Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

বাবার প্রতিষ্ঠিত অনাথ আশ্রমেই শিখেছি ভাইফোঁটা শুধু রক্তের সম্পর্কের নয়: রাজ

Raj Bhattacharya: জনপ্রিয় অভিনেতা রাজ ভট্টাচার্যের কাছে ভাইফোঁটা মানে শুধুমাত্র নিজের ও তুতো ভাইবোনেদের সঙ্গে কাটানো একটি দিন নয়। ছোটবেলা থেকেই আরও বৃহত্তর আদর্শের চোখে দেখেন এই উৎসবকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bengali Actor Raj Bhattacharya sharing his perspective of brotherhood learnt from his father's orphanage

বাবা মাধব ভট্টাচার্যের সঙ্গে রাজ ভট্টাচার্য। ছবি সৌজন্য: রাজ

Raj Bhattacharya talks about his father's orphanage: ভাইফোঁটার মতো সুন্দর একটি উৎসব কোনও বিশেষ ধর্মের মধ্যে আর আবদ্ধ নেই। পরিবারকেন্দ্রিকতা থেকেও এই উৎসব বেরিয়ে এসেছে বহু বছর আগেই। সৌভ্রাতৃত্বের সেই আদর্শের চোখেই ছোটবেলা থেকে এই উৎসবকে দেখে এসেছেন বাংলা বিনোদন জগতের জনপ্রিয় অভিনেতা রাজ ভট্টাচার্য। তাঁর বাবা মাধব ভট্টাচার্য বারাসত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি অনাথ আশ্রম যা প্রায় তিন দশক ধরেই আশ্রয়হীন শিশুদের পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ভ্রাতৃত্বের দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা ও স্নেহ যে শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে না, সেই পাঠ তিনি পেয়েছেন ছোটবেলা থেকেই।

Advertisment

Kamakhya Balok Ashram orphanage open classroom রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-পদ্ধতি অবলম্বনে মাঝেমধ্যেই আশ্রমের ক্লাস বসে খোলা আকাশের নীচে। ছবি সৌজন্য: রাজ

''আমি যখন অনেকটা ছোট তখন বাবা কামাখ্যা বালক আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। আরও কয়েকজন সহৃদয় মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন, যাঁরা এখনও আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত। তবে আশ্রমের ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব তখনও বাবার উপরেই ছিল, এখনও তাই'', পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করলেন রাজ, ''ওই আশ্রম আমার জীবনের একটা অংশ, আমার এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি। আমাদের জীবনের সব পালপার্বণ উৎসবেই কিন্তু আশ্রম জড়িয়ে রয়েছে, সেটা কালীপুজো হোক বা দোল। ভাইফোঁটার দিনেও সকালে বাড়ির দিদি বা বোনেদের থেকে ফোঁটা নিয়ে সোজা চলে যেতাম আশ্রমে। তখন ওখানে তো ভাইফোঁটা হতো না, এখন হয়, আমাদের আশ্রমের মেয়েদের সেকশনটা চালু হওয়ার পরে। কিন্তু ছোটবেলায় ওই আশ্রমে বেশিরভাগ সময়টা থাকতে থাকতে একটা জিনিস ভিতরে ঢুকে গ্যাছে যে রক্তের সম্পর্ক আসলে কিছু নয়। ভাইফোঁটাও শুধু রক্তের সম্পর্কের নয়।''

Bhaifota at Kamakhya Balok Ashram Orphanage কামাখ্যা বালক আশ্রমের বর্তমান আবাসিকদের নিয়ে ভাইফোঁটার উৎসব। ছবি সৌজন্য: রাজ

আরও পড়ুন: নিজের নয়, টেলি ও টলিপাড়ায় কাজের সূত্রেই ভাইবোন হয়ে উঠেছেন যাঁরা

এই আশ্রমের গোড়াপত্তন হয় ১৯৮৯ সালে, তখন মাত্র ৬ জন শিশুকে নিয়ে আশ্রম শুরু করেছিলেন মাধব ভট্টচার্য। দেশভাগের আগে তাঁর বাবা অর্থাৎ রাজের ঠাকুর্দা চলে আসেন পূর্ববঙ্গ থেকে। ছোটবেলায় রিফিউজি কলোনিতে অনেকটা কষ্ট করে বড় হয়েছেন মাধব ভট্টাচার্য। ছোট করে ব্যবসা শুরু করেন তরুণ বয়সে। কিন্তু তিনি আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যে সন্তুষ্ট ছিলেন না।

