Actor Rahul Banerjee in Aye Khuku Aye: সান বাংলা-র ধারাবাহিক 'আয় খুকু আয়'-এর সম্প্রচার শুরু হয়েছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে। ওই ধারাবাহিকের একজন অটিস্টিক মানুষের চরিত্রে অভিনয় করছেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় উঠে এল নতুন চরিত্র, পুরনো ধারাবাহিক ও টেলিধারাবাহিকের সাম্প্রতিক ট্রেন্ড নিয়ে বেশ কিছু কথা--
তুমি আবারও টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয়ে এলে। তোমার কি টেলিভিশন করতে ভালো লাগে?
যে কোনও দিন সকালে উঠে অভিনয় করার সুযোগ পেলেই আমার আনন্দ হয়। আমি আগেও বলেছি, অন্যান্য ইন্টারভিউতেও যে, সিনেমা হোক, সিরিয়াল হোক, ওয়েবসিরিজ হোক, যাত্রা হোক, অভিনয়ের সুযোগ থাকলেই আমার ভালো লাগে। আর টেলিভিশনে নতুন সিরিয়াল মানেই নতুন বন্ধু তৈরি হওয়া, মেকআপ রুমে নতুন নতুন রসায়ন তৈরি হওয়া। খুবই ভালো লাগে সেটা।
আরও পড়ুন: AloChhaya Review: ডিগ্রির দাসত্ব নয়, শিক্ষার আলো এবং ভালো মানুষ হয়ে ওঠার কথা বলে
টেলিভিশনের নায়কের চরিত্রগুলিতে খুব একটা রকমফের পাওয়া যায় না। এই চরিত্রটা কি অন্য রকম?
একেবারেই অন্য রকম। চরিত্রটা একজন অটিস্টিক মানুষের যার শরীর ৩৫ বছরের কিন্তু মন-মাথা ৫-৬ বছরের। সে আচমকাই একটা বাচ্চার দায়িত্ব নেয়। তার যা বয়স, সেখান থেকে হয়তো বাবার মতোই কোনও স্নেহ তৈরি হয়েছিল। সেই ইনস্টিংট থেকেই সম্ভবত সে এটা করে। খুবই ভালো লাগছে চরিত্রটা।
তুমি কি কোনও অটিস্টিক বাচ্চাদের স্কুলে বা কোনও ইনস্টিটিউটে গিয়েছ, ধারাবাহিক শুরু হওয়ার আগে?
না... ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও দেখেছি, অটিজম নিয়ে। তবে অভিনয়ের সময় আমাকে কিছু বদল আনতে হয়েছে। যাঁদের অটিজম থাকে, তাঁরা কারও চোখের দিকে তাকান না। কিন্তু টেলিভিশনে সেটা করলে তো ঠিক চলবে না। তাই কিছু কিছু পরিবর্তন করতে হচ্ছে, নাটকীয়তা বজায় রাখার জন্য।
সন্দীপ্তার সঙ্গে তোমার দ্বিতীয় কাজ টেলিভিশনে, অনেকেই এই জুটিকে আবারও টেলিভিশনে দেখতে চেয়েছিলেন। কেমন লাগছে?
হ্যাঁ, অনেকেই চেয়েছিল। আমাদের এখানে টেলিভিশন কিন্তু অত্যন্ত হিরোইন-কেন্দ্রিক। সেখানে একজন অভিনেত্রী বারো বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে প্রোটাগনিস্টের চরিত্র করছেন, এটা খুবই কৃতিত্বের। ওঁর সঙ্গে যাঁরা শুরু করেছিলেন তাঁদের অনেকে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন বা টেলিভিশন করেন না। এরকম একজন সহ-অভিনেত্রী পেলে ভালো লাগে। আর আমাদের দুজনের বন্ধুত্বও আছে। সব মিলিয়ে খুবই ভালো লাগছে একসঙ্গে কাজ করে।
তোমার কত বছর হল টেলিভিশনে? তোমার অভিনয় জগতের প্রথম দিকের গল্পটা যদি আর একবার একটু বলো।
প্রত্যাবর্তনের পর ৪-৫ বছর। আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন চাইল্ড অ্যাক্টর হিসেবে অনেক কাজ করেছি। প্রথম কাজ ছিল দূরদর্শন-এ, 'পল্লীসমাজ'। সেখানে লাবণী সরকারের ভাই হয়েছিলাম। তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্স হবে। পরিচালক অতনু ঘোষের 'ঢেউ'-তে অঞ্জন দত্তের ছোটবেলার চরিত্রটা আমি করি। তার পরে মিঠুন চক্রবর্তীর 'চাকা'-তে যখন অভিনয় করি তখন আমি ক্লাস নাইনে। তার পরে আমার বাবা নিজে থেকেই আমাকে বারণ করলেন। তখন বোর্ড এক্সামের ব্যাপারও ছিল। আর বাবা বলেছিলেন এই সময়টা ছেলেরা আস্তে আস্তে পুরুষ হয়ে ওঠে, গলা ভাঙে, অনেকটা পরিবর্তন আসে। এই সময়টা নিজেকে লুকিয়ে রেখে পুরুষ হয়ে ফিরতে হয়। তাই আবারও পর্দায় ফিরি এইচএস-এর পরে। আমাদের নিজস্ব নাটকের দল ছিল। আমার বড় হয়ে ওঠাই একটা নাটকের পরিবেশে। নবারুণ ভট্টাচার্য-মহাশ্বেতা দেবী... এঁরা আমাকে প্রায় কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন বলা যায়।
তোমার বাবাকে দেখেই কি তবে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহটা জাগে?
হ্যাঁ তবে বাবার আগ্রহটা বেশি ছিল আমাকে নিয়ে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে বাবা-মা খুবই স্ট্রিকট ছিলেন। আমাকে স্কুলজীবনে কখনও মেগাসিরিয়াল করতে দেননি, আমাকে নিয়মিত অডিশনে পাঠাননি... আমাকে প্রিজার্ভ করে রেখেছিলেন অনেকটা। এইচএসের পরে থিয়েটার করতে করতেই প্রথমে রবি ওঝার ছবি 'আবার আসব ফিরে'-তে অভিনয় করি। তার পরে 'মানিক' বলে একটা ধারাবাহিক দূরদর্শন-এ, তার পর 'নানা রঙের দিনগুলি', 'খেলা', 'মোহনা'... 'চিরদিনই তুমি যে আমার'।
আরও পড়ুন: ম্যাম আমাকে দেখেই বললেন, তুমি কি সিরিয়াল করো: অমনদীপ
এখন যারা অভিনয় করতে আসছে, টেলিভিশনের একদন নতুন প্রজন্ম, তাদের মধ্যে কি ডিসিপ্লিন বা শেখার আগ্রহটা কম?
এভাবে জেনারালাইজ করে বলা সম্ভব নয়। আমি দিতিপ্রিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, এই মেয়েটিও কিন্তু একদম নতুন প্রজন্মের। তাই একটা জেনারেশন মাত্রই খারাপ বা তাদের কনসেনট্রেশন নেই, এটা কখনোই বলা যায় না। তবে যখন দেখি কেউ কেউ অভিনয় করতে এসেছে অথচ বাংলা সিনেমা দেখে না, বাংলা সিনেমার কাউকে চেনে না... আর কিছু না হোক, রবি ঘোষ, উৎপল দত্তদের তো চিনবে!
রাগ হয় না?
না, আসলে এইটাও বুঝি যে আমাদের কাছে কিন্তু অপশন ছিল না, এখনকার জেনারেশনের কাছে সেটা আছে। আমাদের ছোটবেলায় ডিডি ওয়ান-ই ছিল যেটা বাড়ির সবাই দেখত, তাই আমরাও দেখতাম। আর সেই কারণেই পুরনো দিনের মানুষদের চিনতে বাধ্য হয়েছি। আমরা টিভিতে কানন দেবীর রেট্রোস্পেকটিভও দেখেছি।
তোমার কি মনে হয় না, সাম্প্রতিক সময়ে খুব বেশি টিআরপি-কেন্দ্রিক হওয়ার জন্য বাংলা সিরিয়ালের গল্পের মাধুর্য হারিয়ে গিয়েছে খানিকটা?
আসলে বুঝতে হবে যে মিডিয়ামটা কাদের কেটার করছি। একটা সময় মাস মিডিয়া ছিল সিনেমা। টেলিভিশন ছিল অনেকটা আরবান কনসেপ্ট। এখন ঠিক উল্টো। তখন বাংলার কমার্শিয়াল সিনেমাগুলো হতো সেরকমই, একটু উচ্চকিত। এখন বাংলা সিনেমার মূলধারায় কিন্তু সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিই ডমিনেট করে। বাংলাতে মাস মিডিয়া কিন্তু আর সিনেমা নয়, এখন মাস মিডিয়া হল টেলিভিশন। যখনই মাস মিডিয়ার জন্য কোনও কনটেন্ট তৈরি হবে, সেখানে কিছুটা উচ্চকিত টোন রাখতে হয়।