"স্বার্থপর হয়ে যাওয়ার ভয়েই ভোটে লড়ছি না!", সোজাসাপটা স্বীকারোক্তি মিঠুন চক্রবর্তীর (Mithun Chakraborty)। মোদী ব্রিগেডে গেরুয়া মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকেই মহাগুরুর প্রদ্ম-প্রার্থী হওয়া নিয়ে শুরু হয়েছিল মহা-জল্পনা। এককথায়, পদ্ম-যোগে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে ঝড় তুলেছেন তিনি। একাধিকবার দল বদলে বর্তমানে রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই বিরাগভাজন হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর রাজনৈতিক আদর্শগত স্থিরতা নিয়েও! সমালোচকরা বলেছিলেন, "বাম থেকে গেরুয়া-যোগ, ভায়া ঘাসফুল হয়ে নানা রঙের মিঠুন রাজনীতিরও 'মহাগুরু'।" আবার সেই প্রেক্ষিতেই একদা একই দলের সতীর্থ তথা ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী চিরঞ্জিৎও (Chiranjeet) বিঁধতে ছাড়েননি মিঠুন চক্রবর্তীকে। বলেছিলেন, “উনি সুবিধে নেওয়া লোক, সুরক্ষা পেতেই বিজেপিতে গিয়েছেন।” বৃহস্পতিবার ভোটপ্রচারের ময়দানে নেমেই যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিলেন মহাগুরু। তাঁর সাফ মন্তব্য, "একুশের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা না করার একটাই কারণ, আমি স্বার্থপর হতে চাই না।"
'তৃণমূলী ঝড়' রুখতে অবশেষে ভোটপ্রচারের ময়দানে অবতরণ করেছেন মিঠুন। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় (Bankura) ‘বাঙালিবাবু’র চপার নামতেই দেখা গেল জনসুনামির ঢল! সেখানেই রোড শো-এর মাঝে ভোটপ্রার্থী না হওয়ার কারণ ব্যক্ত করলেন মহাগুরু। যা নিয়ে কিনা গত কয়েকদিনে রাজ্য-রাজনীতির অন্দরমহলে একেবারে তোলপাড় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বললেন, "বাংলার মানুষের সঙ্গে আমার হিরো আর ফ্যানের সম্পর্ক নয়। বরং আত্মিক সম্পর্ক। হৃদয়ের সম্পর্ক। বাংলার সব দরিদ্র মানুষের জন্য লড়তে এসেছি। সবার সঙ্গে সম্মান দিয়ে হাত মেলাবো। এটা আমার প্রতিশ্রুতি। সবার আশীর্বাদ কামনা করছি। আমি নির্বাচনের প্রার্থী হইনি, কারণ তাহলে আমি স্বার্থপর হয়ে যাব।"
প্রতিপক্ষ শিবির হাজারো কটাক্ষ করলেও, কোনওরকম পাল্টা দোষারোপ না করে সুচারু বাক্য়েই মিঠুন যে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিয়ে দিলেন, তা বলাই বাহুল্য। উল্লেখ্য, মিঠুনের পদ্ম-যোগের পরই অনেকে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, স্বার্থচরিতার্থেই রাজনৈতিক ময়দানে তাঁর এমন পদস্খলন! আবার অনেকে এও বলেছিলেন যে, ছেলের মামলা-মোকদ্দমা থেকে পিঠ বাঁচাতেই গেরুয়া আশ্রয় নিয়েছেন মিঠুন। কেউ বা আবার তৃণমূল থেকে বাণপ্রস্থের পর একুশের ভোটে টিকিট পাওয়ার লোভে তাঁর বিজেপি-যোগের অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু যাবতীয় কটাক্ষের প্রেক্ষিতে মিঠুনের একটা উত্তরই যথেষ্ট- "স্বার্থপর হতে চাই না।" অতঃপর তিনি যে কোনওরকম স্বার্থচরিতার্থ করার জন্য গেরুয়া মন্ত্রে দীক্ষিত হননি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
পাশাপাশি, রাজ্যের শাসকদলের 'বহিরাগত' তকমাকে কটাক্ষ করে মহাগুরুর উত্তর- "আমি যদি বাইরের লোক হই, তা হলে তো মাদার টেরিজা, ভগিনী নিবেদিতাও বাইরের লোক। বাঙালি ওঁদের মাথায় তুলে নাচে! কারণ, ওঁরা বাইরের লোক নন। সেটা প্রমাণিত হয়েছে ওঁদের কাজে। আসলে বাইরের লোক তাঁরা, যাঁরা বাংলায় থেকে বাংলার গরিব মানুষের কথা ভুলে গিয়েছেন। আমি বাইরের লোক না। নীতির লড়াই লড়ছি। সেটাই লড়ব।"
এদিন রোড শোয়ে একেবারে স্বমহিমায় ধরা দিলেন বাঁকুড়াবাসীর কাছে। পরনে সাদা শার্ট। মাথায় টুপি। গলায় গেরুয়া উত্তরীয়। চোখে রোদচশমা। কখনও হাত নেড়ে পদ্ম শিবিরের হয়ে ভোটপ্রার্থনা করতে দেখা গেল তাঁকে। আবার কখনও বা উচ্ছ্বসিত জনতার সঙ্গে করমর্দনরত মিঠুনকে চোখে পড়ল। এই ছবি বঙ্গবাসীর চেনা। অতীতের পুনরাবৃত্তিও বলা যেতে পারে। মাঝে ঠিক পাঁচ বছরের ব্যবধান। ২০১৬ সালে তৃণমূল (TMC) থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাসে যাওয়ার পর একুশে (West Bengal Assembly Election 2021) বাংলার মসনদ দখলের লড়াইয়ে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির শরীক হয়েছেন। ভোটপুজো বোধনের তাই দিন দুয়েক আগেই প্রচারের ময়দানে নেমে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে যাবতীয় সমালোচনার জবাব ছুঁড়ে দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী।