scorecardresearch

অপরাজিতা আঢ্যকে সিনেমায় আমিই নিয়ে এলাম, আজ খোঁজও নেয় না: অনামিকা সাহা

পর্দা-কাঁপানো খলনায়িকা থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বুকে মাথা রেখে শুটের অভিজ্ঞতা, কেমন ছিল? জানালেন অভিনেত্রী।

Anamika Saha, Anamika Saha films, Aparajita Adhya, অনামিকা সাহা, অনামিকা সাহার সিনেমা, অপরাজিতা আঢ্য, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, bengali news today
অনামিকা সাহা, অপরাজিতা আঢ্য (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ )

বিগত কয়েক দশক ধরে বড়পর্দা থেকে যাত্রার মঞ্চ কাঁপিয়ে এসেছেন। সব ভূমিকায় সমানভাবে সাবলীল। খলনায়িকা থেকে মমতাময়ী মায়ের চরিত্রে দক্ষ অভিনেত্রী। আট-নয়ের দশকে বাংলা সিনেমার খলনায়িকা মানেই অনামিকা সাহার ডাক পড়ত। তবে মেয়ের আপত্তিতে পরের দিকে রাশ টেনেছিলেন নেতিবাচক চরিত্রে। একটা সময়ে স্টুডিও পাড়ার কলটাইম থাকত রোজ, সেই সঙ্গে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে চুটিয়ে মঞ্চাভিনয়ের ব্যস্ততা। তবে কাজের গতি এখন অনেকটাই কমেছে। অনামিকা সাহার আক্ষেপ, “এখনকার পরিচালক-প্রযোজকরা আমাদের জন্য চরিত্র ভাবেন না। একটা সময় ছিল, যখন আমাদের কথা ভেবে চরিত্র লেখা হত।” পর্দা কাঁপানো খলনায়িকা থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বুকে মাথা রেখে শুটের অভিজ্ঞতা, কেমন ছিল? নস্ট্যালজিয়া ঘেঁটে টলিপাড়ার ‘পুরনো সেই দিনের কথা‘ শোনালেন ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা‘কে। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ

আসল নাম ছিল উষা। তবে সিনেজগতে পা রাখার পরই নাম পাল্টে রাখেন অনামিকা সাহা। অভিনয় কেরিয়ারের শুরুয়াৎ সত্তরের দশকে ‘আশার আলো’ দিয়ে। পরের বছরই তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’ ছবিতে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন অনামিকা। বছর কয়েকের মধ্যেই পরপর বেশ কয়েকটি ছবিতে নজর কাড়েন। কেরিয়ারের তখন গোড়ার দিক, অনামিকা ডাক পান খ্যাতনামা পরিচালক শক্তি সামন্তর কাছ থেকে। মুম্বইয়ে তখন তাবড় তাবড় তারকাদের নিয়ে সিনেমা করছেন তিনি। সেই সময়ে পরিচালক ‘বরসাত কি রাত’-এর বাংলা ভার্সন ‘অনুসন্ধান’ ছবিতে ‘ফুলকলি’র চরিত্রের জন্য অনামিকা সাহাকে ডাক পাঠালেন। সবুজ সংকেত দিতে দেরি করেননি অভিনেত্রী। তবে মুম্বইতে গিয়েই বিপাকে পড়লেন অনামিকা।

রানি মুখোপাধ্যায়ের ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করার ডাক পান অনামিকা.. (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

কলকাতার সাধারণ ঘরের মেয়ে মায়ানগরীতে গিয়ে দেখলেন জীবন যেন এখানে গাড়ির মতোই দ্রুত ছুটে চলেছে। কেউ কারও জন্য একমুহূর্ত অপেক্ষা করতে নারাজ। অনামিকার কথায়, “ফুলকলি রে ফুলকলি গানের শুট করছি, একদিনের মাথাতেই টের পেলাম, এভাবে কাটানো আমার পক্ষে অন্তত সম্ভব নয়! মদ-সিগারেট খেতে হবে। বন্ধুত্ব করতে হবে। তখন তড়িঘড়ি আমার প্রেমিককে ফোন করে বললাম, তুমি এখান থেকে শিগগিরি নিয়ে যাও। আমি ফেরার পর শক্তি সামন্ত তখন রাতারাতি প্রেমা নারায়ণকে নিয়ে শুট শেষ করলেন।”