''একটা মানুষ তার ছোটবেলা দেখেছে রিফিউজি ক্যাম্পে। নিজেকে বড় করেছে, এডুকেশন কমপ্লিট করেছে, সে ভাবল যে এমন আরও কিছু মানুষ, যাদের কেউ নেই, তাদের যদি পাশে দাঁড়ানো যায়, বলেন রাজ, ''ততদিনে তার নিজের একটা ছেলে আছে, আরও ৬ জন বাচ্চা, এইভাবে শুরু হয় আশ্রম। বাবার মতো করেই তাদেরকে দেখত। আমিও মিশে গিয়েছিলাম তাদের সঙ্গে। সেই ৬জনই আজ প্রতিষ্ঠিত, আমিও প্রতিষ্ঠিত আমার মতো করে। ছোটবেলায় যখন পাশে থাকতাম, তখন বুঝতাম ওদের মা নেই, বাবা নেই... এই ক্রাইসিসটা খুব মারাত্মক। এটা ভালো মানুষও তৈরি করতে পারে আবার এই ক্রাইসিস থেকেই খারাপ মানুষও তৈরি হতে পারে। যাতে তাদের সঠিকভাবে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানো যায়, তারই জন্য এই আশ্রম। বাবা একা একা যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে। আমি এখান থেকে যতটা পারছি করছি।''

Founder Madhab Bhattacharya with the students of his orphanage আশ্রমের বাচ্চাদের সঙ্গে মাধব ভট্টাচার্য।

৬ জন শিশু নিয়ে যে আশ্রম শুরু হয়েছিল সেই আশ্রমে বর্তমানে থাকে প্রায় ৬০ জন আবাসিক। আশ্রমের মেয়েদের বিভাগটি চালু হয়েছে দশ-বারো বছর আগে। এখন এই আশ্রমের মধ্যেই রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং একটি কলেজ যেখানে পড়ানো হয় ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন। আশ্রমের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার জন্য রয়েছেন সর্বক্ষণের প্রায় দশজনেরও বেশি কর্মী। আশ্রমেরই কয়েকজন আবাসিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে স্বেচ্ছায় আশ্রমের কাজে অংশগ্রহণ করেন তাঁদের নিজেদের পেশার কাজ সামলে। আশ্রমের নিজস্ব গোশালা, বাগান, পশুপাখিদের লালন-পালনের জায়গা, নিজস্ব পুকুর, মন্দির, প্রার্থনাঘর, খেলার মাঠ সবই তৈরি হয়েছে একটু একটু করে। রাজ জানালেন, সবটাই ব্যক্তিগত ডোনেশনের উপর নির্ভর করেই হয়েছে। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কোনও অনুদান নেই।

Kamakhya Balok Ashram Orphanage music class কামাখ্যা বালক আশ্রমের মিউজিক ক্লাস। ছবি সৌজন্য: রাজ

আরও পড়ুন: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির ভাইফোঁটা, দেখুন ভিডিও

''যে ক্রাইসিসের কথা বলছিলাম... এই বাচ্চাগুলো যদি কাল খারাপ হয়ে যায় না, বড্ড খারাপ হবে সমাজের পক্ষে। আমার মনে হয় সবার এগিয়ে আসার উচিত, একটু একটু করে যতটা পারা যায়... 'ছোট বালুকার কণা, বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল'', বলেন রাজ। ঘটনাচক্রে রাজ ভট্টাচার্য এই মুহূর্তে যে ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন, সেই ধারাবাহিকের মূল ভাবনাও কিন্তু প্রায় এক। আকাশ ৮-এর ৬ মাসের মেগা 'এক যে ছিল খোকা'-তে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন রাজ।

ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন উজানি দাশগুপ্ত। শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসন, শ্রম থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের পড়াশোনা শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে অটল এই চরিত্রটি এবং তারই সহযোগী রাজ। এই ধারাবাহিক তাই অভিনেতার অত্যন্ত মনের কাছাকাছি, এমনটাই জানালেন তিনি। রাজ বলেন, ''বাংলা টেলিভিশনে অনেক বছর কাজ করছি, নানা ধরনের চরিত্র করেছি। কিন্তু এই কাজটা করতে করতে আমাদের আশ্রমের সঙ্গে ভীষণভাবে রিলেট করতে পারি। আজ ভাইফোঁটার দিনে আমরা অনেক আনন্দ করছি, প্রিয়জনদের জন্য মিষ্টি-চকোলেট উপহার কিনে নিয়ে যাচ্ছি। আর বহু বাচ্চারা হয়তো কিছুই খেতে পায়নি সারাদিন ধরে। তাদের আপন করে নিয়ে, তাদের মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার মতো কেউ নেই। এই কঠিন বাস্তবকে সব সময় মাথায় রাখা প্রয়োজন। যতটা সম্ভব এই বাচ্চাদের আপন করে নেওয়া প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকে এইভাবেই ভাবতে শিখিয়েছে বাবা।''

Bengali Serial Bengali Actor Bengali Television
Advertisment