Advertisment

বছর শেষে ফিরে দেখা, বাংলা সিনেমার সেরা ১০

চর্চার নিরিখে বছরের সেরা ১০টি বাংলা ছবির তালিকা তৈরি করা গেল। একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিতে পারেন। যদি আপনার মতের সঙ্গে মিলে যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এ বছরেরে সেরা দশটি ছবির তালিকা। অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস

বাংলা সিনেমার পক্ষে ২০১৯ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নানা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে বছরটা বেশ কাটল টলিউডের। রিল থেকে রিয়েল, ঘটনাবহুল। সিনেমার তালিকাও মনে রাখার মতো। কোনও ছবি বক্স-অফিসে কখন এল আবার কখন চলে গেল, জানাই গেল না। আবার এরকম ছবিও ছিল যা সমালোচকদের মতে সেরা, কিন্তু দর্শকের বিচারে ঠিক উল্টোটা। কোনও ছবি দর্শক চুটিয়ে দেখেছেন, তবে তা মন ভরাতে পারেনি 'ফিল্ম বাফ'-দের।

Advertisment

চর্চার নিরিখে বছরের সেরা ১০টি বাংলা ছবির তালিকা তৈরি করা গেল। একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিতে পারেন। যদি আপনার মতের সঙ্গে মিলে যায়।

nagarkirtan 'নগরকীর্তন' ছবিতে ঋদ্ধি সেন।

নগরকীর্তন:

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবি জাতীয় পুরস্কার পায় ২০১৮-য়। বছরের প্রথম দিকে সিনেমাহলে মুক্তি পায় 'নগরকীর্তন'। মধু ও পুটির প্রেমের গল্প। মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দকে সবসময়ই সমাজ তার মাপকাঠিতে তুল্যমূল্য বিচার করে এসেছে। ‘নগরকীর্তন’ সেই বদ্ধমূল ধারণা থেকে সরে গিয়ে পরিবর্তনের দিশারী। মুক্তির পর বহুল প্রশংসিত হয়েছিল ঋদ্ধি সেন ও ঋত্বিক চক্রবর্তী অভিনীত এই ছবি। বক্সঅফিসেও সাফল্য পায় অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত 'নগরকীর্তন'।

Aparna Sen's Ghawre Bairey Aaj movie review ছবির একটি দৃশ্যে বৃন্দা (বিমলা) ওরফে তুহিনা। ছবি সৌজন্য: শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মস

ঘরে বাইরে আজ:

রবীন্দ্রনাথের 'ঘরে-বাইরে' উপন্যাসকে ভিত্তি করে অপর্ণা সেন বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে তৈরি করেছেন 'ঘরে বাইরে আজ'। তিন দশকের বেশি পার করে সেলুলয়েডে ফেরা এই ছবি সত্যজ‌ি‌ৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ছবির রিমেক কিন্তু নয়। পরিচালকের অভিনবত্ব এই ছবির ইউএসপি। বক্সঅফিসে প্রত্যাশিত ফল করেছে যিশু-তুহিনা-অর্নিবাণের রসায়ন। বহমান সময়, বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া সময়, গণহত্যা, গণঅভ্যুত্থান - ইতিহাসের এই সাদা-কালো মাইলফলকগুলি সেলুলয়েডে ধরতে চেয়েছেন অপর্ণা সেন।

publive-image 'তারিখ' ছবির একটি দৃশ্য।

আরও পড়ুন, সাংসদ হওয়ার পর মিমি-র প্রথম ছবি, বিপরীতে অনির্বাণ

তারিখ:

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি সমালোচকদের নিরিখে তৃতীয় নম্বরে। সেরা সংলাপের জন্য জাতীয় পুরস্কার পায় 'তারিখ'। ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিটের এই ছবির মেরুদণ্ড তৈরি করে দেয় ফেসবুক স্মৃতির ঝাঁপি। মূল চরিত্র তিনটি - অনির্বাণ (শাশ্বত), স্ত্রী ইরা (রাইমা) এবং অনির্বাণের ছোটবেলার বন্ধু রুদ্রাংশু (ঋত্বিক)। স্মৃতির পিঠে স্মৃতি এঁকে এগিয়ে চলে ছবির গল্প। সমালোচকদের নিরিখে এই ছবি ভাল হলেও বক্সঅফিসে ব্যবসা করতে পারেনি তেমন।

publive-image গুমনামী চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

গুমনামী:

পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'গুমনামী' রিলিজ এ বছরের মেগা ইভেন্ট। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে তৈরি এই ছবি ঘিরে বিতর্ক কম হয়নি। নানা আইনি জটিলতা পেরিয়ে বক্সঅফিসে অবশেষে মুক্তি পায় গুমনামী। প্রথমদিন থেকেই ছক্কা হাঁকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবিটি। সমালোচকদের মতেও এ বছরের সেরা পাঁচটি ছবির মধ্যে একটি এটি। সৃজিতের ছবিতে অভিনয়ের মান, বা শিল্পভাবনা, বা ডিটেলিং নিয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকে না। ছবি মুক্তির আগে নেতাজীর ভূমিকায় প্রসেনজিতের ‘লুক’ নিয়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গস্পর্শী। সেই নিরিখে নিরাশ হননি দর্শক, সত্যিই আশ্চর্যরকম মানিয়েছিল তাঁকে, সঙ্গে ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ অভিনয় এবং শরীরী ভাষা।

publive-image 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত' ছবির একটি দৃশ্য।

রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত:

প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের এই ছবি এ বছরের উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট বলা চলে। হল না পাওয়া, পরে তা পেলেও শর্তসাপেক্ষে, কার্যত হাতে গোনা ছিল সিনেমা হলের সংখ্যা। সাতদিনের ব্যবধানে মোটামুটি মুখের কথাতেই হলে পৌঁছে যান দর্শক। সমালোচনার নিরিখে প্রথম সারিতে জায়গা করে নেয় ঋত্বিক-জ্যোতিকার 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত'। শরৎসাহিত্যের মায়াজাল ছিঁড়ে এ ছবি অসহিষ্ণু সময়ের কথা বলে। শুধুমাত্র রাজলক্ষ্মী, শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনাথ ও অন্নদা চরিত্রের নির্যাসটুকু মাথায় রেখে বড়পর্দায় স্বতন্ত্র কাহিনি বুনেছেন পরিচালক।

kedara 'কেদারা' ছবির একটি দৃশ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন, আমার শিক্ষা অত নয় যে সিনেমার মাধ্যমে কাউকে শিক্ষিত করব: রাজা চন্দ

কেদারা:

‘কেদারা’ দিয়েই ছবি পরিচালনায় হাতেখড়ি সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর। পরিত্যক্ত এক মানুষের জীবনকাহিনি। একাকীত্ব কাটাতে প্রিয়জনদের গলা নকল করে নিজের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যান তিনি। এক প্রান্তিক মানুষের নিজেকে ভাল রাখার আশ্চর্য এক চিত্রনাট্য। এই মানুষটির জার্নির সঙ্গেই অদ্ভুতভাবে জুড়ে যায় কেদারা। জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে বিশেষ জ্যুরির সম্মান পায় এই ছবি। বক্সঅফিস মুখ ঘুরিয়ে নিলেও সমালোচক মহলে বহুল প্রশংসতি ছবি 'কেদারা'।

mitin masi 'মিতিন মাসি'-র চরিত্রে কোয়েল মল্লিক।

মিতিন মাসি:

থ্রিলার আঙ্গিকের ছবিতে পরিচালক অরিন্দম শীল এতদিনে যথেষ্ট পোক্ত। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা মিতিন মাসি-র সেলুলয়েড সংস্করণ তার আরও এক প্রমাণ। কোয়েল মল্লিক অভিনীত মিতিনমাসি চরিত্রটিতে মিতিনের ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব এসেছে, বুদ্ধি ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব এসেছে। সিনেম্যাটোগ্রাফি, অকারণ দীর্ঘায়িত নয় এমন চিত্রনাট্য, উচ্চমানের আবহ এবং সঙ্গীত পরিচালনা, ও সর্বোপরি কোয়েল মল্লিকের অভিনয়। পুজোর এই রিলিজ ব্যবসার নিরিখেও তৃতীয় স্থানে ছিল।

konttho 'কণ্ঠ' ছবির একটি দৃশ্য।

কণ্ঠ:

