তিনি স্ক্রিনে এলেন, ফের একবার জয় করলেন, কাঁপিয়ে দিয়ে চলে গেলেন পদ্মাপাড়ের মানুষদের। কারণ, তাঁর নামটাই যথেষ্ট একটি ছবিকে রিলিজের পর হিট থেকে সুপারহিট তকমা দিতে। তিনি মেগাস্টার শাকিব খান ( Megastar Shakib Khan ) । দীর্ঘ এতবছর, উপহার দিয়ে চলেছেন নানা ধরনের ছবি। কাজ করেছেন এপার বাংলার অনেক ছবিতেও। জীবনে হাজার তুফান এলেও, নিজের কাজের প্রতি সততা এবং দায়িত্ব ভুলতে তাঁকে দেখা যায়নি।
শেষ কিছু মাস ধরেই তিনি যেন আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সিনে প্রেমীদের মধ্যে। প্রচণ্ড গরমে যখন প্রাণ হাসফাঁস, তখন 'তুফান' বিনোদন জগতে নতুন সেনসেশন সৃষ্টি করল। মেগাস্টার শাকিবের এই ছবিতে কাজ করলেন এপারের মিমি চক্রবর্তীও। এই বাংলাতেও রিলিজ করতে চলেছে সেই ছবি। তাঁর আগেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিলেন অভিনেতা।
'তুফান' যা চায় তাই পায়, ব্যক্তিজীবনে আপনি যা চান তাই পান?
জীবনের সব হিসাব-কিতাব তো এখনও করি নি। সেই সময় আসেনি। এক জীবনে কোনও মানুষ তো আর সবকিছু পায় না। পূর্ণতার পাশে কিছু অপূর্ণতা নিয়ে জীবন। তবে আমার বড় প্রাপ্তির কাছে ছোট অপ্রাপ্তিগুলো দিনশেষে কিছু মনে হয় না। এখন পর্যন্ত যা চেয়েছি, তার চেয়ে বেশি পেয়েছি।
'তুফান' বাংলাদেশে তুফান তুলে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার রিভিউ দেখে কেমন লাগে?
অবশ্যই রিভিউ বা মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের বিভিন্ন ধরণ দেখে আমি খুব আনন্দিত হই। আমাকে পর্দায় দেখে যারা অনুভূতি প্রকাশ করেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমি আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। এজন্য আমি সবসময় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
আপনার ফ্যানরা, শাকিব খানের জন্য শাকিবিয়ানরা পাগল। কি বলবেন?
শাকিবিয়ানদের ভালোবাসার কাছে আমি সবসময় নতজানু হই। তাদের ভালোবাসা আমি অনুভব করি, কিন্তু সবকিছু ভাষায় বা কোনো শব্দে প্রকাশ করা যায় না। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যে প্রান্তে আমি গিয়েছি সেখান থেকে ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের এই ভালোবাসার কারণে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। এই ভালোবাসায় আমি অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাই।
এতোবছর পরে কি মনে হয় বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বিরাট দায়িত্ব আপনার কাঁধে!
(হাসি... ) আমার কাঁধে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বা কোনও কিছুর ভর আছে এটা অনুভব করিনা। আমার অনুভবটা ভালোবাসার, ফ্যানদের জন্য। যতদিন বেঁচে থাকবো এই ভালোবাসার মানুষদের জন্য কাজ করে যাবো। তবে আমি দীর্ঘদিন, অনেকবছর আগে থেকে স্বপ্ন দেখেছি, বাংলাদেশের সিনেমাকে গ্লোবালি দেখতে চাই। প্রথমে অনেকেই ভাবতো এগুলো আমি কথার কথা বলছি, এগুলো সম্ভব নয়। কিন্তু যেটা আমি স্বপ্ন দেখতাম সেটাই এখন হচ্ছে। গ্লোবালি অফিসিয়ালি আমাদের সিনেমা রিলিজ হচ্ছে। গতবছর 'প্রিয়তমা' সিনেমায় গ্লোবালি অনেক বড় সাফল্য এসেছে। সেই নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, লন্ডন, ডাবলিন, ভেনিস, সিডনি, প্যারিস, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিখ্যাত সব স্থানে গ্লোবাল মার্কেটে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। নিকট ভবিষ্যতে আমরা আরও ভালো করবো। আমার বিশ্বাস, গ্লোবালি বাংলা সিনেমা অনেক বড়স্থানে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে। আমার স্বপ্নগুলো একে একে পূরণ হচ্ছে, দেখতে দেখতে আমি এগিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বপ্নের পরিধি আরও বড় হচ্ছে।
মিমি চক্রবর্তী সহ অভিনেত্রী হিসেবে কেমন, তিনটে শব্দে বর্ণনা করতে বললে কিভাবে করবেন?
