Advertisment

বাংলা ছবির সেরা পাঁচ, এবং হলিউডের বঙ্গ অভিযান

কল্পনা করতে পারেন, পরিচালক টড ফিলিপসের 'জোকার' ছবিতে নাম ভূমিকায় বাংলায় সংলাপ বলছেন অভিনেতা হোয়াকিম ফিনিক্স?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bengali movie kedara

'কেদারা' ছবিতে কৌশিক গাঙ্গুলি

সম্প্রতি একটি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ তার সদস্যদের আহ্বান জানায়, ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবিগুলির মধ্যে থেকে তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ তিনটি ছবি বেছে নিতে। আপাত সহজ এই কাজ করতে গিয়ে কিন্তু এই প্রতিবেদক সহ অনেকেই টের পান, কাজটা ঠিক কতটা কঠিন।

Advertisment

এই পরিকল্পনা যাঁর মস্তিস্কপ্রসূত, সেই প্রাঞ্জল ব্যানার্জি পাঁচটি ছবির একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে আমাদের বলেছিলেন, প্রথম তিন বেছে নিতে। সেই পাঁচটি ছবি হলো - 'নগরকীর্তন', 'জ্যেষ্ঠপুত্র', 'কেদারা', 'কণ্ঠ', এবং 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত'। প্রাঞ্জল অত্যন্ত চমৎকার ফিল্ম রিভিউ লেখেন, সেগুলি ভাগ করে নেন ওই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে। এই তালিকাটি দেখলে বোঝা যায়, দর্শক হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান যে সাম্প্রতিক সময়ের সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্মরণীয় ছবি এবছর মুক্তি পেয়েছে।

যাই হোক, ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী তালিকাটি দাঁড়ায় এরকম - 'জ্যেষ্ঠপুত্র', 'নগরকীর্তন', 'কেদারা', 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত', এবং 'কণ্ঠ'। যে ক'টি ছবি একটিও ভোট পায় নি, সেগুলি হলো - 'শঙ্কর মুদী', 'শাহজাহান রিজেন্সি', 'মিতিন মাসি', 'শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য', 'সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে', 'সোয়েটার', এবং 'পরিণীতা'।

nagarkirtan bengali movie 'নগরকীর্তন' ছবির পোস্টার

তবে পাঁচটি ছবির মূল তালিকাটি সম্পর্কে আমি বলব, এটি সম্পূর্ণ চিত্র নয়। কারণ 'টপ ফাইভ'-এ নেই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের 'উড়োজাহাজ' অথবা অপর্ণা সেনের 'ঘরে বাইরে আজ'। কেন নেই, সেই প্রশ্ন ওঠেই। প্রখ্যাত পরিচালকরা কি তালিকা থেকে বাদ? ব্যক্তিগতভাবে দুটি ছবিকে নির্দ্বিধায় তালিকার শীর্ষে রাখতাম আমি - 'কেদারা' এবং 'কিয়া ও কসমস'। গত পাঁচ বছরে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এরকম ছবি দেখেনি। এছাড়াও দেরিতে আসা কিছু ছবি, যেমন 'রবিবার' বা 'প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো', তালিকায় স্থান পায়নি।

হলিউডের বাংলা, বাংলার হলিউড

কল্পনা করতে পারেন, পরিচালক টড ফিলিপসের 'জোকার' ছবিতে নাম ভূমিকায় বাংলায় সংলাপ বলছেন অভিনেতা হোয়াকিম ফিনিক্স? অথবা নোয়া বোমবাখ-এর 'ম্যারেজ স্টোরি' ছবিতে বাংলায় পর্দা কাঁপাচ্ছেন অ্যাডাম ড্রাইভার, স্কারলেট ইয়োহানসন এবং জুলিয়া গ্রিয়ার? এই দুই প্রশ্নের উত্তর "হ্যাঁ", "না", "বলতে পারব না", যে কোনও একটি হতে পারে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, বাংলায় এই জাতীয় ছবি পরিবেশন করতে গেলে যে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, তা ফেরত পাবেন কি বিনিয়োগকারীরা? পেলেও, লাভের পরিমাণ কতটা হবে?

আচ্ছা, প্রশ্নটা উল্টোদিক থেকে করা যাক। ষাটের দশকের উত্তম-সুচিত্রার কোনও সুপারহিট ছবি কি অবাঙালি তথা আন্তর্জাতিক দর্শকবৃন্দকে আদৌ কোনোভাবে আকর্ষিত করবে? এই দুই ক্ষেত্রেই ভেবে দেখতে হবে, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে ইংরেজি ভাষার আকর্ষণ কতটা, বিশেষ করে যদি তাঁরা নাগালের মধ্যেই পেয়ে যান হলিউডের ছবি। কোনও আকর্ষণ আছে কি? না থাকলে ওয়ান টেক মিডিয়া কোম্পানি (OTMC) কেন একদিকে হলিউডি ছবির বাজার, এবং অন্যদিকে খোদ হলিউডের কর্মক্ষেত্র, বাড়াতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে?