শিবপ্রসাদ-নন্দিতা মানেই অব্যর্থ হিট। 'কণ্ঠ'-র ক্ষেত্রে প্রথম ফর্মুলা কাজ করার পরেও দ্বিতীয় ফ্যাক্টর কাজ করেছে। সমালোচকদের মতে এ বছরের প্রয়োজনীয় ছবি 'কণ্ঠ'। শিবপ্রসাদ-পাওলি-জয়ার ত্রিকোণ সমীকরণ বক্সঅফিসে ঝড় তুলেছিল। যা কিছু জীবনের সহজাত, প্রতিনিয়ত যার উপর নির্ভরশীল মানুষের ‘আমি’, তা যদি এক লহমায় ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তখন বাঁচাটা বিদ্রোহের সমানুপাতিক হয়ে দাঁড়ায়। সেরকমই নিত্য চলার সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের যাত্রা শুরু করেন অর্জুন মল্লিক (শিবপ্রসাদ), সঙ্গ দেন পৃথা (পাওলি)। ল্যারিংক্স (পরিভাষায় ভয়েস বক্স)-এ বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ। তাও ফোর্থ স্টেজ। বাঁচতে হলে ভয়েস বক্সটাই বাদ দিতে হবে। কিন্তু কণ্ঠই যাঁর অস্তিত্ব, সেটা বাদ দিয়ে চলবে কী করে? এই ছবিতে বহুল প্রশংসিত হয়েছে জয়া আহসানের অভিনয়।

Professor Shanku প্রোফেসরের ভূমিকায় ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়।

প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো:

সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি গিরিডিবাসী বৈজ্ঞানিক, যাঁর হাতে ছিল নিশ্চিহ্নাস্ত্র, আর পকেটে মিরাকিউরল বড়ি, সেই প্রোফেসর শঙ্কু এবার সিনেমার পর্দায়। সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’ আর কিছু না হোক, অনায়াসে কল্পনার জগতের প্রবেশদ্বার। শৈশব থেকে কল্পনা করে আসা দৃশ্যগুলো চোখের সামনে সত্যি হয়ে উঠলে খুঁত বের করা কঠিন কাজ। সেদিক থেকে সফল সন্দীপ রায়ের এই ছবি। ব্যবসার দিক থেকে শঙ্কু ও নকুড়বাবুর স্কোর মোটামুটি ভালোই। আসলে খামতি থাকুক বা না থাকুক, ছবিটার নাম যে ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’।

parinita 'পরিণীতা' ছবিতে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক-শুভশ্রী।

আরও পড়ুন,  আমার শিক্ষা অত নয় যে সিনেমার মাধ্যমে কাউকে শিক্ষিত করব: রাজা চন্দ

পরিণীতা:

রাজ -শুভশ্রীর নতুন জার্নি 'পরিণীতা'। শুরুতেই সাফল্য। মেহুল ও তার বাবাইদাকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে ছবির গল্প। মেহুল স্কুলে পড়ে, বাবাইদাকে একটু অন্য চোখেও দেখে। জানলা দিয়ে একমনে বাবাইদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। বলা যেতে পারে, মেহুলের 'ক্রাশ' বাবাইদা। সেকথা মুখ ফুটে বলে ওঠার আগেই ঘটে অঘটন। আত্মহত্যা করে বাবাইদা। তারপর? শুভশ্রী দেখিয়ে দিয়েছেন, শুধু নায়িকার নিরিখে তাঁকে না দেখলেই ভালো। ঋত্বিক ছবিতে স্বমেজাজে আসীন। বক্সঅফিসের অর্থপ্রাপ্তিও খারাপ হয়নি।

তবে আমাদের তালিকার সঙ্গে আপনার তালিকা নাও মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে মার্জনা চাইব এই বলে, যে ২০১৯-এর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির তালিকা এতই দীর্ঘ যে সেখান থেকে সেরা দশ তুলে আনা সত্যিই কঠিন। অতএব সকলকে খুশি করা যে অসম্ভব, তা মেনে নিয়েই কাজে হাত দেওয়া।

tollywood Bengali Cinema bengali films
Advertisment