কেমন আছেন?
বেশ ভাল।
'ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বড়পর্দা, সবেতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী', বলছেন ফ্যানেরা.. কী বলবেন?
দাপিয়ে বেড়াচ্ছি কিনা জানি না। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এই বছরেই শিকে ছিঁড়লাম। 'গোরা' দিয়ে শুরু। সামনেই 'মুক্তি' আসছে। তবে 'গোরা' যে দর্শকদের খুব ভাল লেগেছে, সেটা বুঝতে পারছি।
সিনেমা হোক কিংবা সিরিজ, কোনও চরিত্র রিপিট করেননি আজ অবধি। কখনও ধূসর আবার কখনও বা অবসাদগ্রস্থ নায়ক, এই ভার্সেটাইলিটি বজায় রাখেন কীভাবে?
ভার্সেটাইল চরিত্রে অভিনয় করা, আমার প্রাথমিক চাহিদা বলতে পারেন। কিন্তু এই চাহিদা যে সবসময় পূরণ হয়, তেমনটা নয়। কিন্তু আমি ভাগ্যবান যে এধরণের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আমার কাছে আসছে, এবং খুব আনন্দের সঙ্গেই সেসব কাজ করছি। তাছাড়া, আমি বিশেষভাবে খেয়াল রাখি যাতে, চরিত্রটা যেন একটু আলাদা হয়। ব্যক্তিগতভাবে যথাসম্ভব ভার্সেটাইলিটি বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
দর্শকদের কিন্তু বেজায় পছন্দ হয়েছে এই ভুলোমনা গোয়েন্দা গোরাকে… ছকভাঙা গোয়েন্দাগল্পের কনসেপ্টটাই কি ইউএসপি?
যে কোনও গোয়েন্দা গল্পতেই গোয়েন্দার চরিত্রের গাঁথুনিটা ইম্পরট্যান্ট। সেটা 'শার্লকহোমস' হোক কিংবা 'ফেলুদা'। 'গোরা'ও সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে আমাদের যে প্রচলিত ধারণা, গোরা এক্কেবারে তার উলটো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষ। এবং এটাই গোরার ইউএসপি। চ্যালেঞ্জিং তো বটেই! তবে নতুনত্বও ছিল। পাশাপাশি ওতটাও গোয়েন্দাসুলভ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল না। গোয়েন্দা গোরা আবার গান গেয়ে ক্লু মনে রাখে। গোরা চরিত্রের ইউনিকনেস দেখেই কাজ করার ইচ্ছেটা আরও দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে মানুষ কীভাবে নেবেন, সেটা একটা বড় চিন্তা ছিল আমাদের। কিন্তু সিরিজ রিলিজ করার পর দেখছি, দর্শকদের বেশ পছন্দ হয়েছে গোরার গোয়েন্দাগিরি।
হ্যাঁ, দর্শকরা এখন অপেক্ষা করছেন 'গোরা'র সেকেন্ড সিজনের জন্য..
সদ্য প্রথম সিজন মুক্তি পেয়েছে। তাই আমরা চাইছি, মাসখানেক বাদেই 'গোরা'র সেকেন্ড সিজন আসুক।
বাঙালির দেশপ্রেম, ফুটবলপ্রীতির কথা মাথায় রেখে অনেকেই 'মুক্তি'র ট্রেলার দেখে 'গোলোন্দাজ'-এর সঙ্গে তুলনা করছেন, কী বলবেন?
'মুক্তি'র কাজ কিন্তু 'গোলোন্দাজ'-এর অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। তাই আমি বলব, যাঁরা তুলনা করছেন, তাঁদের প্রেম নিশ্চয় 'গোলোন্দাজ' থেকেই শুরু হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশে একটাই কথা বলব, 'মুক্তি' সিরিজটা দেখুন। প্রথমেই তুলনা টেনে দৌঁড়তে নেই। সিরিজ দেখার পর তুলনা টানুন।
কী মনে হয়, ওটিটি-ই কি ভবিষ্যৎ?
বর্তমানে যে পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি, ওটিটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। তবে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম-ই একমাত্র ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে কিনা, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এটা সত্যি যে, সিনেমা রিলিজের ক্ষেত্রেও ওটিটি ভবিষ্যতে একটা বড় জমি দখল করে নেবে। আরও বছর পাঁচেক বাদে ছবিটা আরও পরিষ্কার হবে আশা করি। ওটিটি ইতিমধ্যেই শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
টলিউডের তুলনায় বলিউড কি একটু বেশিই ওটিটি রিলিজের দিকে হাঁটছে? কারণ, অতিমারীতে একাধিক হিন্দি সিনেমা ডিজিটালি মুক্তি পেলেও বাংলার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি!
তবে, অতনু ঘোষের পরিচালনায় '৭২ ঘণ্টা' নামে আমার একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম 'চরকী'-তে। এই সিনেমায় আমার পাশাপাশি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা, ইন্দ্রাণী হালদার, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের মতো টলিউডের বহু দক্ষ শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। তবে, আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী একথাও সত্যি যে, অমিতাভ বচ্চনের সিনেমাও ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে। সিনে-ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য বর্তমানে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা সকলেই দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, সিনেমার সঙ্গে জড়িত শিল্পী, কলা-কুশলীরা চান দর্শকরা হলে গিয়ে বড়পর্দায় ছবি দেখুন। কারণ, হাজার হোক বড়পর্দায় সিনেমা দেখার আমেজই আলাদা। তাই যাঁরা প্রেক্ষাগৃহে রিলিজের পথে হাঁটছেন, তাঁদের অপেক্ষা করাটাও ন্যায্য বলে মনে করি।
আপনার কি মনে হয় টালিগঞ্জে আপনি আন্ডাররেটেড?