আরও পড়ুন: ভিন্ন যৌনতার চলচ্চিত্র উৎসব, ‘রবিবার’, ও ‘ঘরে বাইরে’-র সমীকরণ

অবশ্য এমন হতে পারে যে, এই পদক্ষেপ সীমিত থাকবে শুধুমাত্র ডিজিটাল মাধ্যমে ছবি দেখার ক্ষেত্রেই, অর্থাৎ অনলাইন। কিন্তু লক্ষ্য যদি বড়পর্দা হয়, তবে সেখানে জনতাত্ত্বিক বা ডেমোগ্রাফিক নিরিখে এগিয়ে পশ্চিমবাংলা, যা ছবি প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে লাভ এনে দেবে। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট বলছে, বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ ইংরেজি ছবি ভারতের অন্তত একটি আঞ্চলিক ভাষায় 'ডাব' করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে দর্শক সংখ্যা বাড়ে, অতএব বাড়ে ভারতের বাজার থেকে সেই ছবির মোট আয়।

দর্শক হিসেবে বাঙালির পছন্দ সৃজনশীল সৌন্দর্যবোধ, এবং ছবির ক্ষেত্রে বাঙালি দর্শক কী চান, তার একটি তালিকা তৈরি হলে কতকটা এরকম দাঁড়াবে: ১) বিনোদন ভিত্তিক এবং তথ্যসমৃদ্ধ বিষয়বস্তু; ২) ভালো অভিনেতা ও পরিচালক; ৩) ভালোভাবে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা; ৪) জমাটি গল্প; ৫) নিজের ভাষায় তৈরি ছবি।

যে ১০০ টি ছবি ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছে OTMC, সেগুলির মধ্যে অন্তত ২০টি হলিউড ছবি ইতিমধ্যেই বাংলায় 'ডাব' করা হয়ে গিয়েছে। এগুলির মধ্যে আছে 'দ্য ল্যান্ডলর্ড', 'হ্যাকার', 'ফ্লাইট ১৯২', 'স্কাইবাউন্ড' এবং 'ট্রাস্ট নো ওয়ান'। কিন্তু এতেই শেষ নয়, আরও আছে। কিছু মৌলিক বাংলা ছবিও সংগ্রহ করেছে OTMC, যদিও কিসের ভিত্তিতে এই ছবিগুলি বাছা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বক্স অফিসে লাভ, বিষয়বস্তুর উৎকর্ষ, স্টার কাস্ট, ছবিটি ক'টি পুরস্কার পেয়েছে, ইত্যাদি অনেকরকম কারণ থাকতে পারে। আপাতত এই ছবিগুলি DTH, কেবল, এবং OTT-তে উপলব্ধ।

jamuna barua প্রমথেশ বড়ুয়ার সঙ্গে যমুনা দেবী। ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমনস

'মেনকা হ্যাজ হ্যাংড হারসেলফ'

ওপরের শীর্ষকটি শর্মিষ্ঠা গুপ্তুর লেখা সাম্প্রতিক একটি উপন্যাসের নাম। শর্মিষ্ঠার লেখা আরও একটি বই, 'বেঙ্গলি সিনেমা: অ্যান আদার নেশন', প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। ইংরেজিতে লেখা বাংলা সিনেমার ইতিহাসের বিরল, সম্ভবত একমাত্র, উদাহরণ। এই বিষয়ে পিএইচডি করেছেন শর্মিষ্ঠা। তাঁর নতুন বই শুরুই হচ্ছে উপন্যাসের নায়িকা মেনকার আত্মহত্যা দিয়ে। আগামী ৭ জানুয়ারি শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে বইটি, যদিও ইতিমধ্যে ৫ ডিসেম্বর পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাতে উন্মোচিত হয়েছে এই উপন্যাস।

সিনেমা নিয়ে গবেষণাভিত্তিক, সিরিয়াস নন-ফিকশন ছেড়ে উপন্যাস কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে লেখিকা বলেন, "গত ১৫ বছর ধরে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস নিয়ে রিসার্চ করছি আমি, এবং সেটা করতে গিয়ে বুঝেছি, শিক্ষাজগতের বাইরে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক পাঠক-পাঠিকা, যাঁরা সিনেমার ইতিহাস নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী, যদি সেই ইতিহাস বলা হয় গল্পচ্ছলে। সুতরাং এই বইটি লেখার সিদ্ধান্ত নিই, যেখানে কাহিনি কল্পিত হলেও প্রেক্ষাপট হলো সিনেমার ইতিহাস।"

বইয়ের স্বীকৃতি পাতায় শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, "এই বইটি ১৯৩০-এর দশকের জনপ্রিয় নায়িকা মেনকা দেবীকেও স্মরণ করে (যদিও তাঁর জীবনের সঙ্গে এই কাহিনির কোনও মিল নেই), যাঁর শেষজীবন কাটে অশেষ দারিদ্রের মধ্যে। অনেকেই আছেন তাঁর মতো, অজানা এবং অখ্যাত, যাঁদের একসময় খ্যাতি এনে দিয়েছিল 'বায়োস্কোপ' নামক সেই কলঙ্কিত পেশা। এছাড়াও এখানে স্মরণ করি যমুনা দেবীকে, যিনি রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করেন 'দেবদাস' (১৯৩৫) ছবিতে পার্বতীর ভূমিকায়। তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন নিয়ে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দেন আমায়। এই দুই নারীর কাছেই আমি পেয়েছি সিনেমাজগত সম্পর্কে দুর্লভ অন্তর্দৃষ্টি।"

Bengali Cinema
Advertisment