ছবি: জ্যেষ্ঠপুত্র
অভিনয়: প্রসেনজিৎ, ঋত্বিক চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, গার্গী রায়চৌধুরি
পরিচালনা: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
রেটিং: ২.৫ /৫
"দাদা, বারান্দা থেকে একবার হাত নাড়িয়ে দিন না, তাহলেই চলে যাবে।" মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক করে দেওয়া বাংলোর বারান্দা থেকে হাত তুলে প্রণাম জানানো মাত্র ভিড় ভ্যানিশ। সুপারস্টার বলেই হয়তো সম্ভব! এই 'অন্য নায়ক'-কেই পর্দায় ফুটিয়ে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ছবির শুরুতেই টিম বলে দিয়েছে, মূল ভাবনা প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষের।
শুটিং চলাকালীন বল্লভপুর থেকে খবর আসে, পিতৃবিয়োগ হয়েছে ইন্দ্রজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (প্রসেনজিৎ)। দেশের বাড়িতে থাকেন কনিষ্ঠ পুত্র পার্থ (ঋত্বিক), তাঁর স্ত্রী ও মানসিক ভারসাম্যহীন 'মেজো' অর্থাৎ ইলা (সুদীপ্তা চক্রবর্তী)। খবর পেয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছন ইন্দ্রজিৎ। হাসিমুখে সামলান সুপারস্টার হওয়ার বিড়ম্বনা। ছোটভাই শখের থিয়েটার করেন, সঙ্গে চাকরি। দিন চলে যায়। আর আছে মেজো, যাকে প্রায়ই ঘরবন্দি করে রাখতে হয়।
প্রথমার্ধে ছবিটা বেশ মসৃণভাবে এগোলেও দ্বিতীয়ার্ধে কোনও উত্তরণ ঘটে না। অহং, ইগো, যন্ত্রণা, সবটাই যেন বড্ড তাড়াহুড়ো করে দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের চরিত্রে সাবলীল, সংযত। তবে পর্দায় চোখ সরানো যায় নি সুদীপ্তা চক্রবর্তীর থেকে। ঋত্বিকও নিজের জায়গায় জমি ছাড়েন নি। সব সত্ত্বেও কেমন যেন জমল না জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ পুত্রের যুগলবন্দী। বরং 'মেজো' সবটা লাইমলাইট কেড়ে নিল।
আরও পড়ুন, মৃণাল সেন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ‘উড়নচণ্ডী’-র পরিচালক
সাদা কাপড় জড়িয়ে সুদীপ্তার নাচের দৃশ্যে চোখ জল আসবে। সুপারস্টারের নিরিখে বাকিরা যে নিতান্তই সাধারণ, পোশাক সেই সামঞ্জস্য বজায় রাখল। সিনেমা এবং নাটকের ফারাক দেখিয়ে সাধারণের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন কৌশিক। আবার প্রসেনজিতের জনসংযোগ কর্মীর নাম নিয়ে সিনেমাহলের প্রথম সংযোগটা কার্যত জোর করে ঢোকানো মনে হল। এদিকে গার্গী, দামিনী রায়রা নিজেদের জায়গায় মানানসই।
রক্তের সম্পর্কই কি সবটা ঠিক করে দেয়? জ্যেষ্ঠপুত্র শব্দটা কতটা ভারী? তার থেকেও বেশি কঠিন কি সুপারস্টারের তকমা সমালানো? এতসব প্রশ্নের উত্তর এক লহমায় জানিয়ে দেবেন কৌশিক, তবুও মনে দাগ কাটে না দুই ভাইয়ের একান্ত দৃশ্য। বরং অনেক বেশি মনকে নাড়া দেয় তাঁদের একলা ফ্রেম। শীর্ষ রায়ের ক্যামেরা প্রত্যাশামতোই সুদক্ষ, সুন্দর প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ। সম্পাদনায় বাহবা দেওয়ার মতো কিছু চোখে পড়ল না। সব মিলিয়ে একটু হতাশই করলেন পরিচালক, অন্যের ভাবনায় বোনা চিত্রনাট্যের টানটা আলগাই রয়ে গেল।