একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পদ্ম শিবিরে দলে দলে তারকাদের যোগদান রীতিমতো চমকে দেওয়ার জোগাড়! লক্ষ্য একটাই, তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়া। ‘যাঁরা কিনা একসময়ে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশের আসনে সু-সজ্জিতভাবে শোভাবর্ধন করতেন, সেই তাঁরাও এখন ‘পদ্ম-পাঁকে’ পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উদ্দেশে চোখ রাঙাচ্ছেন!’, এমন অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ইতিমধ্যেই সেই তারকাপ্রার্থীদের নিয়ে খোরাক শুরু করেছেন। কেউ ভোটের মুখে গেরুয়া বাহিনিতে নাম লিখিয়ে টিকিট পেয়েছেন, আবার গত লোকসভা ভোটের সময় গেরুয়া পতাকা হাতে তুলেও কেউ বা শিকে ছিঁড়তে পারেননি। মুখে প্রকাশ না করলেও ঘনিষ্ঠ মহলের অন্দরে গুজগুজ-ফুসফাসে একটা চাপা উত্তেজনা তো তৈরি হয়েইছে। গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দেরও অন্ত নেই। অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন পার্টির পুরনো নেতা-মন্ত্রীদের ব্রাত্য করে টিকিট দেওয়া হয়েছে নবাগতদের। কর্মী-সমর্থক তো বটেই, দলে দলে যোগ দেওয়া তারকাদের মধ্যেও রয়েছে সেই ক্ষোভ।
রিমঝিম মিত্র, রূপাঞ্জনা মৈত্র, কাঞ্চনা মৈত্র, রূপা ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে সুমনের মতো আরও অনেক তারকাই বিজেপির হয়ে ময়দানে নেমেছেন। এমনকী, নানা সময়ে দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কিন্তু কোথায় বিধানসভা ভোটে তো তাঁদের টিকিট দেওয়া হল না? প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। কিন্তু এদিকে মধ্য়মগ্রাম কেন্দ্র থেকে পদ্ম প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে রাজশ্রী রাজবংশীকে। যিনি কিনা সদ্য দলে যোগ দিয়েছেন। টিকিট দেওয়া হল পাপিয়া অধিকারীকেও। তবে ভোটের মুখে গেরুয়া শিবিরে গেলেও বনি সেনগুপ্ত কিন্তু টিকিট পাননি। ওদিকে ২০১৯ সালে পার্ণো মিত্রর বিজেপিতে যোগ দেওয়াই সার! সক্রিয়ভাবে তাঁকে কোনওদিন ময়দানে দেখাই যায়নি। এমনকী, বিজেপির হয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও কোনওদিন সেভাবে মুখ খোলেননি তিনি! কিন্তু বরানগরের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র থেকে ভোট লড়ার টিকিট পেয়ে গেলেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে।
আরেকটু পিছনের দিকে যান। জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গেরুয়া শিবিরের নেতাও এবার বিধানসভা ভোটে তারকাদের টিকিট প্রাপকের তালিকায় ব্রাত্য থেকেছেন। দু'বার ভোটে হেরেও সক্রিয়ভাবে দলের কাজ করতেন জয়। পুরস্কার হিসেবে জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যপ্রাপ্তিও হয় তাঁর। কিন্তু কোথায় কী? 'গেরুয়া প্রার্থী তালিকায় এখন তো সব নতুন মুখদের ভীড়।' বলছেন বিজেপি তারকা-নেতা নিজেই।
যশ দাশগুপ্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার কিংবা রুদ্রনীল ঘোষদের 'স্টার ফ্যাক্টর' অনুযায়ী প্রার্থী করার কথা মেনে নেওয়া গেলেও, দু-একজনের নাম কিছুতেই মানতে পারছেন না তারকারা। তাঁদের কথায়, "কোথাও একটা ভুল হয়েছে সম্ভবত। নবাগতদের সুযোগ দিক, ভাল কথা। কিন্তু পুরনোদের কথা তো ভুলে গেলে চলবে না!"
প্রসঙ্গত, ‘সোনার বাংলা’ গড়তে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। বাংলা দখলের লড়াইয়ে সবুজ-গেরুয়া দুই শিবিরের তরফেই স্টার স্ট্র্যাটেজি তুঙ্গে। বলা ভাল, একুশের নির্বাচনী (West Bengal Assembly Election 2021) কৌশলে ‘গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রি’ বেজায় গুরুত্বপূর্ণ। তারকা-খচিত প্রার্থীতালিকাতেই বাজিমাত করতে মরিয়া তৃণমূল-বিজেপি উভয়ে। তৃণমূলের তারকা প্রার্থীরা বেশিরভাগই টিকিট পেয়েছেন, সেই তুলনায় না পাওয়ার আক্ষেপ বেশি পদ্ম শিবিরের অন্দরেই।