অতিমারীর কোপে সিনেমাওয়ালারা ধুঁকলেও বিষে-বিষে বিষক্ষয়ের পর কিন্তু একুশে একাধিক বিগ বাজেট বলিউড ছবি মুক্তির পথে হেঁটেছে। ওটিটি যেখানে রাতের ঘুম উড়িয়েছে, সেখানে বলিউড সুপারস্টাররা রাশ ধরে রেখেছেন মাল্টিপ্লেক্স, সিনেমাহলের। কেউ বা আবার রিলিজ ডেটের সমস্যায় দর্শকদের কথা মাথায় রেখে ওয়েব প্ল্যাটফর্মের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে এবছর বলিউডে সুপার মশালা মুভির তুলনায় আদ্যোপান্ত সিনেপ্রেমীদের কাছে কন্টেন্ট ভিত্তিক ছবির জয় জয়কার-ই বেশি। তবে উল্লেখ্য বিষয়, ওটিটি হোক কিংবা বড় পর্দা, নারীকেন্দ্রিক সিনেমার গল্পে দর্শকরা ঝুঁকেছেন বেশি। সেই প্রেক্ষিতে ব্যতিক্রম যে নেই এমনটাও নয়। ওটিটি, প্রেক্ষাগৃহ মিলিয়ে যে সমস্ত ছবি একুশ সালে দর্শকমন নাড়া দিল, সেগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
তবে তালিকা দেওয়ার আগে বলিউডে বিশেষ কয়েকটি ছবির নাম না নিলেই নয়। 'ত্রিভঙ্গ', 'রামপ্রসাদ কি তেরবি', 'মিমি', 'পাগলাইট', 'থালাইভি', 'রশমী রকেট', 'চণ্ডীগড় করে আশিকি'র মতো ছবিগুলোর কন্টেন্ট কিন্তু পুরদস্তুর সিনে-সামলোচকের গণ্ডী পেরিয়ে সাধারণ দর্শকদের পাতেও দিব্য জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়াও 'সূর্যবংশী'র মতো রোহিত শেট্টির মশালাদার সিনেমা তো রয়েইছে। কন্টেন্টের মুড়ো-ল্যাজা না থাকলেও দর্শকরা ঝালমুড়ি-ফুচকার মতো উদরস্থ করেছেন।
২০২১ সালে কোন বলিউড ছবিগুলো দেখার মতো? এবং কোনগুলো না দেখলেও আপনি মিস করার তালিকায় নন? দেখে নেওয়া যাক তাহলে।
সর্দার উধম (Sardar Udham) - জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড জেনারেল ও ডায়েরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধস্পৃহ এক বিল্পবীর গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। ক্লাইম্যাক্সই বলে দেয় এই ছবি ভিন্ন স্বাদের বায়োগ্রাফিক্যাল ড্রামা। পরিচালক সুজিত সরকারের উদ্যোগেই সম্ভবত সর্দার উধম সিংয়ের সম্বন্ধে জানতে পারল, নতুবা ইতিহাসের পাতা কখনও এই মানুষটির কথা স্মরণ করায়নি। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে ইতিহাস খানিক এদিক-ওদিক করতে হলেও সুজিতের প্রচেষ্টা প্রশংংসার দাবিদার। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ভিকি কৌশলের পারফরম্যান্স। যিনি গালে ১৩টা সেলাই নিয়ে সিনেমার শুটিং করেছেন।
শেরনি (Sherni) - গভীর জঙ্গলে মানুষখেকো বাঘের খোঁজে ফরেস্ট অফিসার বিদ্যা বালন। বাঘের অত্যাচারে যখন গ্রামবাসীরা নাজেহাল। এক এক করে প্রাণ যাচ্ছে গ্রামের বাসিন্দাদের। ঠিক সময়েই এলাকার ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অফিসার হয়ে এলেন বিদ্যা। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কাজের জায়গাতেও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। আদৌ কি সেই যাত্রায় সফল হবেন বিদ্যা? পরিচালনায় অমিত মাসুরকার একেবারে ভিন্ন স্বাদের একটি ছবি বানিয়েছেন। শোনা যায়, ২০১৬-১৮ সালের মাঝে মহারাষ্ট্রে অবনি নামে এক বাঘিনীর কারণে ১৩জনের মৃত্যু হয়। যার সত্যতা প্রমাণে এখনও আইনি লড়াই চলছে। সেই গল্পের ভিত্তিতেই নাকি শেরনি তৈরি। যদিও পরিচালক আইনি জটিলতায় ভুগে এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
শেরশাহ (Shershaah)- ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার বায়োপিকে দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সে টক অফ দ্য টাউন হয়ে উঠেছিলেন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা। সিনেমায় যেভাবে দেশপ্রেম এবং সৈনিকের জীবনের কষ্ট-যন্ত্রণা, আবেগ তুলে ধরা হয়েছে, দর্শকদের গলাও বুজে এসেছে দেখতে দেখতে। বিক্রমের প্রেমিকা ডিম্পল চিমার ভূমিকায় কিয়ারা আডবানিও অভিনয়গুণের স্বাক্ষর রেখেছেন।
৮৩ (83)- বহু প্রতীক্ষার পর বছরশেষে কপিলস ডেভিলসদের ধামাকা নিয়ে হাজির কবীর খান। কপিল-রূপী রণবীর সিংয়ের অভিনয় বেজায় প্রশংসা কুড়লেও বক্স অফিসে সেভাবে দৌড়তে পারছে না এই ছবি। ৮৩র বিশ্বাকাপ জয়ের স্মৃতি পর্দায় ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে বেজায় পারদর্শীতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন কবীর। ম্যাচ জেতার নেপথ্যে কপিলের লড়াইয়ের গল্প ৮৩।
সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফেরার (Sandeep Aur Pinky Faraar)- সাফল্যের চূড়ায় থাকা এক মহিলার সঙ্গে প্রতারণার হৃদয় বিদারক গল্প। যে ভূমিকায় পরিণীতি চোপড়া। যাকে নিয়ে ফেরার হন অর্জুন কাপুর। পাহাড়ের কোলে ছল-চাতুরি, প্রাণনাশের হুমকির মাঝেও কীভাবে বেঁচে ফেরে তাঁরা? এই ছবি সেই গল্পই বলে। সাদামাটা গল্প বলার মাঝে পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু সিকোয়েন্সে ভাল টেনশন তৈরি করেছেন। তবে এই ছবিতে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, নর্তকী সাজে অর্জুনের পারফরম্যান্স।
এবার আসা যাক সেই ছবিগুলোর কথায়, যেগুলো দর্শকমনে জায়গা অধিকার করা তো দূরঅস্ত! এমনকী একবার দেখার পর দর্শকরা দ্বিতীয়বার দেখার কথা ভাববেন না। সেই তালিকায় রয়েছে- জাহ্নবী কাপুরের 'রুহি' (Roohi), সলমন খানের 'রাধে: দ্য মোস্ট ওয়ান্টেড ভাই' (Radh: Your Most Wanted Bhai), 'দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন', 'সর্দার কা গ্র্যান্ডসন'। সেই প্রেক্ষিতে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তৈরি 'ভূজ' (Bhuj), 'বেলবটম' (Bell Bottom) তুলনামূলক ভাল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন