বর্তমানে রাজনীতি নিয়ে মুখ খুললেই নেটদুনিয়ার নীতিপুলিশদের চোখ রাঙানি খেতে হয়! আর সেই মতপ্রকাশকারীর কপালে যদি 'স্টার'-তকমা সাঁটা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই! বাক্যবাণের ফুলঝুড়ি থেকে খুন-ধর্ষণের হুমকি অবধি খেতে হয় তাঁদের। মাসখানেক আগেই 'জয় শ্রী রাম' স্লোগানের বিরোধিতা করে খুনের হুমকি খেয়েছিলেন সায়নী ঘোষ, তখনও তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখেননি! তাঁকে 'যৌনকর্মী' বলে কটাক্ষও করেছিলেন বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ। ওদিকে দেবলীনা দত্ত প্রকাশ্যে 'গো-মাংস রান্না'র কথা বলে গেরুয়া শিবিরের রোষানলে পড়ে খুন-ধর্ষণের হুমকি খেয়েছেন। তবে এবার তার উলাট-পুরাণ ঘটল। কীরকম? এবার খুনের হুমকি দেওয়া হল বিজেপি (BJP) কর্মী তথা টলিউড অভিনেতা অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Anindya Pulak Banerjee)।
গত লোকসভা ভোটের সময়ই টলিউডে 'একনায়ক শাসনতন্ত্রের' অভিযোগ তুলে দিল্লিতে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন অনিন্দ্য। থিয়েটার-ধারবাহিকের দৌলতে বেজায় জনপ্রিয় তিনি। উপরন্তু নিজে বেশ কিছু সিনেমাও পরিচালনা করে ফেলেছেন। সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখার পর বিজেপির একাধিক দলীয় কর্মসূচীতে দেখা গিয়েছে এই টলিউড অভিনেতাকে। এবার বিধানসভা ভোটে (West Bengal Assembly Election 2021) পদ্ম শিবিরের তরফে টিকিট পাননি ঠিকই, তবে দলের একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে প্রায় নিত্যদিনই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম চ্যানেলের প্যানেল ডিসকাশনে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি! অভিনেতার বোনের কাছে উড়ো ফোন এসেছে। অপরপ্রান্ত থেকে সাফ হুমকি দেওয়া হয়েছে, "দাদাকে চুপ থাকতে বলো, বড্ড বেশি কথা বলছে। এরপর আর কথা বলার অবস্থায় থাকবে না।" সোশ্যাল মিডিয়াতেও খুনের হুমকি খাচ্ছেন অভিনেতা। যা নিয়ে এখন অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার রীতিমতো উদ্বিগ্ন। বিনিদ্র রজনী কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।
এপ্রসঙ্গে অভিনেতাকে ফোনে ধরা হলেই, তিনি জানান, পূর্ব যাদবপুর থানায় একটা জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু তাতে আদৌ লাভ কি কিছু হবে? বছর দুয়েক আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর টলিউডেও কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ অনিন্দ্যর স্ত্রী পম্পার। তবে পেটের দায়েও নিজের মতাদর্শ তাতে বদলাননি। এবার একুশের নির্বাচনে রাজ্য-রাজনীতি যখন সরগরম, তখন ওপেন ফোরামে মুখ খুলে খুনের হুমকি খেতে হল অভিনেতা তথা ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ করা ভাল, আম-জনতার একাংশও কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির ক্রমাগত জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না। রাজনীতি নিয়ে তারকাদের মতপ্রকাশ করতে দেখলেই কিংবা মুখ খুলতে দেখলেই, হয় বেধড়ক ট্রোল করেন কিংবা কোনও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবিরের কর্মী-সমর্থক হলেই ওপার থেকে ধেয়ে আসে খুন-ধর্ষণের হুমকি। কিন্তু এতকিছুর পরও একটা প্রশ্ন তো থেকেই যায়, রূপোলি পর্দার তারকা বলে কি তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে নেই নাকি প্রকাশ্যে নিজেদের বাক-স্বাধীনতার অধিকার বিকিয়ে দিতে হবে? রাজনৈতিক রং-দল নির্বিশেষেই তারকাদের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য।