একুশের মহারণ যত এগিয়ে আসছে ততই নিজেদের বাংলা তদুপরি বাঙালির দল হিসাবে প্রমাণে মরিয়া বিজেপি। শাসকদল তৃণমূল বারবার বিজেপিকে অবাঙালিদের দল বলে আক্রমণ করেছে। বলেছে, বাংলার মনীষী তথা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সম্মান দেওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের সম্পর্কে জ্ঞানই নেই গেরুয়া শিবিরের। সেই অপবাদ ঘুচিয়ে একুশের আগে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে যেতে চাইছে পদ্মশিবির। কিন্তু সেই করতে গিয়ে উল্টে পরিস্থিতি জটিল করছে বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ যে অনেকাংশে সত্যি তা প্রমাণ হয়ে গেল গত বুধবারের একটি ঘটনায়। প্রায় ৫০ বছর আগে প্রয়াত বাঙালি অভিনেতা জহর গাঙ্গুলির বাড়ি গিয়ে তাঁর নাম ধরেই হাঁকডাক করলেন বিজেপি কর্মীরা। আবার তাঁর নামে আমন্ত্রণ পত্রও দিয়ে এলেন পরিজনের হাতে।
ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? গত বুধবার সন্ধেয় দক্ষিণ কলকাতার ডোভার লেনে প্রয়াত অভিনেতা জহর গাঙ্গুলির পৈতৃক বাড়িতে হাজির হন দুই বিজেপি কর্মী। সেই বাড়িতে বর্তমানে থাকেন অভিনেতার নাতনি তথা সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকা সুজাতা দেবী। তিনি জানিয়েছেন গোটা বিষয়টি। তিনি বলেছেন, দুজন দাদুর নাম ধরে ডাকাডাকি করছিলেন সন্ধেবেলায়। ১৯৬৯ সালে জহরবাবুর মৃত্যুর পর এই নাম ধরে ডাক কারও মুখে শোনেননি তিনি। ফলে একটু খটকা লাগে তাঁর। এরপর সুজাতা দেবী বাইরে আসতেই দুজন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ”জহরদা কি বাড়ি আছেন? আসলে, ওঁকে ফোনে পাচ্ছিলাম না, তাই আমরা এলাম।”
আরও পড়ুন বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার নেপথ্যে পিকের কোনও অবদান নেই! খোঁচা পরেশ রাওয়ালের
শুনে তো তাজ্জব হয়ে যান সুজাতাদেবী। বিস্ময়ের ঘোরে কী বলবেন বুঝতে পারছিলেন না। ওই দুজন নিজেদের বিজেপি কর্মী বলে পরিচয় দেন। এরপর প্রয়াত অভিনেতার নামাঙ্কিত একটি কার্ড দিয়ে ২৫ ডিসেম্বর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিবস উপলক্ষে ৬৯ নম্বর ওয়ার্জে রক্তদান শিবিরে তাঁকে উপস্থিত থাকার কথা বলেন তাঁরা। তাঁরা অনুরোধ করেন, ওইদিন সকালে জহরবাবুকে শিবিরে থাকতেই হবে। সুজাতা দেবী বলেছেন, যাঁরা এমনটা ভেবে বসে আছেন তাঁদের ভুল ভাঙাতে যাওয়া একপ্রকার বৃথা। তাই অভিনেতার প্রয়াত হওয়ার বিষয়টি চেপে যান তিনি।
আরও পড়ুন উলটো সুর! ‘শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষদেরই বড়দিনের শুভেচ্ছা’, কঙ্গনার বার্তায় বিতর্ক
১৯৬৯ সালে প্রয়াত হওয়া অভিনেতার সম্পর্কে কি কোনও জ্ঞানই নেই স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের, নাকি নেতৃত্বের চাপে যেমন করে হোক লক্ষ্যপূরণের জন্য কার্ড দেওয়ার বাহানায় বেমালুম মিথ্যা কথা বললেন কর্মীরা? এই ভ্রান্তি কাটানোর জন্য রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর সাফাই, ”আমাদের কর্মীরা হয়তো ভুল করেছে। হয়ত অন্য কোনও জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি কার্ড পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রয়াত অভিনেতার বাড়ি চলে গিয়েছেন। ওঁদের আরও দেখেশুনে কাজ করতে বলব। তবে আমরা কিন্তু বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”