Bharat movie cast: সলমন খান, ক্যাটরিনা কাইফ, সুনীল গ্রোভার, জ্যাকি শ্রফ, সোনালী কুলকার্নি, দিশা পাটনি, সতীশ কৌশিক
Bharat movie director: আলি আব্বাস জাফর
Bharat movie rating: ২.৫/৫
কিছুদিন আগে হলেও এই মহাতারকা নিজের মধ্যবয়সী ভুঁড়ি এবং ঝুলে যাওয়া চোয়াল সযত্নে বড়পর্দা থেকে আড়াল করে রাখতেন। সেই তারকাই এখন পর্দায় স্বচ্ছন্দে সত্তরোর্ধ হওয়ার অভিনয় করছেন। তবে কি অবশেষে সত্যিই বড় হয়ে গেলেন সলমন খান?
ছবির শুরুতে ভারতের বয়স সত্তর বছর। ভারতের কোনো পদবী নেই, কারণ সারা দেশের সম্পত্তি তিনি। তাঁকে বলা হয়েছে, "তুঝমে পুরা দেশ হ্যায়, ভারত"। তাঁর জীবনের রেখচিত্রের বেশিরভাগটাই আমরা দেখি ফ্ল্যাশব্যাকে, এবং তাঁর কাহিনি যে ভারতবর্ষেরই কাহিনি, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। দুটি সমান্তরাল কাহিনি প্রথমার্ধেই উন্মোচিত হয়, প্রভূত উদ্দীপনা এবং আবেগ সহযোগে, যাতে ছবির সীমা এবং বিস্তার, দুইই বোঝা যায়।
কিন্তু বিরতির পর ছবির গতি সাদা বাংলায় যাকে বলে ঝুলে যায়। দেশভাগের রক্তাক্ত বীভৎসতা, লাহোরে ভারতের পরিবার ভেঙে যাওয়া, সেখান থেকে দিল্লির উদ্বাস্তু শিবির, এসবে 'ভারত'-এর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। কিন্তু তারপরেই হোঁচট খায় ছবি।
পরিচালক জাফর এবং সলমন একসঙ্গে ভালো কাজ করেছেন এর আগে। তাঁদের 'টাইগার জিন্দা হ্যায়' বেশ বড়সড় হিট ছিল। তো এই নতুন ছবিতে পরিচালক প্রথমে সুর-তাল মিলিয়ে ভালই শুরু করেন, তাঁর হিরো এমন এক চরিত্র যে নিরক্ষর হলেও নিজের পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ, সঙ্গে থাকে তার বন্ধু বিলায়তি (গ্রোভার)। তাদের জীবনের কিছুটা সময় কাটে সার্কাসে, যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেলা দেখায় ভারত, তারপর আমরা চলে যাই মধ্য প্রাচ্যের তেলের খনিতে, যেখানে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় সে।
এসব কিছুর মধ্যে দিয়ে তরতর করে এগোয় ছবি, সঙ্গে সলমনের 'হিরোগরি' দেখানোর যথেষ্ট সুযোগ। ম্লান হয়ে আসা ইতিহাসের ঝলক দেখা যায় সার্কাসের বিশাল অথচ জীর্ণ তাঁবুতে, সেইসব 'মৌত কা কুঁয়া'তে, যেগুলি এখন দেখা যায় শুধু গ্রামগঞ্জের মেলায়, খোঁজ মেলে তেলের কোম্পানিতে চাকরির লোভে মধ্য প্রাচ্যের দিকে ধাবমান ভারতীয়দের।
কিন্তু পরিচালক-তারকা মিলে এই কাহিনিকে যতদূর নিয়ে যাওয়া যেত, ততদূর যান না। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের গড়ে ওঠার গল্প বলার সুযোগ ছিল এই কাহিনিতে। কিন্তু তা নষ্ট হয় অনাবশ্যক নাচ-গানে, সস্তা ভাঁড়ামোয়, এবং কষ্টকল্পিত ঘটনাপ্রবাহে।
দাপুটে 'ম্যাডাম-স্যার' এর ভূমিকায় জমিয়ে অভিনয় করেন ক্যাটরিনা, যিনি ভারতের জীবনে প্রবেশ করে থেকে যান, কোনো মন্ডপ বা মঙ্গলসূত্র ছাড়াই। গোদাভাবেই সই, কিন্তু তখনকার ভারত, এবং আরো বেশি করে এখনকার ভারতের 'লিভ ইন' সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্টতই জানা প্রয়োজন। একজন জনপ্রিয় তারকার মাধ্যমে যদি এই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, মন্দ কী?
এই ছবিতে অনেক কিছু দেখে নাক সিঁটকোতেই পারেন, কিন্তু দেশ আমাদের সকলের, এই বোধ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম 'ভারত'। যেমন গ্রোভারের অনবদ্য অভিনয়ে সমৃদ্ধ বিলায়তির চরিত্রটি একজন মুসলমান। সংলাপ কিছু ক্ষেত্রে অতিনাটকীয় মনে হলেও আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় এমন এক সময়ে, যখন নির্ভয়ে দুই ঘোর শত্রুর মধ্যেও 'দোস্তি' এবং 'ভাইচারা'র কথা বলা যেত, বলা যেত যে আসলে সবাই এক, দেশভাগের ফলে হৃদয় ভাগ হয় নি। হ্যাঁ, বজরঙ্গি ভাইজান-এর ছায়া অবশ্যই দেখবেন, কিন্তু দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন প্রিয়জনের মিলনের গল্প শুনতে কার না ভাল লাগে? হোক না প্যাচপ্যাচে আবেগ, চোখে জল তো আসেই। আমার চোখে তো এলো।
হ্যাঁ, একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ চারজন দামড়া জোয়ানকে মেরে তাড়িয়ে দিচ্ছেন, মেনে নেওয়া কষ্টকর, কিন্তু দিনের শেষে এটা তো 'ভাই মুুুভি'। নড়বড় করলেও তিনিই খাড়া থাকবেন শেষমেশ। গালে সাদা দাড়ি সাঁটলেও বুকের মাসলে ঢেউ খেলবে। সলমন খানের ছবিতে সব সম্ভব, সীমানা পেরোনো কাহিনিও।