দেশে এখন মেরুকরণের রাজনীতি। হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টি করে যেখানে ভোটবাক্স ভারী করার রাজনীতি চলছে, সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়েই এক নয়া উদাহরণ প্রতিস্থাপন করেছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় (Bhaswar Chatterjee)। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মুসলিম কলাকুশলীদের উৎসর্গ করে নিয়মিত রোজা রাখছেন টেলি-অভিনেতা। হিন্দু ব্রাহ্মণ ঘরের ছেলে হয়েও ইসলাম ধর্মের পরবে মেতেছেন, কারণ, ভাস্বর অন্তর থেকে চান, হিন্দু-মুসলিমদের দূরত্ব ঘুচে যাক। পাশাপাশি তিনি তাঁর জীবনের এই প্রথম রোজা উৎসর্গ করেছেন কাশ্মীরিদের উদ্দেশেও। আর এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়কে।" আপনি গরু খান, মুসলিম হয়ে গিয়ে ওদের পা চাটছেন!…" নেটদুনিয়ার নীতিপুলিশদের তরফে এহেন 'কটাক্ষবাণ' ধেয়ে আসার পাশাপাশি তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেতার বংশ-পরিচয় নিয়েও! নজরে আসতেই চুপ থাকেননি ভাস্বর। বরং, বেজায় সুচারুভাবে গুছিয়েই উত্তর কষিয়েছেন।
নেটমাধ্যমেই কড়া ভাষায় এহেন মন্তব্যকারীদের একহাত নিলেন অভিনেতা। ভাস্বরের কথায়, "কিছু মানুষ তাঁকে ভুল বুঝেছেন। আর সেই ভ্রান্ত ধারণা ঘোচাতেই ভাস্বরের মন্তব্য, আমি রোজা রেখেছি বলে অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করছেন। আমি নাকি গরু খাচ্ছি, মুসলিম হয়ে গেছি, আমি ওদের পা চাটা। আবার অনেকে এও বলেছেন যে, আমার পূর্বপুরুষ নাকি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তাঁদেরকে জানিয়ে রাখি, আমরা পশ্চিমবঙ্গের লোক। বাংলাদেশে কোনওকালে কেউ ছিল না বা কোনও আত্মীয়ও নেই আমাদের।"
এর পাশাপাশি গো-মাংস ভক্ষণের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে অভিনেতার উত্তর, "না আমি গরু খাই না। আর রোজা রাখলে কারও পা চাটতেও হয় না। সবটাই ব্যক্তিগত ইচ্ছে থেকে।" কোনও এক নেটজেন ভাস্বরের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন যে, তিনি উপোস করেন কিনা? সেখানেও স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে জবাব দিয়েছেন তিনি। ভাস্বর জানিয়েছেন তাঁদের দেশের বাড়িতেই মহাসমারোহে দুর্গাপুজো হয়। ৪ দিনই নিয়ম করে উপোস করেন তিনি। তাই উপবাসে থাকার অভ্যেস তাঁর আগাগোড়াই রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে প্রথমবার হলেও রোজা করতেও তাঁর কোনও অসুবিধে হচ্ছে না।
প্রত্যুত্তরের সেই পোস্টে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় এও জানিয়ে দেন যে, ভ্রান্ত ধারণা অনেক ক্ষতি করে দেয়, তাই এই কথাগুলো সর্বসমক্ষে বলে দেওয়াই জরুরি বলে মনে করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, টেলিভিশনের পর্দায় বাবা লোকনাথ হিসেবে ভাস্বরের জনপ্রিয়তা নেহাত কম নয়! অনুপ্রেরণাও সেখান থেকেই। অভিনেতার কথায়, বাবা নিজেও নাকি কোরাণ পাঠ করতেন। আর তা জানার পর সেটাই তাঁর মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। পর্দার চরিত্র থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেন পতিনি। অনেকের কাছেই অজানা, ভাস্বর যে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বার্তা দিতেই গত ১৩ এপ্রিল থেকে রোজ নিয়ম করে রোজা রাখছেন। রোজকার এই উপোসযাপন চলবে আগামী ১২ মে অবধি। কিন্তু তাঁর সেই ব্যক্তিগত বিশ্বাসেও আঘাত হেনেছেন একদল সমালোচক। আর সেই প্রেক্ষিতেই মুখ খুললেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।