বাবা অপরেশ লাহিড়ীর মতোই বাপ্পি লাহিড়ীর অস্থিও ভাসানো হবে গঙ্গায়। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আজ বিমানে করে সকালে কলকাতায় পৌঁছলেন ছেলে বাপ্পা লাহিড়ী।
সকাল ৯ টায় কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে গন্তব্য সোজা আউট্রাম ঘাট। মন্ত্রী সুজিত বসুর তত্ত্বাবধানে এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অস্থি। সেখানে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম সেরে বোটে করে নিয়ে অস্থি নিয়ে যাওয়া হবে গঙ্গার বুকে। মাঝগঙ্গাতেই বাবার অস্থি বিসর্জন দেবেন বাপ্পা।
বাংলার সঙ্গে বাপ্পি লাহিড়ীর নাড়ির টান বোধহয় আর আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে না। মুম্বইতে থেকেও বাঙালিয়ানা ভুলতে পারেননি তিনি। আর বাংলার প্রতি তাঁর সেই টান অনুভব করেই গঙ্গায় অস্থি বিসর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাহিড়ী পরিবার। সম্প্রতি লাহিড়ী ভবনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পীর। এবার তাঁর অস্থি বিসর্জন করতে সপরিবারে কলকাতায় এলেন ছেলে বাপ্পা। রয়েছেন মেয়ে রিমা লাহিড়ীও।
প্রসঙ্গত, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাপ্পি লাহিড়ী। লতা মঙ্গেশকরের পর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ধাক্কা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সঙ্গীতমহল। তার মাঝেই বুধবার সকালে আরও এক বাঙালি তারকার মৃত্যুর খবর এসেছিল আরব সাগরের পারে মায়ানগরী থেকে। ‘ডিস্কো কিং’য়ের আচমকা প্রয়াণে ভেঙে পড়েছিলেন তাঁর সহকর্মীরা।
<আরও পড়ুন: ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিলেন মহিলারা! শৈশবের ভয়ঙ্কর স্মৃতি আউরে কেঁদে ফেললেন বনশালি>
উত্তরবঙ্গের অলোকেশ লাহিড়ী তাঁর গানের মাধ্যমে গোটা দেশের শ্রোতাদের নেশা ধরিয়েছিলেন। সাতের দশকে কমবয়সি এই বাঙালি ছেলের মিউজিক কম্পোজিশন শুনে চমকে উঠেছিলেন তৎকালীন বলিউড পরিচালকরাও। উনিশ-কুড়িতেই যে সব হিন্দি গানের সুর করেছিলেন, তাতেই বাপ্পির সোনায় মোড়া মিউজিক কেরিয়ারের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অনেকে।
মুম্বইতে থেকে বাংলাকে কতটা মিস করতেন বাপ্পিদা? প্রয়াণের পর বাপ্পির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তুতোদাদা ভবতোষ জানিয়েছিলেন, “বাপ্পি ছিলেন মাছ-পাগল মানুষ। মুম্বইতে ভাল মাছ পাওয়া যেত না বলে দুঃখ করতেন। যখনই উত্তরবঙ্গে কোথাও অনুষ্ঠান করতে এসেছেন, কোনওদিন হোটেলে রাত কাটাতেন না। আর এলেই বিভিন্ন মাছের হরেক পদ খাওয়ার আবদার রাখতেন। ইলিশ-চিতল, কাতলা ছিল বরাবরের প্রিয়। গানের আড্ডা দিতেন চুটিয়ে।” আসলে বাঙালি মানেই তো গানবাজনার আড্ডা আর পাতে হরেক মৎস-পদ, সেদিক থেকে দেখতে গেলে বাপ্পি লাহিড়ী হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির ‘ডিস্কো কিং’ হয়েও আমৃত্যুকাল বাঙালি হয়েই থেকেছেন। এবার তাঁর অস্থিও বিসর্জন হচ্ছে এই কলকাতাতেই। গঙ্গায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন