ধূমপান ও মদ্যপান দিয়ে যে কোনও মানুষকে বিচার করা উচিত নয়, সে সব জ্ঞানও রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে একটা বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেই সব পুরষদের দেখার প্রচেষ্টা যাদের মধ্যে মেয়েলি কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু কোনও আইডিয়াই পুরোপুরি রান্না হল না, হাততালি পাওয়ার জন্য কয়েকটা অর্থহীন সংলাপ এল শুধু।
তার পরেও আপনি ছবিটি বসে দেখতে পারবেন আয়ুষ্মান খুরানা-র জন্য। অত্যন্ত আভিজাত্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে করম ও পূজা-- দুটি চরিত্রেই অভিনয় করেছেন আয়ুষ্মান, বিষয়টাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বলা যায়। তিনি এমন একজন অভিনেতা যিনি বলিউডের ছাপ্পামারা পুরুষতান্ত্রিক চরিত্রচিত্রণ থেকে গোলপোস্ট পরিবর্তন করে এই ছবিতে একজন পুরুষ ও নারী, দুটি ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন। যদি এই ছবিতে অতিরঞ্জন না থাকত তাহলে এই বিশেষ বিষয়ের চর্চাকে একটা অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেত।
অবশ্য সেটা তখনই সম্ভব ছিল যদিটা ছবিটা আরও একটু ভালো মানের হতো।