New Update
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/17/nanabhai-bhatt-2025-07-17-16-26-37.jpg)
কে এই পরিচালক?
তাঁর জীবনজুড়ে রয়েছে প্রেম, বিতর্ক ও দুঃখের এক জটিল গল্প। নিজের জীবনের নানা অধ্যায় পরিচালক বহুবার প্রকাশ্যে এনেছেন। তাঁর মা শিরিন মোহাম্মদ আলী...
কে এই পরিচালক?
হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েকটি পরিবার দীর্ঘকাল ধরে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে এবং তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে এসেছে। তাঁদের শিকড় অনেক সময়ই ছড়িয়ে রয়েছে প্রাক-স্বাধীনতা ভারতের নানা অঞ্চলে, যার কিছু আজকের পাকিস্তানে। পৃথ্বীরাজ কাপুর, দেব আনন্দ বা ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমারের মতো অনেক কিংবদন্তি পাকিস্তান থেকে মুম্বাইয়ে এসে গড়েছেন তাঁদের কেরিয়ার। তবে এক ব্যতিক্রম হল গুজরাট থেকে আগত নানাভাই ভাট। একজন স্বল্প বাজেটের পৌরাণিক সিনেমার পরিচালক, যিনি প্রায় ৯৯টি সিনেমা তৈরি করেছিলেন এবং বলিউডে নিজের জায়গা পোক্ত করেছিলেন।
নানাভাই ভাটকে আজ অনেকেই চেনেন পরিচালক মহেশ ভাটের বাবা হিসেবে। তবে তাঁর জীবনজুড়ে রয়েছে প্রেম, বিতর্ক ও দুঃখের এক জটিল গল্প। নিজের জীবনের নানা অধ্যায় মহেশই বহুবার প্রকাশ্যে এনেছেন। মহেশ ভাটের মা শিরিন মোহাম্মদ আলী, ছিলেন একজন শিয়া মুসলিম মহিলা। নানাভাই তাঁকে কখনও তাঁর স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। সংসার চালালেও সমাজে পরিচয় ছিল না তাঁর আরেক পরিবারটির।
এই লুকোছাপার মধ্যে দিয়ে কেটেছে মহেশের শৈশব। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মহেশ জানান, তাঁর বাবা তাঁদের সঙ্গেই থাকতেন না, একাধিক সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের পরিবারে। মহেশ বলেন, "আমার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে বলতাম, হ্যাঁ, আমার বাবার একটা আলাদা পরিবার আছে।" শিরিন, একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হয়েও পরিবারে হিন্দু ঐতিহ্য মেনে চলতেন। তিনি তিলক পড়তেন, শাড়ি পরতেন, কিন্তু সমাজের সংখ্যালঘু পরিচয় যেন তাঁকে সবসময় আড়ালে রাখত। মহেশ জানান, ১৯৯২ সালের দাঙ্গার সময় তাঁর মা চিন্তিত ছিলেন। কারণ আমি এবং আমার দ্বিতীয় স্ত্রী সোনি রাজদান কন্যাদের নাম রেখেছিলাম ‘আলিয়া’ ও ‘শাহিন’।
বাবা-সন্তানের সম্পর্কের খোঁজ
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মহেশ বলেন, তিনি জানেনই না 'বাবা' আসলে কী। তাঁর জীবনে বাবার উপস্থিতি ছিল না, স্মৃতিও নয়। একবার নিজের নামের মানে জানতেও তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু বাবার মুখ থেকে জানতে পেরেছিলেন, "মহেশ মানে মহা ঈশ্বর"। তবে, ছোটবেলা থেকে তিনি গণেশকেই বেশি পছন্দ করতেন। কারণ মহাদেবকে তিনি ভয় পেতেন।
‘জখম’– এক মায়ের জন্য তৈরি সিনেমা
১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মহেশ ভাটের 'জখম' ছিল তাঁর মা শিরিনকে নিবেদিত একটি ছবি। যদিও ছবিটির আসল নাম ছিল ‘শিরিন’, তবে নানাভাই সেই নামের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানান। মহেশ বলেন, "ছবিটি শুধু আমার মা নয়, আমার সৎ মায়ের প্রতিও শ্রদ্ধাঞ্জলি ছিল। ছোটবেলায় তাঁকে ভ্যাম্প বলে মনে হতো, কিন্তু যখন তাঁর কাছে গেলাম, তখন বুঝলাম তিনিও আমার মায়ের মতোই কষ্ট পেয়েছেন।"
নানাভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর বৈধ স্ত্রী, যিনি সৎ মা, নিজের বাসভবনে মরদেহ না এনে শিরিনের বাড়িতে তা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। মহেশ বলেন, "৯৪ বছর বয়সে এক গুজরাটি মহিলা যেভাবে প্রকাশ্যে তাঁর স্বামীর জীবনের আরেক নারীকে মর্যাদা দিলেন, তা আমার হৃদয়ে আজও গেঁথে আছে।" মহেশ ভাট নিজের জীবনে এও বুঝেছিলেন, "জীবনে ভাল-মন্দ মানুষ বলে কিছু হয় না। মানুষ মানুষই থাকে। সবাই কাঁদে, স্বপ্ন দেখে, মরে যায়। সব নির্ভর করে আপনি কাহিনীটা কার চোখ দিয়ে বলছেন।"