আমার একেবারেই আন্ডাররেটেড বলে মনে হয় না। উলটে এটা ভাবি যে, আমি যে সময় থেকে ছবি করছি, সেই সময় থেকে আজ অবধি যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ ছবিতেই আমি আছি। সেটা 'শব্দ', 'আসা যাওয়ার মাঝে' হোক কিংবা 'জৈষ্ঠপুত্র'। বাংলা সিনেমায় রেগুলারলি কাজ করি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছি-করছি।
আপনার একের পর এক সিনেমার ঘোষণা দেখে, অনেকেই বলেছিলেন, "এবার একটু বিরতি নিন… পরপর অনেক ছবি করছেন, একেঘেয়েমি লাগছে.." দর্শকদের এমন বক্তব্য নিয়ে আপনি কী বলবেন?
যখন আমার মনে হবে আমার বিরতির প্রয়োজন, একেঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে, আমি ঠিক সরে দাঁড়াব। ওই সোশ্যাল মিডিয়ার দর্শকদের এহেন মন্তব্য নিয়ে আমার একেবারেই কোনও মাথাব্যথা নেই। আমি এহেন সমালোচকদের একটাই কথা বলব যে, আমার কাছে অনেকগুলো ছবির প্রস্তাব আসছে, আমার পছন্দ হচ্ছে। তাই আমি করছি। আমার কাছে আরও অনেক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আসবে, আমি সেগুলোও করব, তাঁদেরকে জানিয়ে রাখলাম।
অনেকেই বলিউডের হাতছানিতে সাড়া দিচ্ছেন, সিরিজ কিংবা সিনেমার ক্ষেত্রে আপনার কাছে প্রস্তাব এলে সাড়া দেবেন?
হ্যাঁ, সেরকম লোভনীয় হাতছানি হলে আমি সাড়া দেব।
গত ১ দশকে 'অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী'কে কোন জায়গায় রাখবেন?
খুব সাবলীল কিংবা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই গত এক দশকে আমার কেরিয়ারগ্রাফ উর্দ্ধমুখী। কাজের অভিজ্ঞতা বেড়েছে। অনেক কাজ করেছি। পরিশ্রমের সুফলও পেয়েছি। আর এই এক দশকে মানুষের ভালবাসা বেড়েছে। আগে দর্শকরা আমাকে যতটা পছন্দ করতেন, এখন তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ আমার কাজ পছন্দ করেন। অভিনেতা হিসেবে এটাই তো পাওনা।
হিরো না অভিনেতা নিজেকে কোন আসনে বসাবেন?
আলবাৎ! অভিনেতা। আর কিচ্ছু নয়।
এমন কোনও হলিউড কিংবা বলিউড সিনেমা, যার বাংলা রিমেক হলে আপনি অভিনয় করতে চান?
সেরকম কোনও চয়েস নেই। তবে 'শোলে'র বাংলা রিমেক হলে গব্বর সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
নবাগত কোনও স্ক্রিপ্ট রাইটার কিংবা পরিচালক, ভাল গল্প নিয়ে আপনার কাছে প্রস্তাব রাখলে, আপনি কি অভিনয় করতে রাজি হবেন?
আমি আগেও নবাগত পরিচালক, স্ক্রিপ্ট রাইটারদের সঙ্গে কাজ করেছি। এখনও তাতে আপত্তি নেই। তবে স্ক্রিপ্ট পড়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই। এমনকী, আমার পরবর্তী সিনেমা 'গু কাকু: দ্য পটি আঙ্কল'-এর পরিচালক মনীশ বসুও কিন্তু এই সিনেমা দিয়েই টলিউডে ডেবিউ করছেন পরিচালক হিসেবে। আগে এডিটর ছিলেন। ওঁর সঙ্গে আমার আলাপ অবশ্য বহুদিনের। আমার শৈশবের বন্ধু। ফেব্রুয়ারি মাসেই শুট শুরু করব। আমার ইচ্ছে রয়েছে, ভবিষ্যতে এরকম আরও অনেক নবাগত পরিচালক, স্ক্রিপ্ট রাইটদের সঙ্গে কাজ করার।
টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অনেক অভিনেতা এখন নেতা হয়ে যাচ্ছেন, নায়ক বিধায়ক হচ্ছেন, এটাকে কীভাবে দেখেন আপনি?
সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। এবং অবশ্যই সেই মানুষগুলোর ব্যাপার, যাঁরা তাঁদেরকে ভোট দিয়ে বিধায়ক করেছেন। (হেসে)
আপনার ব্যক্তিগত কোনও রাজনৈতিক ভাবধারা, ডান কিংবা বাম?
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভাবনা আছে বটে! তবে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমার মতে, মানুষের জন্যই রাজনীতি। রাজনীতির জন্য মানুষ নয়। আমরা সাধারণ মানুষরা যাঁরা ভোট দিই, তাঁদের জন্যই রাজনীতি। সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনও রাজনৈতিক রং-দলের অন্ধ-সমর্থক হয়ে উঠতে পারিনি এখনও।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন