একদিকে সংঘর্ষে হতাহত হচ্ছেন দলীয় কর্মীরা। তৃণমূল-বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা যখন একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন, সেইসময় দোলের দিন রাজনীতির রংমিলান্তি দেখেছে বাংলার মানুষ। গঙ্গাবক্ষে নৌবিহার এবং দোল উৎসবে মাতলেন তৃণমূলের মদন মিত্র, দেবাংশু ভট্টাচার্য, শ্রীতমা ভট্টচার্য এবং অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী ও শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়রা। যা দেখে এবার ক্ষোভ চেপে রাখতে পারলেন না ইন্ডাস্ট্রি এবং দলেরই সহকর্মী রূপাঞ্জনা মিত্র। ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিয়ে লিখলেন, ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
রবিবার এক সংস্থার উদ্যোগে দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গাবক্ষে দোল উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেখানেই আমন্ত্রিত ছিলেন চার প্রার্থী। শুরু থেকেই চেনা মেজাজে ছিলেন মদন। সবাইকে আবির মাখানো থেকে শুরু করে ‘খেলব হোলি রং দেব না’, ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’, ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’, গানও গাইলেন চুটিয়ে । তিনি এদিন বলেন, ‘‘আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন আমাদের সংস্কৃতি তো বাংলার সংস্কৃতি। আর বাংলার সংস্কৃতি হল ‘খেলব হোলি রঙ দেব না, তাই কখনও হয়।’ এটা দোলের উৎসব। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর উৎসব।’’
একদিকে যখন ভোটের উত্তাপ পথে প্রচারে। তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীরা একে অপরকে আক্রমণ করছেন, কেউ কেউ দেখে নেওয়ার, মারার হুমকি দিচ্ছেন। সেখানে উলটপুরাণ গঙ্গাবক্ষে লঞ্চের উপর। বাহারি পাঞ্জাবি ও চিরাচরিত কালো রোদ চশমা পরে ঢাক বাজালেন মদন, সেই তালে কোমর দোলালেন পায়েল-তনুশ্রী-শ্রাবন্তীরা। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর সাফ কথা, ‘‘আজ তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম নয়, আজ রঙের উৎসব। আজ জেতা-হারার প্রশ্ন নেই, আজ শুধুই মজা।’’
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ভুলে তৃণমূল-বিজেপির এই দোলের 'পাওরি' দেখে ক্ষুব্ধ রূপাঞ্জনা। তিনি অনেক দিন আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তবে ভোটের মুথে বিজেপিতে যোগ দিয়েই প্রার্থী হয়েছেন পায়েল, তনুশ্রী, শ্রাবন্তীরা। টিকিট না পাওয়ার চাপা ক্ষোভ ছিলই। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা প্রকাশ্যে সে নিয়ে কোনও কথা বলেননি রূপাঞ্জনা। কিন্তু এদিনের ছবি যেন ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিল। ফেসবুকে মদন-শ্রাবন্তীদের ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, "সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বাকরুদ্ধ এই ছবি দেখার পর। স্লো ক্ল্যাপস!!"
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে রূপাঞ্জনা জানিয়েছেন, "বিজেপি প্রার্থী এবং কর্মীদের আরেকটু সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাজ্যের শীর্ষ স্থানীয় নেতা-নেত্রী-কর্মীরা যে হারে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবনের বাজি রেখে দিনরাত এক করে সংকল্পবদ্ধ হয়ে সোনার বাংলা গড়ার জন্য আপ্রাণ পরিশ্রম করে চলেছেন তাঁদের সৎ উদ্দেশ্য এত ঠুনকো নয়। আমার ধারণা এই সমস্ত রাজনৈতিক ফাঁদে পা দেওয়ার এই মুহূর্তে কোনও প্রয়োজন ছিল না।"
তিনি আরও বলেছেন, "মদন দা এবং খেলা হবে গানে আমাদের প্রার্থীরা তাল দেওয়ার সৌজন্যতা দেখালেও বিরোধী দলের প্রার্থীরা গং দে তু মোহে গেরুয়া গানে চুপ করে পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে আমরা ১৪০ জন বিজেপি কর্মীকে হারিয়েছি, সেখানে দাঁড়িয়ে আজকের এই ফুটেজ দৃষ্টিনন্দন ছিল না। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।"
রূপাঞ্জনার মতোই কয়েক বছর আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়া পরিচালক মিলন ভৌমিক একইভাবে ছবিগুলি শেয়ার করে ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। যে দলের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধ লড়ছে বিজেপি, তাদেরই প্রার্থীরা কীভাবে প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের সঙ্গে দোল খেলছেন তা নিয়ে উচ্চনেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।