অভিনেতাদের পৌষ পার্বণের গল্প যখন হচ্ছে, তখন অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর কথা হবে না এও নিশ্চই হয় না। একবার একটি রিয়ালিটি শোয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঞ্চন মল্লিক বলেছিলেন বিশ্বনাথ বসু নাকি খাওয়া নিয়ে খুব সিরিয়াস। এবং অভিনেতা নিজেও স্বীকার করেছিলেন তাঁকে খাবার সাজিয়ে দিলে, তিনি উত্তম কুমার আর তাঁকে খাবার নিয়ে টোকা দিলে তিনি গোগা কাপুর।
গ্রামের বাড়িতেই বেড়ে ওঠা বিশ্বনাথের। সেখানে মাঝেমধ্যেই পরিবার নিয়ে চলে যান। নানা ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাই যখন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল ছোটবেলার পৌষ পার্বণ উদযাপনের বিষয়ে জানতে? বিশ্বনাথ সোজা বলেন, তখন তো দেশের বাড়িতে ছিলাম। সেখানে পৌষ পার্বণ বলতে গোটা অনেকটা সময় ধরে চলত। তখন দারুণ ঠান্ডা পড়ত। এখন তো পরে না। এখন যদিও বা ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা অনেক কমেছে। কিন্তু, তখন সেই যে কালীপুজোর রাতে চাদর দিতে হত গায়ে, একদম সেটি গিয়ে খোলা হত দোল উৎসবের পরে।
ছোটবেলায় পিঠে পুলির উৎসব মানেই, তাঁর কাছে আলাদা আনন্দ ছিল। বাড়ি জুড়ে সারি সারি নারকোল গাছ। এবং পিঠে বানানোর আসল জিনিস হল এটাই। এত নারকেলের সমারোহ যে পিঠে শেষ হত না। অভিনেতার কথায়, "নারকোল, যেটা পিঠের আসল প্রয়োজনীয় জিনিস, সেটাই আমাদের বাড়িতে ছিল। আর ওই ধান থেকে চাল ঝাড়াই করার নানা ঢেঁকি, মেশিন সবটাই ছিল আমাদের বাড়িতে। সেখান থেকে সব গুঁড়ো করা হত। আমার মায়ের থেকেও বেশি ভাল এবং ভিন্ন ধরনের পিঠে বানাতেন আমার ছোট মা।" কী কী পিঠের কথা মনে রয়েছে তাঁর?
অভিনেতা বলেন, "আমার ছোটমা আসলে বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ তো। সেদেশের মানুষের কাছে পৌষ পার্বণ উৎসবটা আলাদাই অর্থ রাখত। উনি বানাতেন ভিন্ন ধরনের পিঠে। পাটিসাপটা, চুসি পিঠে, কাস্তে পিঠে এসব অনেক রকমের বানাতো। রাঙা আলু দিয়ে বানাতো একটা পিঠে। আর আমার রসবড়া খুব ভাল লাগত। আরেকটা জিনিস খুব ভাল লাগত সেটা হচ্ছে ঝোলা গুর দিয়ে যেটা খেতে হয়, ভাপা পিঠে। আমার এগুলো দারুণ পছন্দ ছিল।" অভিনেতার ছোটবয়স তো একরকম। এখনও কিন্তু তাঁর স্ত্রী এবং মা দুজনেই হাতে হাত লাগিয়ে পিঠে বানান। অভিনেতা জানিয়েছিলেন গতকাল সব জোগাড় যন্ত্র হয়ে গিয়েছে। তিনি বাড়িতে ছিলেন এবং বাকিরা সব জোগাড় করেছেন। তাই, আজ পিঠে পুলি বানানো হবে।
তাঁর কথায়, আমার বাড়িতে সব অনুষ্ঠান হয়। আর এই পিঠে পুলির অনুষ্ঠান তো বড় করে হয়। আসলে কী, বাঙালি এসব নিয়ে মেতে থাকত বলেই কেউ কারওর বিরুদ্ধে হিংসা করেনি। কেউ কারওর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি। রক্তপাতের ইতিহাস নেই। আমরা তো এই নিয়েই মেতে থাকি। আমাদের তো দুর্গাপুজোর পরেই শুরু হয় ইতু পুজো।" হাসতে হাসতে বললেন, এবার থেকে বাড়িতে বিশ্বকর্মা পুজো শুরু করেছি। সকলেই বলল, "বাড়িতে গাড়ি আছে। আমি বললাম চলো, শুরু করি। Let's পার্টি তো অনেক বললাম, এবার নিজেদের উৎসব এবং নিয়ম কাজটা করি। অন্যরা কিন্তু নিজেদের নিয়ম নিয়ে আছে, আমরাই কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি।"