খুব সুন্দরী, অসাধারণ অভিনেত্রী, এবং ভীষণ একজন ভাল মনের মানুষ।
শাকিবকে আদৌ কোনোদিন ওয়েব সিরিজে পাওয়া যাবে?
আপাতত না।
বাংলাদেশের সুপারস্টার হওয়ার কোনও সুবিধা বা কোনও অসুবিধা?
শুধু বাংলাদেশ নয়, বড় পজিশন লিড করার সুবিধা-অসুবিধা সব জায়গায় আছে। বড় পজিশনে যিনি থাকেন, তিনি এটা অনুধাবন করতে পারেন। তার আশপাশের কাছের মানুষরা অনুভব করতে পারেন। এখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আবার নতুন করে ভালো স্থানে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে গ্লোবালি আমাদের অবস্থান মজবুত হচ্ছে। করোনা পরবর্তী আমরা দারুণ এক সুসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক রকম বাঁধার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, ইদানীং সেটা একটু বেশি অনুভব করছি। আশা করব, অদূর ভবিষ্যতে মানুষের ভালোবাসায় সব বাঁধা অতিক্রম করে আমি আমার গন্তব্যের দিকে যাবো।
এতো বছরেও আপনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী কেন?
এখানে আমি প্রতিযোগিতা করতে আসিনি। যে যার অবস্থান থেকে ভালো কাজের চেষ্টা করছে। আমার সিনেমা মানুষ দেখছে, অন্যদের সিনেমাও তো দেখছে। আমি এটাকে প্রতিযোগিতার জায়গা হিসেবে কোনোদিন দেখিনি। শুরু থেকে আমি আমার কাজটি সঠিকভাবে করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি-সহ আমাদের এখানকার আরিফিন শুভ ওপার বাংলার বুম্বাদা অর্থাৎ প্রজেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ( Prosenjit Chatterjee ), জিৎ ( Jeet ), দেব ( Dev ) প্রত্যেকে বাংলা সিনেমার নায়ক। বাংলা সিনেমার কারণে আমরা মানুষের ভালোবাসা পাই। আমার বিশ্বাস তারা প্রত্যেকে এটাই মনে করেন যে নিজেদের শ্রেষ্ঠ অ্যাফোর্ড দিয়ে বাংলা সিনেমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।
শাকিবের জীবনে তো তুফানের বেগের চেয়েও বেশি বিতর্ক, সামলান কী করে?
কিছু মন্দ মানুষ আলোর মাঝেও কালো খোঁজে। আমি এসবে ঘুরে তাকিয়ে সময় নষ্ট করিনা। অজ্ঞরা অনেক সময় মহাপন্ডিতের মতো কথা বলে, যেগুলো ভিত্তিহীন। এগুলো দেখলে জীবন থেকে সময়গুলো বৃথা যাবে। আমার ধারণা, কোনো বিবেকবান ও জ্ঞানী মানুষও এসব কেয়ার করেন না।
ভারতের কোন সাম্প্রতিক অ্যাকশন ছবি, যেটা আপনার ভাল লেগেছে?
বড় অ্যাকশন ফিল্ম, সাম্প্রতিক ভালো লেগেছে শাহরুখ খানের ( Shah Rukh Khan) জওয়ান ( Jawan )।