/indian-express-bangla/media/member_avatars/2024-09-09t054139041z-fb.jpg )
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/05/sLZJ6hHiVgh7DeLKFGaQ.jpg)
Ritabhari Chakraborty : কীভাবে সুখের বাড়ি সাজাতে চান তিনি? Photograph: (Instagram)
Ritabhari Chakraborty-Grihostha: কখনও তিনি 'বহুরূপী'র পরী, কখনও তিনি 'ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্ম'টির শবরী, আবার কখনও তিনি 'ফাটাফাটি'র ভীষণ মিষ্টি ফুল্লরা। একের পর এক ট্রেন্ড সেট করছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। অভিনেত্রী হিসেবেও তিনি যেভাবে আইকনিক সব ক্যারেকটার উপহার দিচ্ছেন, বাহ বাহ করার মত। আর এবার তিনি 'গৃহস্থ' নিয়ে ফিরছেন। মৈনাক ভৌমিকের সঙ্গে তাঁর ছবিতে একদম অন্যরকম ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
তাই তো, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে যখন তাঁর কাছে ফোন গেল, মৈনাকের পরবর্তী ছবি বাৎসরিকের শুটিং করছিলেন তিনি। সেই ব্যস্ততার পরেও বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।
১) মৈনাক ভৌমিকের গৃহস্থ কেন?
খুব ইন্টারেস্টিং একটা স্ক্রীপ্ট ছিল আরকি। আসলে, অভিনেতা হিসেবে আমাদের তো একটা ব্যাপার থাকে, যে একই ধরনের কাজ করে আসছি, সেখানে এমন একটা চরিত্র, যেখানে নিজেকে ভেঙে আমি অভিনয় করতে পারব, সেটা ছিল গৃহস্থ। একে তো থ্রিলার, তাঁর সঙ্গে একটা লেয়ার থ্রিলার। অনেকটাই অন্যরকম স্কোপ দেখেছিলাম। আর ওর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে ছিল।
২) এরপর মৈনাক ভৌমিকের বাৎসরিক আসছে, সেখানে তো শতাব্দী রায়ের সঙ্গে কাজ...
হ্যাঁ, এই তো শুটিং চলছে। আসলে, মৈনাকের সঙ্গে দেখা হওয়া, ভাল কাজ হওয়ার বিষয়টা একটা বড় পাওয়া আমার কাছে। আমরা খুব সুন্দরভাবে কোলাবরেট করে কাজটা করতে পেরেছি। মৈনাক পরিচালক হিসেবে খুব সোর্টেড। আমি খুব খুশি যে ও আরেকটা গল্প আমায় ভেবে লিখেছে। এই ছবিতেও আমি অনেকটা জায়গা জুড়ে আছি। এবং শতাব্দী দিও সমান সমান জুড়ে আছে।
৩) এই ছবিতে তোমার চরিত্রের ভাঁজটা কেমন? এর আগে বহুরূপীতে মানসিক অবসাদযুক্ত এক নারীর ভূমিকায় ছিলে, এখানে কি তবে...
না, আমি বলব মানসিক চাপের থেকে বড় হল এই মানুষটি অনেক ট্রমার ওপর দিয়ে গিয়েছে। ও সারাজীবন কিন্তু এরকম না। ওর বর্তমানটা খুব অগোছালো। এতকিছু জীবনে দেখেছে, বর্তমানের পরিস্থিতিতে ও ভীষণ প্যারানয়েড। সবসময়, ও ওর সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করে। প্রতিটা সিচুয়েশনে ও খুব ভয় পায়। সবসময় ভাবে, এই বুঝি ও অসুস্থ হয়ে পড়ল। বারবার করে হাত ধুতে থাকে। সবসময় লোকজনকে বলে, এখানে জুতো খোলো, এখানে বসো। মানে, আমরা হয়তো করোনার সময় যা করতাম, সেরকম। নিজের বরকে পর্যন্ত কাছে আসতে দেয় না। কিন্তু ও বাস্তবে এমন না। ও খুব মিষ্টি। স্কুলে কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করত। কিছু ট্রমা ওকে এমন ঘেঁটে দিয়েছে, যে কেউ বাড়ির সামনে পটকা ফাটালে ও পুলিশ ডেকে আনে। পাড়ার লোক ওকে পাগলী পাগলী ডাকে। এইসময় একটা ঘটনা ঘটে, যে সে একটা খুন দেখে ফেলে, কিন্তু পুলিশ, পাড়ার লোকজন কেউ এগুলো বিশ্বাস করে না। তখন ও বুঝে যায় যে এই লড়াইটা ওর একার। আর যে বাড়িতে ও সেই মার্ডার হয়ে দেখেছ, সেখানে অনুশা থাকে, তাই ওকে বাঁচানোর দায়িত্বও এখন ওর।
৪) ঋতাভরী কি ইন্ডাস্ট্রির গোয়েন্দা?
একেবারেই না। আমি সবকিছুতেই খুব কেয়ারলেস। না, আমার গসিপ নিয়ে আগ্রহ আছে। না, আমার কারওর জীবন নিয়ে আগ্রহ আছে, না আমার কারওর প্রজেক্টে উঁকি মারার ইচ্ছে আছে। সবাই করছে, খুব ভাল। সবাই ভাল থাকুক, কাজ করুক। আমি তো গৃহস্থের অপর্ণার মত নয়। আমার পছন্দের বিষয় থ্রিলার কিংবা রহস্য। তবে, বাস্তবে অকারণ থ্রিল পছন্দ না। আর না তো আমি অন্যের হাঁড়িতে উঁকি মারতে চাই।
৫) তোমার কেমন 'গৃহস্থ' বাড়ি পছন্দ?
আমার এমন একটা বাড়ি পছন্দ, যেটা খুব গোছানো হবে, ভালবাসায় মোড়া হবে। অনেক গাছপালাওয়ালা থাকবে। যেন দেখে মনে হয় এখানে মানুষ থাকে। হোটেল যেন না মনে হয়। কিছু সুন্দর মুহূর্তের বিশেষ ছবি। তারপর হচ্ছে, আমাদের জীবনে যে মানুষগুলো খুব দামী, তাঁদের পছন্দের রঙের পর্দা, তারপর ধরো বিশেষ কারওর দেওয়া উপহার বা ফুলের তোড়া ডাইনিংয়ের মাঝে থাকবে, এমন কিছুই আমার পছন্দ। মানে, যে ঘিরে ঢুকলে মানুষ বুঝতে পারবে যে এখানে খুব সুখী সুন্দর পরিবার থাকে।
৬) তোমার কী মনে হয়, সন্তানের সঙ্গে মায়ের বন্ধন অনেকটা বেশি বাবাদের তুলনায়?
আমার মনে হয় প্রকৃতিগতভাবে কিংবা পরিবেশগতভাবে সকলেই তাই। মেয়েরা যেহেতু সন্তানের জন্ম দেয়, তাই তাঁদের ভাব এবং বন্ধন বাবাদের তুলনায় অনেকটা বেশি হয়। সন্তানদের ধারেকাছে তাঁরা কাউকে আসতে দিতে চায় না। আর আমি বায়োলজিক্যালিভাবে এখনও মা নয়, কিন্তু এতবছর ধরে ৮৬টা মুক ও বধির বাচ্চার মা, ওরা শুনতে পায় না, বলতে পারে না, কোথাও যেন আমার কাছে এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ, যে ওদের না বলা কথাগুলো বুঝে যাওয়া।
৭) ওয়ার্কিং মাদারদের উদ্দেশ্যে কী বলতে চাও?
আমার কিচ্ছু বলার নেই। ওনারা প্রত্যেকে অজস্র স্যালুট দাবি রাখেন। সত্যি বলতে গেলে, আমাদের ওনাদের থেকে জিজ্ঞেস করা উচিত যে জীবন কিভাবে চালাতে হয়, সবকিছু ব্যালেন্স কীভাবে করতে হয়। আমি তো ছোট থেকে আমার মাকে দেখেছি, উনার তো স্বামীর সাপোর্ট ছিল না। তারপরও আমাদের দুইবোনকে মানুষ করেছেন। এমনকি, নিজের কেরিয়ার সামলেছেন। তারপর সোশ্যাল কাজ করে এত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এসব মানুষের জন্য আমার ভীষণ শ্রদ্ধা কাজ করে। তাঁদের থেকে আমি শিখি।
৮) তোমার মা একজন সিঙ্গেল মাদার, এর প্লাস এবং মাইনাস পয়েন্ট কিছু অনুভব করেছ কোনোদিন?
এই বিষয়ে প্লাস মাইনাসের কোন প্রশ্ন আছে কিনা বলতে পারব না, তবে আমি মনে করি যা হয় ভালোর জন্যই হয়। মা যেইভাবে আমাদেরকে শক্তি দিয়ে বড় করেছে, সেটা প্রশংসার যোগ্য। মা যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের বড় করেছে, সেটা বারেবারে আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি শুধু এটাই মনে করি, ওই সময় দাঁড়িয়ে মা যখন পেরেছে, মানুষের সাথে সবটা সম্ভব করে দেখিয়েছে, তাহলে আমি কেন পারব না? আসলে মায়ের এই স্ট্রাগলটা আমরা বহু বছর ধরে চোখের সামনে দেখেছি।
যদি নেগেটিভ কিছু বল, বাবা না থাকার বিষয়টা, আমাদের সামাজিক একটা গঠন আছে না, বাবা মা এবং সন্তান - এটি একটা সাইন্টিফিক বিষয়। কারো জীবনে বাবা না থাকা বিষয়টা কিন্তু খুব আনন্দের নয়। একটা চাপা কষ্ট, যন্ত্রণা কিন্তু আমাদের মধ্যে রয়েছে। মা প্রাণপণ চেষ্টা করে, কিন্তু বাবার জায়গাটা তো একটু অন্যরকম। আমি তো আমার জীবনের অনেকগুলো বছর এটা বুঝতেই পারিনি যে বাবার ভালোবাসাটা কেমন হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত সেরকম বাবার মতো কাউকে পেয়েছি।
৯) জীবনে প্রেমের বসন্ত কেমন লাগছে?
না আমার সুমিতের সঙ্গে সম্পর্কটা পুরো পরিবারের মতো হয়ে গেছে। ও আমার সব থেকে ভালো বন্ধু। আমি যেকোনো বিষয়ে ওর সাথে কথা বলতে পারি। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আমি যে সুপারওম্যানের মত সর্বত্র কাজ করে বেড়াচ্ছি, তার কারণ আমি জানি বাড়ি ফিরে একটা কথা বলার লোক আছে। ওর সামনে আমি সেই সুপারম্যান কিটটা খুলে ফেলে একদম সাধারণ হয়ে বসতে পারি। এটা আমার কাছে একটা খুব শান্তির জায়গা। সেজন্য আমি এটা নিয়ে খুব একটা কথা বলি না। কারণ, মানুষ বলে বলে, সেটায় গন্ডগোল পাকিয়ে দেবে।
১০) এই ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কিছু শিক্ষা পেয়েছে যেটা এখন অব্দি ভোলোনি?
কেউ কারওর নয়। এর থেকে বড় আমি জীবনে আর কিছু শিখিনি।