বাংলার শিক্ষা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত জেলবন্দি কুন্তল ঘোষের সঙ্গে টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতা বনি সেনগুপ্তর আর্থিক লেনদেনের হদিশ মিলতেই তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি থেকে বিনোদুনিয়া। সরগরম নেটপাড়াও। 'কান টানলে মাথা আসে..' এমন প্রবাদ বাক্যের মতোই এবার যেমন অভিনেতার ফিল্মি পরিবারকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে, তেমনি প্রেমিকা কৌশানী মুখোপাধ্যায়ও প্রশ্নবাণে জেরবার। এবার সেই প্রসঙ্গেই মুখ খুললেন বনি সেনগুপ্তর পরিবার।
মা পিয়া সেনগুপ্তর কথায়, "সিনেমা প্রযোজনার শখ ছিল কুন্তল ঘোষের। সেই প্রেক্ষিতেই বনিকে অগ্রিম টাকা দিয়েছিলেন। তবে শুধু বনি নয়, টলিউডের অনেক বড় বড় শিল্পীদের সঙ্গেই কুন্তলের ওঠাবসা ছিল। আসতে আসতে সবই জানা যাবে হয়তো। মিউজিক ভিডিও-ও বানিয়েছেন কুন্তল। যার রিলিজের দিন ইন্ডাস্ট্রির অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। ২০১৭ সালে যখন কাজের অফার এসেছিল, তখন বনি একটা রেঞ্জ রোভার গাড়ি কিনেছিল। কুন্তল সরাসরি সেই টাকা ওই গাড়ি সংস্থার অ্যাকাউন্টে দেয়। গাড়িটা বনির নামে বলেই হয়তো ওঁর ডাক পড়েছে।"
একাধারে বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় পরিচালক অনুপ সেনগুপ্ত বনির বাবা। অন্যদিকে, মা পিয়া সেনগুপ্ত ফিল্মি সংগঠনের জাঁদরেল ব্যক্তিত্ব তথা অভিনেত্রী, এমনকী তৃণমূলের একনিষ্ঠ সদস্যও। বান্ধবী কৌশানী মুখোপাধ্যায়ও নামকরা নায়িকা এবং রাজ্যের শাসকদলের সদস্য। যিনি একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন। ফিল্মি দুনিয়া ও রাজনৈতিক কানেকশন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই যে তাঁদের দিকেও শিক্ষা দুর্নীতির কাদা ছোঁড়াছুড়ি হবে বনির ইডি তলবের পর, তা স্বাভাবিক।
<আরও পড়ুন: ‘ED-র দরবারে বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ..’, বনি সেনগুপ্তকে ভয়ঙ্কর তুলোধনা ঋদ্ধির>
উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় বনি সেনগুপ্ত নিজে সকলকে চমকে দিয়ে মা ও প্রেমিকার বিরোধী শিবির বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন। তবে ভোট ময়দানে বিজেপির ধরাশায়ী পরিস্থিতির মাসখানেক বাদে গেরুয়া শিবির থেকে সন্ন্যাস নেন! এবার কুন্তল ঘোষের সঙ্গে তাঁর লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনের হদিশ পেয়েই মহা ফাঁপড়ে পড়েছেন বনি সেনগুপ্ত। এপ্রসঙ্গে কৌশানী প্রশ্নের মুখে পড়তেই বললেন, "আমি তো টাকা নিইনি। এটুকুই জানি।" এখানেই শেষ নয়..!
কৌশানী এও জানান যে, "কুন্তলের সঙ্গে বনির আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। জানার কথাও নয়। তাছাড়া বনির সমস্ত কাজকর্ম ওঁর মা পিয়া সেনগুপ্ত দেখেন। আমি তো ওঁর অভিভাবক নই যে, ওঁকে কোনও কাজ করার বুদ্ধি বা নির্দেশ দেব! একশোটা ইভেন্ট করি। ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্কও থাকে না কারও সঙ্গে। বনির সূত্রেই কুন্তলের সঙ্গে আলাপ। ২০১৭ সালে টাকাপয়সা নিয়ে কী চুক্তি হয়েছিল আমার জানার নয়। তাছাড়া বনি একজন বড় অভিনেতা, নিজের টাকায় ওর গাড়ি কেনা নিয়ে আমার সন্দেহ হওয়ার কথাও নয়।" কৌশানীর এমন উত্তরের পরই নেটপাড়ায় শোরগোল। কটাক্ষের সুরে একাংশের প্রশ্ন, "বনি সেনগুপ্ত ইডি-র ঘরে ঢুকতেই কি পাল্টি খেলেন বান্ধবী কৌশানী মুখোপাধ্যায়?"
বনি সেনগুপ্তর তুতো দিদি মৌসুমী সেনগুপ্ত যিনি বারাসতের লিচুতলায় থাকেন, পেশায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, তাঁর বক্তব্য, "ইডি ডেকেছে বলেই বনি অপরাধী, তার কোনও মানে নেই। ছোটবেলা থেকেই বনি খুব সহজ-সরল। সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে। ভাইয়ের ক্ষেত্রে এবারও হয়তো সেটাই হয়েছে। সত্যিটা ঠিক সামনে আসবে। আমার বিশ্বাস দুর্নীতির সঙ্গে ওঁর কোনও যোগ নেই। দোষীদের শাস্তি হোক।"