ছবি: মহালয়া
পরিচালক: সৌমিক সেন
অভিনয়ে: যিশু সেনগুপ্ত, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
রেটিং: ৩/৫
প্রবীণ হোন কিংবা জেনারেশন ওয়াই, প্রত্যেক বাঙালির কাছে 'মহালয়া' মানে ভোরবেলার রেডিও। এতটাই, যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অমর কীর্তি 'মহিষাসুরমর্দিনী'-কে পর্যন্ত তার আসল নাম ভুলে 'মহালয়া' বানিয়ে নিয়েছি আমরা। এবার আলোচনাটা ১৯৭৬ সালকে ঘিরে, যে বছর সাক্ষী হয়ে আছে উত্তম কুুমার-বীরেন্দ্রকৃষ্ণ টক্করের, বাঙালির প্রতিবাদ ও ঘটনাটি নিয়ে আকাশবাণীর অবস্থানের। সেই সমস্ত দিককে পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক সৌমিক সেন। তাই ছবির নিরিখে 'মহালয়া'-কে ডক্যু ফিচার বলাটাই যুক্তিযুক্ত।
বহুকাল ধরে চলে আসা ঐতিহ্য ভেঙে নতুন কিছু গড়ার ব্যাপারে বাঙালি বরাবরই সেকেলে। তবু অতি পরিচিত ছকের বাইরে গিয়েছিল আকাশবাণী। মহালয়ায় ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের স্তোত্রপাঠের বদলে মহানায়কের কণ্ঠে ‘দুর্গা দুর্গতিহারিণী’ শ্রোতারা শুনেছিলেন বটে, কিন্তু একেবারেই গ্রহণ করেন নি। পরের বছর আকাশবাণী আবারও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের 'মহিষাসুরমর্দিনী' সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল।
কেন আকাশবাণী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? কেনই বা উত্তম কুমার প্রস্তাবে রাজি হলেন? ফল কী হল? পঙ্কজ মল্লিকের সঙ্গে কি লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়? এই এত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে দু'ঘন্টায়।
আরও পড়ুন, ‘উত্তম কুমার ক্যামেরার পেছনে কেমন ছিলেন, বেশি কেউ জানেন না’
বেশ দক্ষতার সঙ্গে পুরোনো ও আধুনিকের বিরোধ সামলেছেন পরিচালক। শিক্ষক ও অনুরাগীর সম্পর্কের সমীকরণ বলেছেন। অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে গেলে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকায় শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে ভাবা অসম্ভবই ছিল। যাঁরা বীরেনবাবুকে কন্ঠের, বা বড়জোর ছবির দৌলতেই চেনেন, তাঁদের মননে শুভাশিসই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র হয়ে থাকবেন। উত্তমের ভূমিকায় যিশু বেশ মানানসই। রুপোলি পর্দার কিংবদন্তির অনুকরণ করতে হয়েছে তাঁকে। কাজটা যে কোনো অভিনেতার রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
নতুন রূপে পর্দায় ধরা দিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ভাল অভিনয় করেছেন সপ্তর্ষি রায় ও শুভময় চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কাঞ্চন মল্লিক, জয়ন্ত কৃপালনির চরিত্র একটু কম নাটকীয় হলেও চলত। পর্দায় রবীন্দ্রনাথকে যতটুকু দেখানো হয়েছে সেটা না হলেও চলত। তবে বিশেষ করে গল্প বলাটা যখন উদ্দেশ্য, সেখানে সেপিয়া টোনে পুরোনো কলকাতাকে তুলে আনার তারিফ করতেই হয়।
১৯৭৬-এর ঘটনার সাক্ষী ছিলেন যাঁরা, তাঁদের কাছে এই ছবিটি নস্টালজিয়া, বাকিদের কাছে ইতিহাস। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও সৌমিক সেনের প্রচেষ্টায়, খবরের কাগজের বাইরে সিনেমার আর্কাইভে তোলা থাকল উত্তমের বিরল অসাফল্যের কাহিনি।