খলনায়িকার চরিত্র কতটা উপভোগ করতেন? অনামিকার জবাব, “একটা সময়ে যেমন ‘গব্বর সিং আ জায়েগা’ বলে বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো হত, ‘ঘাতক’ রিলিজ করার পর গ্রামেগঞ্জের ঘরে-ঘরে কচিকাচাদের বিন্দু মাসির ভয় দেখিয়ে শান্ত করানো হত বলে শুনেছি। এতটাই হিট সেই চরিত্র। গ্রামগঞ্জে যখনই যাত্রা-থিয়েটার করতে যাই, তখন চারদিকে ‘বিন্দু মাসি-বিন্দু মাসি’ নামে শোরগোল পড়ে যায়। সিনেমার একেকটা সংলাপ, আর দর্শকাসন থেকে চিৎকার ঠেকায় কে?”

বিন্দু মাসির চরিত্রে অনামিকা সাহা

বছর দুয়েক আগে রানি মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করার ডাক পেয়েছিলেন অনামিকা সাহা। শুধু তিনিই নন, অভিনেত্রীর স্বামী বোধিসত্ত্ব মজুমদারের কাছেও রানির বাবার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব এল। কিন্তু বাদ সাধল করোনা। বোধিসত্ত্ব বিদেশে গিয়ে সেই সিনেমার শুট করে এলেও অনামিকা যেতে পারলেন না করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য। সেই আফশোস এখনও রয়েছে অভিনেত্রীর।

কথাপ্রসঙ্গেই অনামিকা আক্ষেপ, “অপরাজিতা আঢ্যকে আমিই হাত ধরে সিনেমায় সুযোগ করিয়ে দিলাম। সেটা ছিল স্বপন সাহার ‘শিমুল-পারুল’ সিনেমা। সেটার জন্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বকুনিও খেয়েছি। ওর সঙ্গে তখন আমার সম্পর্কটাও মা-মেয়ের মতো ছিল। দু’জনে তখন ‘তৃষ্ণা’ নামে একই সিরিয়ালে অভিনয় করছি। ‘মামমাম’ বলে ডাকত আমাকে। আমার মেয়ে চলে গিয়েছিল বেঙ্গুলুরু পড়তে। ও সেই শূন্যস্থানটা পূরণ করেছিল। কিন্তু আজ অপরাজিতা এই জায়গায় পৌঁছেছে, কোনওদিন-কোথাও আমার নাম করেনি।”

বিজলী সিনেমাহলের বাইরে ১০০ দিন অনামিকা সাহার কাটআউট রাখা হয়েছিল… (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

খলনায়িকার বাইরে মমতাময়ী মায়ের চরিত্রেও ‘হিট’ তিনি। প্রসেনজিতের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ‘মায়ের আঁচল’ ছবিতে। এতটাই সুপারহিট হল যে, বিজলী সিনেমাহলের বাইরে ১০০ দিন অনামিকা সাহার একটা কাটআউট রাখা হয়েছিল। অভিনেত্রী বললেন, “বুম্বার সঙ্গে একশোর-ও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছি। সে-ও এখন খবর নেয় না। আমি কিন্তু জন্মদিন বা ওঁর ভাল কোনও খবর পেলে শুভেচ্ছা জানাই।”

সিনেমার পাশাপাশি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন। তবে এখনকার কাজের ধরণ তাঁর পছন্দ নয়, সাফ জানালেন অনামিকা সাহা। কিন্তু ইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন থেকে দূরে থাকতে পারেন না। মনের মতো চরিত্রে অভিনয়ের খিদে তাঁর আজও রয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Entertainment news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Bengali actress anamika saha shares her filmy journey