লকডাউনের সময় প্রত্যেক শিল্পীই নিজের মতো এক একটা জার্নির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি তো আর যাই হোক ঠিক স্বাভাবিক নয়। মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ, গৃহবন্দি থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা থেকে শুরু করে অনিশ্চয়তা-- সবকিছুই ঘিরে ধরছে প্রত্যেকটা মানুষকে। লেখক-শিল্পীরা এই অভিজ্ঞতাগুলি অবশ্যই নিয়ে আসবেন তাঁদের গল্পে-গানে-চিত্রনাট্যে। ঠিক সেভাবেই অভিনেতা-পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তী ও সঙ্গীত পরিচালক অমিত বোস কম্পোজ করেছেন একটি গান।
বিগত ১৮-১৯ মার্চ থেকেই আংশিক স্বেচ্ছা আইসোলেশনে চলে গিয়েছিলেন বহু মানুষ। স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাতীয় বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়, গত সপ্তাহে স্থগিত করা হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও। প্রথমে শোনা গিয়েছিল আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন জারি থাকবে। এর পর ২২ মার্চ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে লকডাউন।
আরও পড়ুন: ‘পশুরা করোনা ছড়ায় না, মানুষ কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথাও বোঝেন না’
দৈনন্দিন জীবন যেমন বদলে গিয়েছে, খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কায় মানুষ বিহ্বল হয়েছেন, তেমনই গৃহবন্দি দশার এই বাধ্যবাধ্যকতায় মানুষের শ্বাসরোধও হয়েছে। বহু মানুষই অবসাদে ভুগছেন এই সময়। এমন মিশ্র অনুভূতি থেকেই সৌরভ লিখলেন একটি গান, সেখানে সুর ছোঁয়ালেন অমিত বোস। লকডাউনে বাড়িতেই একসঙ্গে রয়েছে 'ট্রিকস্টার'-এর কোর টিম। ২৭ মার্চ রাতে অভিনেতা-পরিচালকের ফেসবুক পেজে এল সেই গান--
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে আইসোলেশন জরুরি, গৃহবন্দি থাকা জরুরি। ১৩০ কোটির দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব গড়ে ৪৩৪ জন প্রতি বর্গ কিমি-তে, সেখানে মহামারী প্রতিরোধ করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন কাজ। এখনও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে ঠিকই কিন্তু সংখ্যাটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
''এমন একটা সঙ্কট আমাদের প্রজন্ম দেখেনি, আমাদের আগের প্রজন্মও। শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৩০-এ। কিছু ভাল দিকও আছে। আমাদের তো ফ্যামিলির সঙ্গে সময় কাটানো হয় না বা হয়তো আমরা বেশি লম্বা সময় কাটাতে পারি না। আমার এক মনোবিদ বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তিনি বলছিলেন এই সময়ে অনেক বেসিক ভ্যালুজ ফিরে আসতে পারে মানুষের মধ্যে। পশুপাখিরা ফিরে আসছে শহরে, নয়ডার রাস্তায় নীল গাই উঠে এসেছে। ধর্মতলা চত্বরে পাখিরা ফিরে এসেছে। এখন ওরা মুক্তভাবে নাগরিক আকাশে ঘোরাফেরা করতে পারে'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন সৌরভ, ''এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাস সম্পর্কে দুটি তত্ত্ব নিয়ে নাড়াচাড়া চলছে। একদল বলছেন ষড়যন্ত্র। কিন্তু কৃত্রিমভাবে তৈরি হলেও এই ভাইরাস কিন্তু নিজেই নিজের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অর্থাৎ কিছুটা হলেও তো এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রকৃতি। তাই দুম করে বলে দেওয়া মুশকিল। একটা কথা ঠিক যে এই ভাইরাস মানবসভ্যতাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দিল। এটা একটা রিয়্যালিটি চেক হয়তো আমাদের কাছে। এত এত যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক হেলিকপ্টার। কোনও কিছুই কাজে লাগছে না, সবই নিষ্ক্রিয়। বুঝিয়ে দিল, মানুষের ভাল থাকা সবার আগে প্রয়োজন।''
তাই আরও বেশ কিছুদিন দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতেই হবে। লকডাউনে যত বেশি করে এমন গান, কবিতা, ছবির সৃষ্টি হবে, ততই মানুষ এই কঠিন সময় অতিক্রম করার সাহস পাবেন, উদ্বুদ্ধ হবেন।